ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কথা বলার পাশাপাশি আন্দোলনও করছেন

ধর্ষণ নিয়ে নীরবতা ভাঙছেন কাজাখ নারীরা

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৩ মার্চ ২০১৮

ধর্ষণ নিয়ে নীরবতা ভাঙছেন কাজাখ নারীরা

মধ্য এশিয়ার প্রজাতন্ত্র কাজাখস্তানের রক্ষণশীল মুসলিম সমাজে ধর্ষণ কিংবা যৌন হয়রানির প্রশ্নে নারীরা কথা বলতেই ভয় পান। কিন্তু সেই সমাজেই শুরু হয়েছে নিরবতা ভাঙার এক আন্দোলন। খবর বিবিসির। গত বছরের যে দিনে সাইনা রাইসোভাকে দুই ব্যক্তি ধর্ষণ করে সেই দিনটির কথা মনে করতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। সাইনা জানান, ধর্ষণকারীদের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে চারতলার ওপর থেকে মাটিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। তার কোমর ও পায়ের গোড়ালি ভেঙ্গে যায়। কিন্তু সেদিন প্রাণে বেঁচে গেলেও তিনি বলছিলেন, প্রথম যে কথাটা আমার মাথায় এসেছিল তা হলো আত্মহত্যা। আমার মনে হয়েছিল এই জীবন রেখে আর কী হবে? সাইনার দেহের ক্ষত মিলিয়ে গেলেও ওই অপরাধের জন্য ন্যায়বিচার না পাওয়ার যে যন্ত্রণা সেটা এখনও তার আছে। কাজাখ সমাজে যৌন নিপীড়নের কথা সর্বসমক্ষে প্রকাশ করাকে এখনও লজ্জার ব্যাপার বলে মনে করা হয়। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তার ধর্ষণের কথা গোপন রাখার জন্য তাকেও অনেক চাপ সইতে হয়েছে বলে সাইনা জানান। তিনি বলেন, আমাকে শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গেই লড়াই করতে হয়নি বরং আমাকে নিজের সঙ্গে, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গেও লড়াই করতে হয়েছে। কেননা তারা স্তম্ভিত হয়ে পড়েছিলেন। তারা বিষয়টার গুরুত্ব বুঝতে পারছিলেন না। পুরো ব্যাপারটা আমার পরিবার লুকিয়ে রাখতে চেয়েছিল। এটা ছিল তাদের জন্য চরম লজ্জার ব্যাপার। ধর্ষকদের বিরুদ্ধে সাইনা যে মামলা করেছিলেন তার কোন অগ্রগতি না হওয়ায় এবং ধর্ষকরা মুক্তি পেয়ে বেরিয়ে যেতে পারে এই আশঙ্কায় সাইনা গত বছর এই ঘটনাটি সবার সামনে ফাঁস করে দেন। এরপর জানুয়ারিতে আদালত একজনকে ১০ বছর কারাদ- দেয়। দ্বিতীয় অভিযুক্ত ব্যক্তি এখনও ফেরার। সাইনা বলছেন, ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে অনেকেই নারীকেই দোষ দেন। তারা বলে তোমার সেখানে যাওয়া উচিত হয়নি। ওই লোকের সঙ্গে কথা বলা উচিত হয়নি ইত্যাদি। সাইনার মতো যৌন নিপীড়নের শিকার অনেক নারী এখন কাজাখস্তানের ‘নীরব থাকব না’ নামের এক আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। ২০১৬ সালে এই সংস্থাটি গড়ে তোলা হয়। সংস্থাটি এ পর্যন্ত ১৯ জন নারীকে আদালতে তাদের বিরুদ্ধে নিপীড়নকারীদের বিরুদ্ধে মামলা চালাতে সাহায্য করেছে। এই আন্দোলনের হ্যাশট্যাগ এখন পর্যন্ত কয়েক লাখবার ব্যবহার করা হয়েছে। নীরব থাকব না আন্দোলনের একজন নেতা হচ্ছেন দিনা স্মাইলোভা। দিনা জানান, তার বয়স যখন ২০ তখন তাকে ধর্ষণ করা হয়। এই কথা তিনি ফেসবুকে প্রকাশ করার পরই নীরব থাকব না আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। তার পোস্ট নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়। বহুলোক তার পোস্ট শেয়ার করেন। অনেকেই ওই ঘটনার প্রতিবাদ করেন। কেউ কেউ সাহায্য করারও প্রস্তাব দেন। দিনা বলছেন, তাদের আন্দোলনের লক্ষ্য হচ্ছে এই প্রশ্নে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গীতে পরিবর্তন ঘটানো। সমাজে লজ্জার ধারণা এ রকম যে সবাই ধর্ষণের শিকার নারীকেই খারাপ বলে মনে করে ধর্ষককে নয়। আমি বলব ধর্ষিতার লজ্জা পাওয়ার কোন কারণ নেই। ধর্ষকের লজ্জা পাওয়া উচিত। সরকারী হিসাব মতে, ২০১৭ সালে কাজাখস্তানে যৌন সহিংসতার ২২৫০টি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। তবে আন্দোলনকারীরা বলছেন, আসলে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে। কারণ ধর্ষণ বা অন্য কোন যৌন নিপীড়নের শিকার নারীরা পুলিশের কাছে যেতে চান না। অন্য ধরনের আইনগত জটিলতাও রয়েছে। কাজাখস্তানের ফৌজদারি আইন অনুযায়ী, যৌন সহিংসতার মামলায় দুই পক্ষ একমত হলে মামলা তুলে নেয়া যায়। এরপর তা অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। তখন ওই আইনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ভিকটিম নারীকে অর্থের প্রলোভন দেখানো হয় কিংবা ভয়ভীতি দেখানো হয় ।
×