ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচন সামনে রেখে সেনাশাসক সিসি

মিসর এখনও গণতন্ত্রের জন্য প্রস্তুত নয়

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৩ মার্চ ২০১৮

মিসর এখনও গণতন্ত্রের জন্য প্রস্তুত নয়

মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি বলেছেন, মিসর এখনও গণতন্ত্রের জন্য প্রস্তুত নয়। আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি এ মন্তব্য করেন। মিসরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত চলবে। ভোটের ফলাফল যাই হোক প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসিই যে দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন এটি সর্বজনবিদিত। এর আগের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসিকে হটিযে সেনাপ্রধান জেনারেল সিসি কীভাবে প্রেসিডেন্টের আসনে বসলেন তা মোটামুটি সকলেরই জানা। খবর গার্ডিয়ানের। সাত বছর আগে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে স্বৈরশাসক হোসনি মোবারককে উৎখাতের জন্য যে গণঅভ্যুত্থান হয় জেনারেল মুরসির কঠোর শাসন সে অভ্যুত্থানের আশা-আকাক্সক্ষাকে নস্যাত করে দেয়। বিরুদ্ধবাদী কণ্ঠ ও জনমত দমনে মুরসি এতটাই বেপরোয়া ও আপোষহীন যে তার কঠোরতার তুলনা হোসনি মোবারকের ত্রিশ বছরের শাসনামলেও দেখা যায়নি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জেনারেল সিসি যে বিপুল ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন এখন তার সে জনপ্রিয়তার ছিটেফোটাও দেখা যায় না। কারণ মিসরের বিভিন্ন ধারার মানুষ সে নির্বাচনে তাকে সমর্থন জুগিয়েছিল। মিসরের কট্টর ইসলামপন্থী প্রেসিডেন্ট ব্রাদারহুড সমর্থিত মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করায় তার প্রতি উদার মনোভাবাপন্ন অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সমৃদ্ধ মানুষ সমর্থন যুগিয়েছিল। তবে সিসি গত পাঁচ বছরে মিসরের নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দৃশ্যমান কোন অগ্রগতিই জনসম্মুখে প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। উপরন্তু এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ যাতে কথা না বলতে পারে সে ব্যবস্থা তিনি সুচারুভাবেই সম্পন্ন করেছেন। বিশ্লেষকদের ধারণা, এই নির্বাচনে জয়লাভের পর সিসি ও তার সমর্থকরা মিসরের নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতির দোহাই দিয়ে সংবিধান থেকে প্রেসিডেন্টের দুই মেয়াদের ক্ষমতায় থাকার বিধান তুলে দিয়ে আরও পাকাপোক্ত ও চিরস্থায়ী ব্যবস্থার দিকে যেতে পারেন। ওয়াশিংটনভিত্তিক মধ্যপ্রাচ্য সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ পল সালেম এ ধারণার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে বলেন, ক্ষমতা পাকাপোক্ত করে নেয়ার এ ধরনের উদ্যোগ নিলে তা স্বল্প সময়ের জন্য সফল হলেও তা ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়াকে এক সময় জটিল করে তুলবে। সিসি নিজে কোন নির্বাচনী প্রচারে অংশ না নিলেও সরকারী সংবাদ মাধ্যমগুলো তার স্বরে গণতন্ত্রের জয়গান গাইছে। জনগণকে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করছে। কায়রো ও অন্য শহরগুলোর মোড়ে জেনারেল সিসির হাস্যোজ্জ্বল ছবি শোভা পাচ্ছে। সিসিকে সমর্থন করে বিলবোর্ড, ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুনে লেখা হয়েছে তিনিই জাতির আশা। সরকারী গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, ভোট দেয়া একটি ধর্মীয় কর্তব্য। এটি যারা করবে না তার জাতির সঙ্গে চরম বিশ্বাস ঘাতকতা করবে। সিসির প্রতিদ্বন্দ্বী মুসার মিছিল থেকে বলা হয়েছে, যারা ভোটকেন্দ্রে যাবে না তারা কাপুরুষ, বেইমান। প্রেসিডেন্ট সিসি গত সোমবার এক বক্তৃতায় সকলের প্রতি ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনাদের যার যে রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকুক না কেন আমি চাই আপনারা ভোটকেন্দ্রে যান ও ভোট দিন। যেভাবে মিসরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হচ্ছে তা এতটাই খাপছাড়া লাগছে যে সরকারের সমর্থক আল শুরুকের সম্পদক ইমাদ হোসেন বলেন, সরকারের উচিত ছিল নির্বাচনী পরিবেশটা আরেকটু স্বতঃস্ফূর্ত ও গণতান্ত্রিক আবহাওয়ার মধ্যে সম্পন্ন করা। জেনারেল সিসির দাবি, তিনি অবকাঠামোখাতে যে বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ করেছেন সেগুলো যদি বাস্তবায়িত হয় তাহলে অর্থনৈতিক খাতে প্রাণ-চাঞ্চল্য সৃষ্টি করতে পারবে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে সর্বস্তরের কৃচ্ছতা সাধন ও ব্যয় সঙ্কোচন নীতি গ্রহণ করতে হবে। জেনারেল সিসির এসব কথায় কাজ হয়নি। দারিদ্রক্লিষ্ট মিসরীয় জনগণের দুর্ভোগ বেড়েছে। মুদ্রাস্ফীতির জন্য জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। তাই তিনি জনগণের মধ্যে তার আগের অবস্থান ধরে রাখতে পারছেন না। বর্তমানে তার গ্রহণযোগ্যতা হোসনি মোবারকের চেয়েও খারাপ অবস্থানে। তিনি নিজ দেশে ইসলামী চরমপন্থী ও জঙ্গীবাদ দমনে কৃতিত্ব দেখানোর জন্য আন্তর্জাতিক পরিম-লে বেশ বাহবা পেয়েছেন।
×