ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অনু ইসলাম

তরুণ লেখকদের সাহিত্য ভাবনা ॥ চর্যাপদ’র ভূমি ॥ গভীর আত্মোপলব্ধির নাম কবিতা

প্রকাশিত: ০৭:৩৬, ২৩ মার্চ ২০১৮

তরুণ লেখকদের সাহিত্য ভাবনা ॥ চর্যাপদ’র ভূমি ॥ গভীর আত্মোপলব্ধির নাম কবিতা

কবিতা, ঐতিহ্যগতভাবে আমার কাছে ব্যক্তি অনুভবের নিজস্ব প্রজ¦লন। ব্যক্তির সৃজনী অনুভব ঠুনকো নয়, গভীর আত্ম-উপলব্ধির নির্ণায়ক। আত্ম-উপলব্ধি সৃজনশীল ব্যক্তির মনন এবং তার সমগ্র চিন্তাজুড়ে অদৃশ্য এক পৃথিবী নির্মাণ করে। সেই পৃথিবী, কবিতাপৃথিবী। ব্যক্তি হয়ে ওঠেন বিশেষ এক বিশেষণ। সেই বিশেষণের নাম ‘কবি’। এই কবি একজন শব্দ-শ্রমিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে ওঠেন। কবির অনুভব কখনও আবেগমিশ্রিত কখনও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সমন্বিত সংযোগে শব্দবন্ধন দ্বারা ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে বাক্যরূপে। ঠিক এইভাবেই শব্দের সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে কবিতার কাঠামো নির্মাণ করে চলেন একজন কবি তার কবিতাপৃথিবীতে। কবিতাপৃথিবী নির্মাণের জন্যে কবি দ্বারস্থ হোন দৃশ্যকল্প, চিত্রকল্প, উপমা কিংবা উৎপ্রেক্ষা সর্বোপরি জীবনবোধ ও ভালবাসার কাছে। ব্যক্তিগত অভিমত, এই ভাবেই নিজস্ব কবিতাপৃথিবী নির্মাণের প্রয়াস চলে সর্বক্ষণ। অন্যভাবে বলা যায়, কবিতা; জীবনের এক একটি রহস্যের ধারণকৃত প্রতিচ্ছবি। যেখানে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, বহির্বিশ্ব, প্রেম, প্রকৃতি এবং সমকালীন ভাবনা এমনকি ব্যক্তিগত নৈঃশব্দ্য প্রতিটি বিষয় আলাদাভাবে কবিতাপৃথিবী নামক ক্যানভাসে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। জীবন অভিজ্ঞাতার ওপর যে দায়; মূলত সে দায়-মুক্তির সংলাপই হচ্ছে কবিতা যাকে যাপিত জীবনের অভিজ্ঞতা অর্জনের প্রতিচ্ছবি রূপে আখ্যায়িত করা যায়। যেখানে একটা সুন্দর স্বচ্ছ আয়না থাকে; সেই আয়নায় ক্ষণে-ক্ষণেই যাপিতজীবন এসে ধরা দেয়। কবিতা এমনই এক দর্পণ বিশেষ। কবি, একজন সংগ্রাহক বটে। যিনি কথনের সৌন্দর্য, ভাষার গতিময়তা, শব্দের শাব্দিক ঐশ্বর্য, রং বা গন্ধের অপূর্ব সংযোজন, ঐতিহ্য বা সমকালীন ভাবনাগুলোকে পরিশুদ্ধভাবে কবিতার নানান উপাদান হিসেবে পরিচর্যার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। যেখানে কবিতার শরীর জুড়ে নিজস্ব অনুভূতিগুলো মূর্ত হয়ে ওঠে বিমূর্ত