ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বীর প্রতীক কাঁকন বিবিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাড়ির আঙ্গিনায় দাফন

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৩ মার্চ ২০১৮

বীর প্রতীক কাঁকন বিবিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাড়ির আঙ্গিনায় দাফন

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ও নিজস্ব সংবাদদাতা, সুনামগঞ্জ ॥ মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ সমরে অসীম সাহসী ভূমিকা পালন করা বীরাঙ্গনা নূরজাহান কাঁকন বিবিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়েছে। বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখা এই নারীকে ১৯৯৬ সালে বীরপ্রতীক খেতাব দেয়া হয়। কিন্তু আজও সেই গেজেট প্রকাশ করা হয়নি। নানান জটিলতা সৃষ্টি করে আটকে রাখ হয়েছে ঘোষিত গেজেট। বৃহস্পতিবার বিকেলে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে তার জিরারগাঁও গ্রামের বাড়ির আঙ্গিনায় দাফন করা হয় বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা বীর প্রতীক কাঁকন বিবিকে। এর আগে সিলেটে সকালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা তার মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। দুপুরে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীরাঙ্গনা কাঁকন বিবির মরদেহ এ্যাম্বুলেন্সে করে সিলেট থেকে দোয়ারাবাজারে নিজ বাড়িতে নেয়া হলে শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তার সহযোদ্ধা, স্বজন, শুভানুধ্যায়ীরা চোখের জলে বিদায় দেন তাকে। তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মরদেহে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠন ও সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ। পরে পুলিশের একটি চৌকস দল বিউগলে করুণ সুর তুলে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোঃ সাবিরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মোঃ বরকতুল্লাহ খান, উপজেলা চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী বীর প্রতীক, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা শামীম আহমদ চৌধুরী প্রমুখ। বিকেল চারটায় ভারতের লক্ষ্মীপুর খেলার মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় তাঁকে। জানা যায়, কাঁকন বিবির জন্ম ভারতের মেঘালয়ে খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশে খাসিয়া সম্প্রদায়ের এক নি¤œ মধ্যবৃত্ত পরিবারে। ১৯৭০ সালে দিরাই উপজেলার শহীদ আলীর সঙ্গে কাঁকনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তার পরিবর্তিত নাম হয় নুরজাহান বেগম। তার বাড়ি দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের ঝিরাগাঁও গ্রামে। ১৯৭১ সালে তিনদিন বয়সী মেয়ে সখিনাকে রেখে যুদ্ধে চলে যান কাঁকন বিবি। তিনি কাজ শুরু করেন মুক্তিযোদ্ধাদের গুপ্তচর হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি মুক্তিবাহিনীর হয়ে শুধু গুপ্তচর হিসেবেই কাজ করেননি, সম্মুখ সমরে যুদ্ধও করেছেন বীরত্বের সঙ্গে। প্রায় ২০টিরও বেশি যুদ্ধে সক্রিয় অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রীর শোক ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বীর প্রতীক কাঁকন বিবির মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বৃহস্পতিবার এক শোক বার্তায় শেখ হাসিনা একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে এই অগ্নিকন্যার ভূমিকা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। প্রধানমন্ত্রী মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। বীর প্রতীক কাঁকন বিবির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বৃহস্পতিবার এক শোক বার্তায় মন্ত্রী তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। কাঁকন বিবির মৃত্যুতে আরও শোক প্রকাশ করেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোঃ আখতারুজ্জামান, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের উপাচার্য ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি, মহিবুর রহমান মানিক এমপি, জয়া সেন গুপ্তা এমপি, ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপি, পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ এমপি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি পরিষদ, খেলাঘর মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের বিভিন্ন সংগঠনসহ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ নুরুল হুদা মুকুট, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মতিউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমন, জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ কলিম উদ্দিন মিলন, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম প্রমুখ। এ ছাড়া বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। কাঁকন বিবির মেয়ে সখিনা বিবি বলেন, আমার মা আমাকে জন্মের পরপরই দেশের জন্য অন্যের হাতে সঁপে দিয়েছিলেন। আজও আমিসহ পরিবারের সকলকে এই দেশবাসীর কাছে রেখে গেছেন। এই বাংলাদেশই আমাদের মা। আপনারা আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন। আরও শোক ॥ বাসস জানায়, মুক্তিযোদ্ধা কাঁকন বিবির (বীর প্রতীক) মৃত্যুতে পৃথক শোক প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এক শোক বার্তায় বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা কাঁকন বিবির অবদান যে কোন পুরুষ মুক্তিযোদ্ধার চেয়ে কম নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান এক শোকবাণীতে বলেন, একাত্তরে অনন্য সাহসী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন কাঁকন বিবি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী বাহিনীর বিপক্ষে শুধু গুপ্তচর হিসেবেই কাজ করেননি, সম্মুখ যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছেন কাঁকন বিবি। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক কাঁকন বিবির মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে এবং শোক বার্তায় বলেন, কাঁকন বিবির অবদান জাতি সব সময় শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। জনকণ্ঠের আজীবন সম্মাননা লাভ ॥ তাঁর বীরত্বের কাহিনী জেনে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা কাঁকন বিবিকে গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবার আজীবন সম্মাননা দেয়। জনকণ্ঠ সম্পাদক মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ তাঁর হাতে সম্মাননাপত্রের ক্রেস্ট তুলে দেন। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি ॥ মুক্তিযোদ্ধা বীর প্রতীক কাঁকন বিবির (কাকাত হেনইঞ্চিতা) তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি গভীর শোক প্রকাশ করেছে। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি গভীর শোক এবং পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছে।
×