ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আপনি আচরি ধর্ম

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ২৪ মার্চ ২০১৮

আপনি আচরি ধর্ম

রোহিঙ্গা ইস্যু এবং তাদের বাংলাদেশে শরণ নেয়ার পর সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বাইরের পৃথিবী সম্পূর্ণ অবগত। দু’-একটি দেশ ছাড়া সকলেই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে সেখানে বসবাসের সকল সুবিধা ও অধিকার প্রদানের জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে বলেছে। জাতিসংঘ কফি আনান কমিশনের মাধ্যমে সরেজমিন পরিদর্শনের পর রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য বেশ কয়েকটি বাস্তব ও ন্যায়সঙ্গত প্রস্তাব রেখেছে। তাকে এবং কমিশনের সদস্যদের অবশ্য রাখাইন প্রদেশের উপদ্রুত এলাকায় যেতে দেয়া হয়নি। ফলে এই উচ্চ পর্যায়ের কমিশন সরেজমিনে রোহিঙ্গাদের ভস্মীভূত গ্রাম এবং তাদের দুরবস্থা দেখার সুযোগ পায়নি। নিরাপত্তার অজুহাতে বাইরের কোন পরিদর্শককেই মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ উপদ্রুত এলাকায় যেতে দেয়নি। নজিরবিহীন বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতার সঙ্গে রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশুদের হত্যা করে তাদের অসংখ্য গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রাণভয়ে দলে দলে রোহিঙ্গারা হেঁটে জঙ্গলের পথ দিয়ে অথবা নদীপথে নৌকায় বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করেছে। রোহিঙ্গা ইস্যু এখন যে মাত্রায় আন্তর্জাতিক হয়ে উঠেছে, তাতে বাংলাদেশের তরফ থেকে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেয়া ভাষণে যে প্রস্তাবগুলো রেখেছেন তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশেই। আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ছাড়া এই প্রস্তাবগুলো এগিয়ে নেয়া বা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেশে ফিরিয়ে নেয়ার কাজটি সহজ হবে না। এমনিতেই আমরা নানাভাবে আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশকে ধ্বংস করছি প্রতিনিয়ত। বন কেটে, পাহাড় কেটে, কাঠ আর মাটি বিক্রি করে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছি মারাত্মকভাবে। এই কাটাকাটির সঙ্গে এখন নতুন করে যুক্ত হয়েছে প্রাণভয়ে ছুটে আশা অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। যারা প্রতিনিয়ত নতুনভাবে বন-পাহাড় কেটে আশ্রয় নিচ্ছে টেকনাফ-কক্সবাজারের বিভিন্ন অঞ্চলে। যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নিশ্চিত করার। কিন্তু তার পরও এই প্রচেষ্টার বাইরে এখনও রয়ে গেছে অনেকে এবং সেই সঙ্গে প্রতিনিয়ত আগত রোহিঙ্গার দল নানাভাবে সম্মিলিত বাহিনীর চোখ এড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন প্রান্তরে। যা বাংলাদেশের ওই অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতির ভারসাম্যকে দ্রুত ঠেলে দিচ্ছে নেতিবাচক পরিস্থিতির দিকে। এ যেন আমাদের পরিবেশের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। তাছাড়া রোহিঙ্গা কিশোরী ও নারীরা ইতোমধ্যে দালালচক্রের মাধ্যমে বাধ্য হচ্ছে যৌনকর্মে ব্যবহৃত হতে। আন্তর্জাতিকভাবে এখন এটা তুলে ধরা জরুরী যে, মিয়ানমারের রোহিঙ্গাবিরোধী নীতির কারণেই দীর্ঘদিন ধরে সমস্যাটি চলছে। এই সমস্যার কোন দায় বাংলাদেশের না থাকলেও জনবহুল এই দেশটিকে ১০ লাখ শরণার্থীর ভার বইতে হচ্ছে এবং এর একটি স্থায়ী সমাধান জরুরী হয়ে পড়েছে। এ বাস্তবতায় রোহিঙ্গা সঙ্কটের পেছনে ঐতিহাসিক, ধর্মীয় ও নৃতাত্ত্বিক কারণ আবিষ্কার করেছেন ঢাকায় নবনিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাং জুও। চীনের সাম্প্রতিক ভাষ্য বেশ কৌতূহল জাগানিয়া। যেন আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্যই তারা বলছে, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমাদের কোন নিজস্ব স্বার্থ নেই।’ ‘সহমর্মী’ এই রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশে যে উদ্বেগ রয়েছে তা আমরা বুঝি। রাখাইন থেকে স্থানচ্যুত জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে এসেছে।’ নয়া চীনা রাষ্ট্রদূতের কথায় কূটনীতি রয়েছে, আন্তরিকতার কিছুটা ঘাটতিও লক্ষণীয়। বরং আমরা তাকে পরামর্শ দিতে পারি, আপনার সুবিশাল দেশে রোহিঙ্গাদের স্থায়ী না হলেও সাময়িক আবাসনের উদ্যোগ নিন এবং এরপর মিয়ানমারে তাদের প্রত্যাবাসনে জোরালো ইতিবাচক ভূমিকা রাখুন। কথায় বলে- আপনি আচরি ধর্ম।
×