অনুভূতিকে উপলব্ধি করে নতুন কিছু আবিষ্কারের নেশায়। যদিও কবির চিন্তায়, উপস্থাপনায় মৌলিকতা নির্মাণের চেষ্টা থাকে; থাকে প্রতিনিয়ত ভাঙা-গড়ার কৌশল। কবিতার জন্য এই পথ দুরূহের। এই দুরূহ পথেই কবিকে হাঁটতে হয়। ঠিক এভাবেই নতুন এক কবিতাপৃথিবী নির্মাণের স্বপ্ন ভাবিত হয়ে ওঠে মনন ও মেধায়। যেখানে নান্দনিক সৌন্দর্যবোধ প্রত্যাশা করা অমূলক নয়। নান্দনিক সৌন্দর্যবোধ কবিতা পৃথিবীরই অংশ। যে পৃথিবী আমার আশ্রয়স্থল। অবশেষে, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর মতো বলতে চাই, ‘সেই আমার জীবনের সমস্ত গভীর সত্যের একমাত্র আশ্রয়স্থল।’ অর্থাৎ একজন কবির কাছে কবিতাই নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল। ঠিক যেন আমার কাছেও। তাই, একটা কবিতা পৃথিবী নির্মাণের প্রচেষ্টা চলছে প্রতিনিয়ত। প্রেক্ষাগৃহ প্রেক্ষাগৃহে ঢুকে পড়েছি- অন্ধকারের অধিক আলো লাগছে; চোখজুড়ে- তত্ত্বের অনুসন্ধান করি; চলো- পৃথিবী জন্মের মতো আমার একটা জন্ম কী এক রূপালি পর্দায় দৃশ্যমান হচ্ছে একটা চরিত্রের পাশেই বহুমুখী চরিত্র! শতাব্দী থেকে শতাব্দী পেরিয়ে- আজো আদিপুস্তক হাতে নিয়ে- পাঠমগ্ন হচ্ছি; ক্রমশ একে অপর বোধ ও বোধির আলো-উৎস সন্ধানে কিছুটা জ্ঞান-সম্ভার নির্মিত হোক- মেধা আর মননসংযোগে; প্রত্যাশিত। রূপালি পর্দার বিচিত্র দৃশ্যের কোণেÑ আমিও নগণ্য এক কীট-চরিত্রের ভূমিকায়Ñ জেগে আছি; স্বল্পআয়ু দৃশ্য নিয়ে! উৎসসূত্র উৎসসূত্র; খুঁজে ফিরছি এই ভিড়ে- প্রতিদিনকার ধূলিগ্রস্থমাখা একঘেঁয়ে যাপন সংকটাপন্নর দিকে ছুড়ে দিচ্ছে আমাদের তবু ওপারের দিকে শুভদৃষ্টি- সংকট মানেই কিছুক্ষণ ট্র্যাফিক জ্যাম ক্ষতসমগ্র নিয়ে দ্বিধার সম্মিলন- আর কিছু খুচরো ঝন-ঝনে শব্দ হঠাৎ- সবুজ বাতির সংকেত একটা সার্কাস অধ্যায় পার হচ্ছে জীবনের- আর বাস্তবিকঘ্রাণ লিখে যাচ্ছে নিজস্ব দিনলিপি সময়; কালপর্ব বিভাজনে ব্যস্ত- তুমি আর আমি খণ্ডিত চারিত্র্য! একদিন আমরা- স্বপ্নে আঁকার মতো ট্রেনে বাস্তবিক ছুটবো... প্রহসন জীবন- এক নিরেট গদ্য প্রবাহ যেনো শীত-রাতে নতজানু হয়ে মৃত্যুমুখে- অস্পর্শ্য আরেক নতুন জীবনের প্রতিক্ষায় হাঁটে শূন্যদেশ; রোদ-বৃষ্টি সহসা কিংবা- তারকারাজি আর চাঁদের মূর্ছনায় বিস্ময় গড়ে তুলছে- যাপিত বোধ সময় এক দুষ্প্রবেশ্য- কখনো কখনো রাজনীতিতে মেতে উঠে প্রবল; আমরাও ভেসে চলছি পরম স্তোতে বিক্ষিপ্ত; ছুটে পড়ে কিছু আয়ু- রাজনৈতিক ভাষ্যের মতো জোছনার আড়ালে