ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

শার্লট ব্রোন্টি সাহিত্য ভুবনের অলক্ষ্য তারকা

প্রকাশিত: ০৭:২৩, ২৩ মার্চ ২০১৮

শার্লট ব্রোন্টি সাহিত্য ভুবনের অলক্ষ্য তারকা

[কিছু কিছু নারী আছেন নিজ নিজ ভুবনে অমূল্য অবদান রাখার পরও অলক্ষ্যেই থেকে গেছেন, রয়ে গেছেন উপেক্ষিতা। সাহিত্যের ভুবনে এমন এক নারী হলেন শার্লট ব্রোন্টি। ঊনবিংশ শতাব্দীর এই ঔপন্যাসিক তাঁর সাহিত্যকর্মে আবেগ-অনুভূতিকে এমন মনস্তাত্ত্বিক ক্ষুব্ধতায় ব্যক্ত করেছেন যা কেবল অসাধারণই নয়, আজও অতিমাত্রায় আধুনিক বলে মনে হয়।] শার্লট ব্রোন্টি ১৮৩৬ সালে ইংল্যান্ডের সে সময়কার রাজকবি রবার্ট সাউদির কাছে যখন নিজের লেখালেখির একটি নমুনা পাঠিয়েছিলেন তখন তার বয়স মাত্র ২০ বছর। পেশায় স্কুলশিক্ষিকা এবং অস্থিরচিত্ত, স্বপ্নীল ও দীর্ঘদিন ধরে দুঃখ-কষ্টে ভোগা এই তরুণীর তখনও কোন লেখা প্রকাশিত হয়নি। তাঁর বান্ধবী ও জীবনীকার এলিজাবেথ গ্যাসকেল যদিও পরিশেষে লিখেছিলেন যে ব্রোন্টির ‘মানসিক গঠনের মধ্যে আকারে অনুপস্থিতি’ ছিল কিন্তু বাস্তবে এই তরুণ শিক্ষিকার ইতোমধ্যেই নিজের মূল্য ও যোগ্যতা সম্পর্কে দৃঢ় অনুভব, উদমী চেতনা ও উচ্চাভিলাষ এবং নিজের মেধা ও প্রতিভাকে বিশ্ব পরিসরে আত্মপ্রকাশ ঘটতে দেয়ার প্রবল ব্যাকুলতা ছিল। তা সাউদি তার চিঠির জবাবে স্বীকার করেছিলেন যে ব্রোন্টির মধ্যে প্রতিভার ছাপ আছে। কিন্তু তৎসত্ত্বেও তিনি তাঁকে লেখালেখির ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করেছিলেন এবং সাবধান করে দিয়ে বলেছিলেন তিনি যেন তাঁর এই উচ্চাভিলাষ ঝেড়ে ফেলেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘সাহিত্যচর্চা একজন নারীর জীবনের কাজ হতে পারে না এবং হওয়া উচিতও না।’ ব্রোন্টি পাল্টা তাঁর চিঠিতে স্বীকার করেছিলেন যে সাউদি যে পরামর্শ দিয়েছেন তা প্রজ্ঞার পরিচয় বহন করে। কিন্তু তারপর নিজের জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি সেই পরামর্শ অগ্রাহ্য করেছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি তাঁর সাহিত্যকর্মের একটি নমুনা কবি হার্ডলি কোলরিজকে পাঠাতে মনস্থ করেন। তবে তিনি নারী না পুরুষ তার কোন উল্লেখ করেনি। কোলরিজ তাঁর লেখার খুব একটা প্রশংসা করেননি। তবে তাঁর এই পক্ষপাতহীন সংশয়ও ব্রনটিকে তার লেখার কাজ চালিয়ে যাওয়া, সেগুলো প্রকাশ করা ও এক অর্থে শ্রুত করে তোলার সঙ্কল্প থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। এই অদম্য সঙ্কল্প থেকেই শেষ পর্যন্ত ঊনবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বৈপ্লবিক