স্নাতকোত্তর চাষ
আইউব সৈয়দ
স্নাতকোত্তর জমিগুলো প্রণামে-সুনামে বসন্তকে ডাকে।
মাঝে মাঝে স্মৃতিগতভাবে
দু’বাহু গলিয়ে বংশগরিমায় আদি পুস্তককে
‘ঘাঘরা’ পরায়।
বন্ধু-সহচর ভেবে রোদের ভিতর রোদে, হরফের জমিতে
নিজেকে নিজেই জাগিয়ে তোলে রে...
** তোমরা কি কিছু দেখে ফেলেছিলে?
শারমিন আক্তার
এভাবে কোন নিমগ্ন আততায়ীর পিছে
অনুসারী হরফেরা হেঁটে চলেছিল।
অনেকটা স্বভোজী সরণির পথে
প্রত্যয়ী পা ফেলার মতন,
যেভাবে আমরা বরণ করি উত্তল পিঠের আগামী।
নগরায়নের করাতকলে ঢুঁ মেরে যাই দিনের পর দিন-
পারবে তো?
পারবে তো আমাদের বুনো রোদগুলোকে
কেটেছেঁটে মানুষ করে দিতে?
সবুজ ঝোপঝাড় উগড়ে রুয়ে দিতে পারবে ভাত-পানি?
অনাহূত ‘চাই’ এর দায় আজও সারেনি!
তুল তুলে ঘাসপথে রাজপথের তকমা চাই,
সিঁদুর, তজবিহ আর ক্রুশ এর রাজনীতি চাই,
মনে পড়ে এক রাতে হতে চেয়েছি
‘ছায়াবী ফ্রাংকেনস্টাইন’,
যাতে খোয়াবনামায় শত শত লাশের তাবির গুনতে পাই-
ঘুমচোখে করতে পারি এমন কিছু,
খোলা চোখে যা কিনা অপরাধ ঠেকে-
যেমন খুব গোপনে, এমনকি নিজেকে না জানিয়ে ও-
মৃতের মিছিলে প্রশ্ন ছুড়ে দিতে পারি,
সভ্যতার নাভিমূলের পোশাকি ব্যভিচারের মতন
তোমরা কি কিছু দেখে ফেলেছিলে?
** অচল রুবাই
মুহম্মদ আশরাফুল ইসলাম
৫১
পাতার বৈঠকে কে তুমি নিয়ে এলে মীড়ের আগুন?
কে তুমি বিস্ময় চিহ্নের মতো অহেতুক গুনগুন?
আমি তো নতজানু নই, নই নুয়ে পড়া কোনো বোধ,
অজস্র কার্পাস তবুও জেনে গেছে জ্যামিতিক খুন;
৫২
ভাস্কর্য হয়ো, জীর্ণ আঙুর নিয়ে যেও ঘন নীলে;
সুগন্ধি পাখা না মেলুক, মদিরা ও ধূলির ইজেলে
মিশিয়ে দিও ক্ষণিকের বরফ কুচি। বিমর্ষ ঝাড়ে,
লেপ্টে থাক ঝরা পারিজাত, ম্লান হোক তিলেতিলে।
৫৩
দেয়াল জুড়ে এপ্রিলের শোকসভা! বিচূর্ণ স্তনে,
সতেজ ডুমুর সাজাতে ভুলে গেছে কেউ? নির্জনে,
বনমোরগের মাংসের মতো গাঢ় লাল হয়ে আছে
নিজেদের পাহারা। কাঁকড়া হাঁটছে যেন, পেছনে;
৫৪
চাবির খোঁজ ভুলেই গেছি, তবুও করাতকলে,
হরতকির লাশ নিয়ে যাব। গোপনে, যে জলে
আঙুল ডুবিয়েছিলাম, অসাড় ঠোঁটে যে চুমু
খেয়েছিলাম, তা-ও ভুলে গেছি পথের ছলে।
৫৫
শালিকের অনুষ্টুপ নিয়ে কেউ এলো না ফিরে,
কেউ এলো না সম্মুখ দূরবীন আর ঘৃণার ভিড়ে।
নিশ্চয় কেউ ফাঁদ পেতে আছে বিবাদের পাশে!
পুনর্নির্মিত বারান্দায় কে ডাকবে, অতিথিরে?
*
(কপোতভিটা, বরমী, শ্রীপুর, গাজীপুর / ০১৭৪১৮৩৭৯৩৭)
** সাহেব-বিবি-গোলাম
মঈন মুনতাসীর
ঘুম নেই চোখে, এখনও দরজা খুলে রাখি
পাখি ডানা জাপটায় বুকের ভেতরে
কাতরে ডাকশুনি মায়ের, গাঁথা বকুলের ঘ্রাণে
কানে আসে মিছিল, শুধু মিছিল-একুশের, শহীদের!
এদেশে আসেনি কতকাল প্রেমের মৌসুম!
ঘুম কেড়ে নেয়া শাসকের চোখ সেই দানবের,
ঘুমহীন কত রাত দু’চোখে জানা নেই!
এই পাগলা কুকুরের বিষাক্ত লালার কসম,
ওম নেয়া বরফ রাত একদিন জমাট হবে।
কবে কোন কবি দিয়েছে অভিশাপ তারে,
সাড়ে তিন হাজার বছর আগেকার এক দুপুরে-
কুকুরে তখন চাটছে মানুষের জিহ্বা-গাল,
শালবনে গেয়ে চলেছে হরিয়াল কীর্তন
হরতনÑরুইতন, টেক্কা-তুরুপ চলছে সিংহাসনে!
কে জানে কোন দেশ, কোন স্বাধীনতা পেলাম!
প্রেম কী? আমি কে? সাহেব-বিবি-গোলাম?
শীর্ষ সংবাদ: