ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পরিকল্পনাকারীসহ ৪ জন গ্রেফতার, টাকা লুটতেই হত্যা

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৩ মার্চ ২০১৮

পরিকল্পনাকারীসহ ৪ জন গ্রেফতার, টাকা লুটতেই হত্যা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গুলশানে গারো মা-মেয়ের হত্যার ঘটনায় হত্যার পরিকল্পনাকারীসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃতরা হত্যার দায় স্বীকার করেছে। তারা হত্যাকা-ের বর্ণনাও দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে টাকা চেয়ে না পেয়ে ক্ষিপ্ত হওয়ার সূত্র ধরেই হত্যকা-ের ঘটনাটি ঘটে। হত্যাকা-ের পর বাড়ি থেকে পৌনে তিন লাখ টাকা হত্যাকারীরা লুটে নেয় বলে মামলার বাদীর দাবি। লুটে নেয়া টাকায় আগামী ১ এপ্রিল ‘ইস্টার সানডে’ উদযাপন করার কথা ছিল খুনীদের। এক মাস আগে টাকা নেয়ার পরিকল্পনা করে। টাকা না দিলে হত্যা করার বিষয়টিও ছিল পরিকল্পনার মধ্যে। গত ২০ মার্চ রাতে রাজধানীর গুলশান থানাধীন উত্তর কালাচাঁদপুরের ক-২৫ নম্বর বাড়ির চার তলার ফ্ল্যাট থেকে বেসেথ চিরান (৬৫) ও তার মেয়ে সুজাতা চিরানের (৪২) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সুজাতাকে গলা কেটে আর বেসেথকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। ২১ মার্চ সুজাতার স্বামী আশীষ মানখিন বাদী হয়ে গুলশান থানায় তার নিহত স্ত্রীর বড় বোনের ছেলে সঞ্জীব চিরান ও তার তিন বন্ধুকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার বাদী জনকণ্ঠকে বলেন, তারা বাড়িঘর করার জন্য টাকা জমিয়েছিল। সেই টাকার বিষয়ে পরিবারের মধ্যে আলোচনা হলে সঞ্জীব বিষয়টি জানতে পারে। এরপর থেকে মাঝে মধ্যেই টাকা চেয়ে আসছিল। তার রেশ ধরে ঘটনাটি ঘটে। হত্যার পর বাড়ি থেকে এক জায়গায় রাখা ২ লাখ ৭৭ হাজার টাকা পাওয়া যায়নি। অন্য জায়গায় রাখা সাড়ে ৯ হাজার টাকা পুলিশের কাছে রয়েছে। খোয়া যাওয়া টাকা হত্যাকারীরা নিয়ে যেতে পারে। ঘটনার পর পরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সেখানকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করলে গ্রেফতারকৃত চারজন সম্পর্কে তথ্য পায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানী ঢাকার কাওরানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীটির লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, বুধবার রাতে শেরপুরের নালিতাবাড়ি থেকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী খুন হওয়া সুজাতার বড় বোন নির্জলা চিরানের ছেলেসহ চারজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১ এর একটি দল। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, সঞ্জীব চিরান (২১), পিতা- নিপুন ম্লান, গ্রাম আকন পাড়া, থানা- হালুয়াঘাট, জেলা- ময়মনসিংহ। রাজু সাংমা ওরফে রাসেল (২৪), পিতা- সসেন চামগং, প্রবিণ সাংমা (১৯), পিতা- মানুয়েল মারাক ও শুভ চিসিম ওরফে শান্ত (১৮), পিতা- প্রশান্ত সাংমা, এ তিনজনের বাড়ি শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতি থানাধীন ডেফলাই গ্রামে। র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, হত্যার পর খুনীরা শেরপুরের নালিতাবাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকে তারা পার্শ্ববর্তী কোন দেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। গ্রেফতারের পর তাদের দেয়া তথ্য মোতাবেক বৃহস্পতিবার সকাল নয়টার দিকে টঙ্গীর আব্দুল্লাহপুরের একটি বাস কাউন্টারের পেছন থেকে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। র‌্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, সুজাতার কাছে ৫/৬ লাখ টাকা থাকতে পারে। এমন ধারণা ছিল সঞ্জীবের। সঞ্জীব মাঝে মধ্যেই সুজাতার কাছে টাকা চাইত। কিন্তু সুজাতা দিত না। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সঞ্জীব সুজাতার কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা নেয়া এবং না দিলে হত্যাকা-ের পরিকল্পনা করে। লুণ্ঠিত টাকা দিয়ে ইস্টার সানডে উদযাপন করার পরিকল্পনা ছিল সঞ্জীব ও তার বন্ধুদের। মাসখানেক আগে করা সেই পরিকল্পনা মোতাবেক গত ১৯ মার্চ সঞ্জীব, শান্ত ও প্রবিণ ঢাকায় আসে। তারা কুড়িলে তাদের আরেক বন্ধু রাজুর সঙ্গে দেখা করে। রাজুর বাসায় থাকার জায়গা না থাকায় উত্তরায় আরেক বন্ধুর বাসায় রাত্রীযাপন করে। পরের দিন সকালে সঞ্জীব, শান্ত ও প্রবিণ কুড়িলে রাজুর সঙ্গে দেখা করে পরিকল্পনার কথা জানায়। রাজুর বাসা থেকে একটি ছোরা নিয়ে কালাচাঁদপুরে সুজাতাদের বাসায় যায় তারা। প্রথমে রাজু ও প্রবিণ ওই বাসায় গিয়ে সুজাতা, তার মেয়ে মায়াবী ও তার মা বেসেতকে দেখে ফিরে এসে সঞ্জীবকে জানায়। এরপর তারা ৫/৬ ঘণ্টা বাইরে ঘোরাঘুরি করে। বিকেল তিনটার দিকে সঞ্জীবসহ তার বন্ধুরা সুজাতার বাসায় আবার যায়। সেখানে হালকা নাশতা খাওয়ার পর সঞ্জীব তার খালা সুজাতাকে দুশো টাকা দেয় দেশীয় মদ কেনার জন্য। তখন সুজাতার মেয়ে মায়াবী তার কর্মস্থলে চলে যায়। পরে সবাই মিলে মদ পান করে। সুজাতা মাতাল হয়ে বিছানায় শুয়ে বিশ্রাম করছিলেন। সঞ্জীব ও তার বন্ধুরা তখন বাসা থেকে টাকাপয়সা ও অন্যান্য গহনা চুরির প্রস্তুতি নেয়। এ সময় সুজাতার মা বেসেত (সঞ্জীবের নানি) বাসায় ফিরেন। চুরি বাধাগ্রস্ত হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা বেসেত চিরানকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে। পরে পাশের ঘরে মাতাল হয়ে শুয়ে থাকা সুজাতাকে হত্যার জন্য মুখে বালিশচাপা দেয়। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য সঞ্জীব ছোরা দিয়ে শরীরে ও গলায় আঘাত করে। ঘরে খোঁজাখুঁজির পর টাকা না পেয়ে তারা উত্তরায় যায়। সেখান থেকে নালিতাবাড়িতে চলে যায়। সুজাতার স্বামীর নাম আশীষ মানখিন। মায়ের নাম বেসেত চিরান। সুজাতার তিন মেয়ের মধ্যে মায়াবী ও সুরভীর মায়ের কাছেই থাকত। ঘটনার সময় বাসায় মায়াবীর এক বছরের শিশু ছিল। আর সবার ছোট মেয়ে মাধবী ধানম-ি থাকত। সবারই গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাটে।
×