কিছু উপন্যাসের জন্ম হয়েছিল। শার্লট ব্রোন্টির জন্ম ১৮১৬ সালের ২১ এপ্রিল। ছয় ভাই-বোনের একজন ছিলেন তিনি। মা যখন মারা যান ভাই-বোনরা সবাই তখনও ছোট। বাবা প্যাট্রিক ব্রোন্টি ছিলেন খুব ভাল মানের পাদ্রী। বেতন ছিল মোটামুটি। গ্যাসকেল লিখেছেন যে প্যাট্রিক ব্রোন্টি ইংল্যান্ডের হাওয়ার্থে, ইয়র্কশায়ারের বিরান প্রান্তরের এক পাথুরে বাড়িতে সন্তানদের লালন করে তুলেছিলেন। বাড়িটির তিন পাশে ছিল সমাধিক্ষেত্র। শিশু বয়সে এমনকি প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায়ও ব্রোন্টি ছিলেন ছোটখাটো গড়নের ও শীর্ণকায়া। অপরিচিতদের সান্নিধ্যে এতই লাজুক ছিলেন যে এক অতিথির মনে আছে তিনি চেয়ারের মধ্যে গুটিসুটি মেরে থাকতেন যাতে সরাসরি চোখে চোখ না রেখে কথা বলা যায়। অথচ নিজের ভাই-বোনকে নিয়ে তাঁর তৈরি করা বিশাল কল্পনার জগতে, নাটকে ও গল্পে তিনি নিজেকে দুঃসাহসী, বেপরোয়া, ঐন্দ্রজালিক বা সৈনিক অথবা রাজনীতিক হিসেবে কল্পনা করতেন। তাঁর নিজের হিরো ছিলেন ওয়েনিংটনের ডিউক। তাঁর কল্পনায় এবং যেভাবে তিনি তার কল্পনার ফসলকে মূল্যায়ন করতেন সেখানে তিনি ছিলেন নির্ভীক এবং এতটাই নির্ভীক যে তিনি শেষ পর্যন্ত এক খ- কাব্যগন্থ রচনা করে ফেলেছিলেন। তাঁর যুগের একজন নারীর জন্য এ ছিল এক অস্বাভাবিক ধরনের উচ্চাভিলাষী কাজ। কাব্যগুলো পরিবারের জন্য খ্যাতি বয়ে আনতে না পারলেও ব্রোন্টি তাঁর সাধনায় অটল থেকে প্রকাশকদের কাছে তাঁর ও বোনদের লেখা উপন্যাসগুলো পাঠাতে থাকেন এবং সেগুলো পাঠানো হয় লিঙ্গের দিক থেকে দ্ব্যর্থবোধক নামে। এগুলোর মধ্যে ছিল এমিলির ‘ওয়াথারিং হাইটস,’ এ্যানের ‘এ্যাগনেস গ্রে’ এবং তাঁর নিজের লেখা ‘জেন আইয়র’। এ ছিল এক দুঃসাহসী কৌশল যা সূক্ষ্ম পরিকল্পনা হিসেবে কাজে লাগানো হয়েছিল। এ ছিল ভবিষ্যতের কোন উপন্যাসের কাহিনীর বিষয়। ‘জেন আইয়র’ রাতারাতি হিট হয় এবং অন্য দুই উপন্যাসের প্রতি আগ্রহ সঞ্চারে ইন্ধন যোগায়। ছদ্মনামেও আড়ালে অজ্ঞাত পরিচয় থাকার এই চেষ্টা পাঠকদের কৌতূহলই কেবল বাড়িয়ে তুলেছিল। তাই তারা লেখকদের প্রকৃত পরিচয় জানার জন্য হৈচৈ জুড়িয়ে দেয়। ব্রোন্টি যখন ‘জেন আইয়র’ লিখেছেন ততদিনে তাঁর দুই বড় বোন মারা গেছেন। জেন আইয়রের প্রিয় হেলেন বার্নস যেভাবে দুঃখ-কষ্ট যন্ত্রণা ভোগ করেছিলেন তারাও অনেকটা সে রকমই দুঃখ-কষ্ট যন্ত্রণা ভোগ করেন। বোর্ডিং স্কুলে ভগ্ন স্বাস্থ্য ও যতেœর অভাবে তাদের কষ্টের সীমা ছিল না। ওই বোর্ডিং স্কুলেই ব্রোন্টি তাঁর ওই বোনদের পাশে ছিলেন। ‘জেন আইয়র’ প্রকাশিত হওয়ার এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তাঁর ভাই ব্রানওয়েল যক্ষ্মায় মারা যান। সম্ভবত এ্যালকোহলের নেশায় রোগটা আরও জটিল আকার ধারণ করেছিল। এর অল্পদিন পরই ব্রোনটিকে তার দুই ছোট বোন এ্যামিলি ও এ্যানকে সেবাযতেœর বোঝা কাঁধে নিহত হয়। এরা দু’জনও যক্ষ্মায় মারা গিয়েছিল এবং তাদের সেই মৃত্যুযন্ত্রণা প্রত্যক্ষ করেছিলেন ব্রোনটি। ভাই-বোনদের হারানোর পর ব্রোন্টি ‘ভিলেট’ নামে একটি উপন্যাস রচনা করেন। সেখানে তিনি বলেন যে এ ধরনের দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা অসম সাহসের জন্ম দিতে পারে। উপন্যাসের নায়িকা লুসি স্নোকে ধরে নেয়া হয় ব্রোনটির সবচেয়ে আত্মজৈবনিক চরিত্ররূপ। সেখানে স্নো বলেছেন, ‘আমারও কষ্টভোগ করা হতে পারে। মৃত্যুও হয়ত এতটা নিশ্চিত নয় যতটা নিশ্চিত আমার এই কষ্টভোগ। আমি আগে থেকেই এমনটা ধরে নিয়েছি, মৃত্যুর ভাবনাকে নীরব দৃষ্টিতে দেখেছি। তারপর যে কোন পরিণতির জন্য প্রস্তুত হয়ে আমি একটা প্রকল্প তৈরি করেছি।’ শোক ও দুঃখে ভরা জীবন নিয়ে যিনি বেঁচে ছিলেন সেই ব্রোনটি সম্ভব তাঁর এই জীবনবোধ থেকে উৎসাহিত হয়েই গুটিকয়েক উপন্যাস রচনা করেছিলেন যা কোন নারীই আগে করেননি। সেই উপন্যাসগুলো হচ্ছে প্রতিরোধের কাহিনী, কারোর নিজের প্রকৃত নৈতিকতাবোধের ওপর আস্থায় অবিচল থাকার কাহিনীÑ তা, সেগুলো যতই প্রথাবিরুদ্ধ হোক না কেন। ‘জেন আইয়র’-এ তিনি একটা শিশুর উত্তম পুরুষের প্রেক্ষাপট থেকে লিখেছেন। এ এক উদ্ভাবনীমূলক ধারণা যা একটা শিশুকে পর্যন্ত কণ্ঠ ও শক্তি যুগিয়েছে। তিনি এতে কাহিনীর এমন এক নায়িকাও তৈরি করেছিলেন যিনি ব্রোন্টির নিজেরই মতো ছিলেন সাদাসিধে, মলিন চেহারার, ছোটখাটো গড়নের তথাপি অকপটভাবে অভিলাষী এবং অভিলাষী হওয়ার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন। ব্রোন্টি একদা তাঁর এক বন্ধুর কাছে লিখেছিলেন যে অবলম্বনহীন ও শ্রীহীন মহিলাদের দাম্পত্য বিষয়ক উচ্চাকাক্সক্ষীকে তিনি ‘জড়বুদ্ধির পরিচায়ক বলে মনে করেন এবং সেটাকে ঘৃণার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেন।’ এটা ছিল খোলাখুলি শ্রেণীগত অবিচার ও পুরুষ-প্রাধান্যের একটা ব্যবহারিক জবাব। অবশ্য তাঁর নিজের উপন্যাসগুলোতে তিনি এই একই সাদাসিধে নারীদের স্রেফ যে কোন ধরনের বিয়ের অধিকার দেননি বরং আবেগমথিত প্রেমের, ভালবাসার পাত্রকে বিয়ের অধিকার দিয়েছেন। জেন আইয়র ও লুসি স্নোর একান্ত ভেতরের জীবনকে এমন অনুপুঙ্খরূপ উপস্থাপিত করা হয়েছে যে চরিত্রগুলোর ওপর অন্যায়ভাবে চেপে বসা গুরুভার বোঝা স্পষ্টতই প্রতিফলিত হয়। একজন অবিবাহিতা নারীর জীবনের ছোট ছোট মুহূর্ত ও মানঅপমানগুলোকে নিয়ে ব্রোন্টি