রক্তছোপ দেখে কেটে যাচ্ছে ক্ষণ নৈঃশব্দ্যের হাতে হাত রেখে- একটি বাক্য উচ্চারিত হতে থাকে ‘বেঁচে আছি এইতো’। আহা- এই প্রাসঙ্গিক প্রহসন! ড্রেসকোড হিম নামছে; এই ঊষসীসময় একবর্ণে এঁকে নিচ্ছে- কোমল বেদনামুখর হেমন্তের মুখচ্ছবি। উর্ধপক্ষ; নিবিড় এক পর্যবেক্ষক- আমাদের যাপিতসময় ঘনীভূত হচ্ছে কুয়াশার মতো ধবল বর্ণে- ঋণচিহ্নের রেখা দীর্ঘ হতে আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে শিশিরের মতো কখন ঝরে যাবে দুঃখসমগ্র। ঋণপত্রের বোঝা; না বোঝার দায়ে ছিন্ন হয়ে- যায়; একপ্রস্থ জীবন! আর এক পলকে হারিয়ে যাচ্ছে কৌতূহলী- দুপুর; তোমার পরিহিত কালো ড্রেসকোড। জীবনÑ নিঃশব্দ এক মায়া! মৃত্যু তার একমাত্র ড্রেসকোড এককাট্টা হওয়ার পরও- এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে যাচ্ছে প্রতিটি প্রাণ! তামসিক সময় তামসিক সময়; তবু এগিয়ে চলার প্রত্যয়- জীবন অনুচ্ছেদের গল্পগুলো আড়াল হয়ে যাচ্ছে পরিচর্যাবিহীন- অনুবিধিগুলো গভীর; পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে- শুধুই আত্মদর্শন। চলো; অনুযাত্রিক- খুঁজে আনি ইচ্ছাসুখ; এই অন্তর্গূঢ় চিত্ত হতে তুর্যধ্বনি বেজে ওঠছে; সপ্তসুরে মেলবন্ধন- ঘটুক; হৃদয়ের প্রতিটি অনুতন্ত্রে- হোকÑ প্রীতিসম্পাদন অদৃশ্য মায়ার টানে আপ্তকথাগুলো গুনগুন করে উঠছে- উত্যপ্ত-এ চত্বর ঘিরে; যেনো বায়ুস্তোত বইছে তবু চির-শ্যামল রঙে থেকে যাবো- তোমার হৃদয় উঠোনে; এই তামসিক ক্ষণ; জানি কেটে যাবে। শীত-পদ্য ধবল-কুয়াশা ভেঙে হাঁটছি- চারিদিকে এতো ঘন-শ্যামলরঙ; অন্ধকারে- নিমজ্জিত; অথচ ফুটে উঠছে না- আলোকরশ্মি! পথে-পথে ছিন্নমূল পথ-মানুষেরা সোহাগীযন্ত্রণা সয়ে যাচ্ছে; তীব্র-হিমের প্রাতঃরাশে; মুখে-মুখে উঠে আসছে- বাজার-দর শীতসংখ্যার নতুন-সবজি; অম্ল-স্বাদ খাবারের টেবিলে গরম ধোঁয়া! যাপিত সময়ক্ষণের হাত ধরে; নিরন্তর হেঁটে- যাচ্ছি; একা মানুষ- সংগোপনে; কিছুটা তৃষ্ণা নিয়ে- অনন্ত এক দৌড় যাত্রাপথ; কিছুটা দীর্ঘ হোক- এই কুয়াশাজারিত অরণ্যঘেরা ধবল সময় সাবলীল; প্রকৃতবিদ্রোহে ঘুম ভাঙুক- নির্মোহ প্রাত্যহিক সকালের প্রত্যাশা নিয়ে আমরা ছুটে চলেছি; অনন্ত এক দৌড়ে- স্ব-কাল তার নাম লিখে যায়- অদৃশ্য শিলালিপির পৃষ্টাঙ্কজুড়ে সেখানে অষ্টপ্রহর থাকে জীবনের সময় জুড়ে তীব্র-হিমÑ-যাপিত সময় বরফখণ্ডের মতো জমাটবদ্ধ হয়ে আছে; হৃদয় এক আইসক্রীম স্পর্শ পেলেই গলতে থাকবে- শুধু ইশারা মাত্র; নৈঃশব্দ্য ভাঙার-
×