ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পঞ্চগড়ে সড়কের শতবর্ষী গাছ কাটা হচ্ছে নির্বিচারে

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৩ মার্চ ২০১৮

পঞ্চগড়ে সড়কের শতবর্ষী গাছ কাটা হচ্ছে নির্বিচারে

স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড় ॥ কুড়ি লাখ টাকার গাছ মাত্র আটাত্তর হাজারে বিক্রি। তাও আবার লোক দেখানো দরপত্রে। এসব গাছ কাটা নিয়ে প্রকৃতিপ্রেমীদের আপত্তি থাকলেও কোন কিছুই না মেনে গাছ কাটার হিড়িক পড়েছে। জেলা শহরের ধাক্কামারাস্থ বাস টার্মিনাল থেকে সিএ্যান্ডবি মোড় পর্যন্ত পঞ্চগড়-রুহিয়া সড়কের দুপাশের ২০টিরও অধিক শতবর্ষী গাছ নির্বিচারে কাটা হচ্ছে। যদিও সরকারী হিসাবে ২০টি গাছ দেখানো হলেও স্থানীয়দের অভিযোগ গাছের সংখ্যা ২০-এরও অধিক। সড়ক ও জনপদ বিভাগের রাজশাহী আঞ্চলিক বৃক্ষ পালন শাখা দরপত্রের মাধ্যমে শতবর্ষী এসব গাছ মাত্র ৭৭ হাজার ৯৩৫ টাকা মূল্যে বিক্রি করে দেয়া হয়। সড়কের সৌন্দর্য নষ্ট করে ফলজ-বনজ শতবর্ষী গাছগুলো কাটায় জেলার প্রকৃতিপ্রেমী ও সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক লেখালেখির পাশাপাশি দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি জানানো হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি পরিচয়দানকারী আব্দুল মান্নান নামের স্থানীয় এক কাঠ ব্যবসায়ী সাঙ্গপাঙ্গদের দিয়ে পাহারা বসিয়েছেন। গাছ কাটা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে, এমনকি গণমাধ্যম কর্মীদেরও তার সাঙ্গপাঙ্গদের দিয়ে নানা ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন মর্মে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগে জানা যায়, সড়ক ও জনপদ বিভাগের রাজশাহী আঞ্চলিক বৃক্ষপালন শাখার দেয়া দরপত্রের মাধ্যমে কাজটি পায় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স শাহ ট্রেডার্স। গত ৫ মার্চ রাজশাহী অঞ্চলের অন্যান্য এলাকার সঙ্গে পঞ্চগড়-রুহিয়া সড়কের ২০টি শতবর্ষী গাছ কাটার দরপত্র অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। ওই সড়কে মরা গাছ ছিল মাত্র ২ থেকে ৩টি। বুধবার দুপুরে সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বাস টার্মিনাল থেকে সিএ্যান্ডবি মোড় পর্যন্ত শতবর্ষী গাছগুলোতে কুঠার-করাত চলছে। স্থানীয়রা জানায় গত রবিবার থেকে দরপত্রের মাধ্যমে কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন গাছগুলো কাটা শুরু করে। এরইমধ্যে ১২টির মতো গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। গাছ কাটার সঙ্গে সঙ্গে গাছের গোড়ায় মাটি দিয়ে ভরাট করে দেয়া হচ্ছে। জনশ্রুতি মতে, গাছগুলোর বয়স ১’শ বছরেরও বেশি। প্রত্যেকটি গাছই কাঁঠাল গাছ এবং খুবই মূল্যবান। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি পরিচয়দানকারী আব্দুল মান্নান নামের স্থানীয় এক কাঠ ব্যবসায়ী গাছ কাটার বিরোধিতাকারীদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। এমনকি গণমাধ্যম কর্মীদেরও তার সাঙ্গপাঙ্গদের দিয়ে নানা ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। পঞ্চগড় জেলা সদরের ধাক্কামারা এলাকার মাহমুদ কহিনুর জানান, আমরা ছোট থেকেই গাছগুলো দেখে এসেছি। মরা গাছ কাটার নাম করে এখন সব শতবর্ষী গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। কয়েক লাখ টাকার গাছ মাত্র ৭৮ হাজার টাকায় বিক্রি হওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ধাক্কামারা এলাকার ভ্যানচালক আজিজার রহমান জানান, রোদের সময় আমরা ভ্যান নিয়ে কাঁঠাল গাছগুলোর ছায়ায় বসে বিশ্রাম নেই। কয়েকদিনে অনেক গাছ কেটে সাবাড় করে দিয়েছে। এখন আমাদের বিশ্রামের জায়গাটুকুও নেই। গণসংহতি আন্দোলন পঞ্চগড়ের সভাপতি সাজেদুর রহমান সাজু জানান, দীর্ঘদিন ধরে এ এলাকার মানুষ এই গাছগুলো থেকে অক্সিজেন নিয়েছে। গাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিয়েছে। বিনা কারণে মরা গাছ কাটার নাম করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পানির দামে গাছগুলো বিক্রি করে দিয়েছে। অবিলম্বে এই শতবর্ষী গাছ কাটা বন্ধ করা হোক। এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি। পঞ্চগড় সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম জানান, গাছগুলো সড়ক ও জনপদ বিভাগের হলেও আমাদের বৃক্ষপালন শাখা বিষয়গুলো দেখ-ভাল করে। গাছ কাটার বিষয়টি শুধু আমাদের অবহিত করা হয়েছে, এর বেশি কিছু আমাদের জানা নেই। সড়ক ও জনপদ বিভাগের রাজশাহী অঞ্চলের বৃক্ষপালন শাখার নির্বাহী বৃক্ষপালনবিদ পলাশ সরকারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন ধরনের তথ্য দেবেন না মর্মে অস্বীকার করেন। সড়ক ও জনপদ বিভাগের রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ফকির আব্দুর রউফ বলেন, কোন উন্নয়নমূলক কাজ না চললে ওই সড়কের গাছ কাটার কথা নয়। বিষয়টি আমার জানা নেই। প্রয়োজনে খোঁজখবর নিয়ে পরবর্তীতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে মর্মে তিনি জানান।
×