দারুণ সুদূরপ্রসারী প্লট তৈরি করে ফেলতে পারতেন। কয়েক পৃষ্ঠাজুড়ে লেখা একটা দীর্ঘ প্রতীক্ষিত চিঠি পড়ার জন্য এক নিভৃত স্থান খুঁজে বের করতে লুসি স্নোর যে ব্যাকুল চেষ্টা তার সঙ্গে স্পেন্সারের অন্বেষণের সাসপেন্স ও নাটকীয়তার মিল খুঁজে পাওয়া যায়। হৃদয়ের সূক্ষ্ম চরিত্রচিত্রণে পারদর্শী ব্রোন্টি তাঁর লেখনীতে আবেগের আলোছায়াগুলোকে এমন মনস্তাত্ত্বিক সূক্ষ্মতায় ধারণ করতেন যে তা এখনও অসাধারণ আধুনিক বলে মনে হয়। বিষণœতার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া লুসি স্নোকে যখন তাঁর নিজের সুখ কর্ষণ করার পরামর্শ দেয়া হলো তখন তিনি বলিষ্ঠ কণ্ঠে যে পাল্টা জবাব দিয়েছিলেন তার সঙ্গে একবিংশ শতাব্দীর এই অবস্থার শিকার অনেক ব্যক্তির প্রত্যুত্তরের মিল খুঁজে পাওয়া যাবে। লুসি স্নো লিখেছেন : ‘এই জগত সংসারের আর কোন উপহাস আমার কাছে এত শূন্যগর্ভ মনে হয়নি যেমনটা লেগেছে এই কথা শুনতে যে সুখের কর্ষণ কর সুখ জিনিসটা আলু নয় যা রোপণ করতে এবং সার দিয়ে জমি চাষ করতে হবে।’ তাঁর সুতীব্র রসবোধ ছিল। এই রসবোধই তাঁকে একের পর এক এতগুলো বিয়োগাথায় ভেঙ্গেচুড়ে শেষ হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করেছিল। ১৮৫১ সালে এক বন্ধুকে তিনি লিখেছিলেন : ‘আমি, কিভাবে বেঁচে আছি সে কথা তোমাকে বলতে যাওয়া নিরর্থক। জীবনকে আমি বরণ করে নিয়েছি। তবে সেটা উপভোগ করছি কি না সেটা আরেক প্রশ্ন।’ বন্ধুদের চিঠি লিখে তিনি তাদের চমকে দিয়ে জানিয়েছিলেন তিনি সর্বনেশে নিদ্রাহীনতার শিকার, খাওয়ার রুচি নেই, শোক-দুঃখ ও পুরনো স্মৃতির তাড়নায় তিনি ভারাক্রান্ত। পরে তিনি চিঠি লেখাও বন্ধ করে দেন এই ভয়ে যে চিঠির উত্তর আসতে খুব বেশি দেরি হলে তার মন খুব খারাপ লাগবে। তাঁর অতি সুতীব্র রোমান্টিক আবেগমথিত ভালবাসার দুটি ঘটনার কথা জানা যায় যে ভালবাসার কোন প্রতিদান তিনি পাননি। একটি ছিল বেলজিয়ামের এক বিবাহিত স্কুল মাস্টারকে নিয়ে যার নিখুঁত স্মৃতিচারণ করা হয়েছে। ‘ভিলেট’ উপন্যাস। অন্য ঘটনাটি ছিল তার প্রকাশক জর্জ স্মিথকে নিয়ে। ‘ভিলেট’-এ এক ডাক্তারের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে তাঁকে ধারণ করে রাখা হয়েছে। তবে শার্লট ব্রোন্টি শেষ পর্যন্ত বিয়ে করেছিলেন এবং সেটা ৩৮ বছর বয়সে। জীবন সঙ্গী হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছিলেন আর্থার বেল নিকোলাস নামে এক যাজককে, যিনি তার বাবার পক্ষে কাজ করতেন। ব্রোন্টি খোলাখুলি স্বীকার করেছেন যে তাঁর স্বামী বুদ্ধিবৃত্তিগতভাবে তার সমান ছিলেন না। তবে নিকোলাস অবিচলভাবে তার পেছনে লেগে ছিলেন এবং রোমাঞ্চে আলোড়িত হয়ে শেষ জীবনের পূর্বরাগের প্রেরণায় তাঁর বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁকে বিয়ে করেছিলেন। ব্রোন্টি কি শেষ অবধি সেই ধরনের সুখ খুঁজে পেয়েছিলেন যেমনটি তিনি ‘স্বর্গ থেকে অনেক নিচে নেমে আসা উজ্জ্বল প্রভা’ হিসেবে বর্ণনা করেছের? ‘ভিলেট’ উপন্যাসে লুসি স্নো সুখ সম্পর্কে তাঁর নিজের অনুভূতির বর্ণনা দিয়েছেন এইভাবে : ‘আমার জানা মতে কঠিন দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণাকে অস্বীকার করাই হলো সুখের সবচেয়ে কাছাকাছি উপনীত হওয়া। তাছাড়া আমার মনে হয় আমি দুটো জীবনকে ধারণ করে আছিÑ একটা হলো ভাবনার জীবন এবং আরেকটি হলো বাস্তবতার জীবন। প্রথম জীবনটি যদি পর্যাপ্তমাত্রায় অদ্ভুত ও ঐন্দ্রজালিক আনন্দ ও কল্পনায় পরিপুষ্ট থাকে তাহলে পরবর্তী জীবনের সুযোগ-সুবিধাগুলো দৈনন্দিনের আহার, কয়েক ঘণ্টার শ্রম ও ছাদের নিচে আশ্রয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। ব্রোন্টি বিয়ে করার পর অবশ্য তাঁর ভাবনার জীবনকে ভুগতে হয়েছিল। এক বন্ধুকে তিনি লিখেছিলেন ‘আমার জীবনটা যেভাবে কর্মব্যস্ততার দখলে ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি ব্যস্ততার দখলে চলে গেছে। চিন্তা করে দেখার মতো খুব বেশি সময় আমি পাই না।’ সাহিত্যচর্চা আর তাঁর জীবনের কর্মকা- হিসেবে থাকেনি। এই হারিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা দাম্পত্য জীবনের সুখ ও আনন্দের কারণে ঘটেছিল কি না তা স্পষ্ট নয়। এক বন্ধুর কাছে ব্রোন্টি লিখেছিলেন : ‘একজন নারীর স্ত্রী হওয়ার বিষয়টি এক পবিত্র, বিচিত্র ও বিঘœসঙ্কুুল ব্যাপার।’ কিন্তু বেশ কয়েক মাস পর তিনি লেখেন; ‘আমি একজন ভাল, সহৃদয়তাপূর্ণ স্বামী পেয়েছি এবং প্রতিদিন তার প্রতি আমার অনুরাগ প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে উঠছে।’ বিয়ের মাত্র ৯ মাস পর ১৮৫৫ সালের ৩১ মার্চ ব্রোন্টি মারা যান। তিনি গর্ভবতী ছিলেন। প্রাতঃকালীন অসুস্থতা থেকে তিনি নিজেকে শেষ রক্ষা করতে পারেননি। সেই অসুস্থতা এত তীব্র আকার ধারণ করেছিল যে এর সঙ্গে অপুষ্টি ও পানিশূন্যতার জটিলতা মুক্ত হয়ে তাঁর মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাঁর জীবনের দুঃখ-কষ্ট-ঝড়-ঝঞ্ঝার কথা বিচার করে ‘দি লিডস মার্কারি স্যাটারটে’ পত্রিকার শোক সংবাদে বলা হয় ‘তাঁর অকাল মৃত্যু হয়ত পূর্ব নির্ধারিত ছিল’ কিন্তু তাঁর মতো প্রতিভার কাছ থেকে আমরা যে আর কিছুই পাব নাÑ সমাজের এই শোকের গভীরতা কোন অংশে কম হবে না।’ মূল : সুসান ডোমিনাস দি নিউইয়র্ক টাইমস
×