ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ডিভাইডারের সেই পুষ্পরাজির আর দেখা মেলে না

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৪ মার্চ ২০১৮

 ডিভাইডারের সেই পুষ্পরাজির আর দেখা মেলে না

পূর্বের ঢেউ খেলানো পাহাড় আর নীলিমার সঙ্গে মহাসড়ক বেয়ে ফুলের পাপড়ির দোল খেলানো কোমল সতেজ শিহরণ এনে দিচ্ছে সকলের প্রাণে। আর সৌখিন যাত্রী চালক সকলেই যেন পাচ্ছে ভিন্ন রকম কোমলতা। এমনি দৃশ্য ছিল গত বছরের বর্ষায়ও। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সুদৃশ্যময় সড়কে রূপ নিয়েছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। এখন আর ফুলে সুসজ্জিত নয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। পর্যায়ক্রমে সব সঙ্কট কাটিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে সাজানো হয়েছিল প্রাকৃতিক রূপে। ১৬ সালের বর্ষার শেষের দিকে লাগানো হয়েছিল বিভিন্ন ফুলের গাছ। নানা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় গাছ লাগানোর পর কিছু কিছু অংশে গাছ মরে যাওয়ায় সেসব এলাকায় ১৭ সালের বর্ষায় গাছ লাগানোর কথা ছিল। মৃত গাছের স্থলে গাছের নতুন ছারা লাগানো হলেও তা শেষ পর্যন্ত টেকেনি। ১৬ সালের শেষ নাগাদ শেষ হওয়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রায় দুই শ’ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে করা হয়েছিল বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী। (মিডিয়ান গ্যাপ) নামক ডিভাইডারের মধ্যখানের মাটি দেয়া ফাঁকা অংশে রোপণ করা হয়েছিল ৫০ হাজার বকুল, হৈমন্তী/কুরচী, সোনালু, রাধাচূড়া, কেছিয়া, কৃষ্ণচূড়া, কাঞ্চন, করবী, জারুল, কদম, পলাশসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুলগাছ। এছাড়া লং এরিয়াতে (গাছ ব্যতীত খালি অংশ) সবুজ ঘাস লাগানোর কথা ছিল। ঘাসের সমারোহ এবং নানা ফুলের নান্দনিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হবেন মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা এমন উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এমন পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এ সড়কটিকে ৫টি প্যাকেজে বিভক্ত করে করা হয়েছে এই কার্যক্রম। ফুলের চারা লাগানোর পর দেয়া হয়েছে সংরক্ষণের জন্য বাঁশের তৈরি বেষ্টনীও। এরপর এসব চারা রক্ষণাবেক্ষণেও রাখা হয়েছে একটি বিভাগ। কিন্তু এতসব আয়োজনের মধ্যে গত বছরের বর্ষা শেষে চলতি বছরের শুরুতেই দেখা যায়, সড়কের বিভিন্নস্থানে মীরসরাই, মিঠাছরা, বড়তাকিয়া, সোনাপাহাড়, দুর্গাপুর, সীতাকু-ের কুমিরা, বারৈয়াঢালা, বাড়বকুন্ড অংশে অধিকাংশ গাছ মরে গেছে। তবে কি কারণে গাছ মারা যাচ্ছে তার সঠিক কারণ জানা যায়নি। এই বিষয়ে ফোরলেন এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও সড়ক ও জনপথের চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার আলী বলেন, গাছগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হচ্ছে। তারা নিয়মিত গাছগুলোতে পানি দেয়া ও নিয়মিত পরিচর্যা করবে। চলতি বছরের বর্ষায় যে অংশে গাছ মরে গেছে সেখানে নতুন করে গাছ লাগানো হবে। গাছ মরার বিষয়ে মীরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমত যথাযথ পরিচর্যার অভাব, পানির অভাব। এছাড়া সড়কের দুই ধারের প্রচুর ধুলাবালি, গাড়ির কালো ধোঁয়া এবং বর্ষা মৌসুমে গাছে ঝোপঝাঁড়ে ঘিরে থাকার কারণে কিছু কিছু গাছ মারা যায়। তাছাড়া এবং গাছ নির্বাচনেরও একটি বিষয় রয়েছে। তবে কোন কোন অংশে ছোট ছোট কৃষ্ণচূড়া আর নানা হৈমন্তী/কুরচী, সোনালু, রাধাচূড়া, কেছিয়া, কৃষ্ণচূড়া, কাঞ্চন, করবী, জারুল গাছগুলোতে ইতোমধ্যেই ফুল ফুটে উঠায় এই রুটের যাত্রীরা ইতোমধ্যেই বিমোহিত। এসব গাছ বড় হয়ে উঠলে নৈসর্গিক মোহনীয়তায় দেশী-বিদেশী যে কারোই প্রাণ হরণ করবেই এই সড়কপথ। আশা করা যাচ্ছে এই গাছগুলো বড় হলে ভিন্নএক অচেনা দেশের সবুজ আর সোনালিতে রূপ নেবে এই ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক! এই পথে চলাচলকারী যাত্রী সাধারণরা বলেন, সড়কের কোন কোন স্থানে গাছে ফুল ফোটায় দেকতে খুভ ভাল লাগাছ। আবার যেখানে গাছ মরে শূন্য মরুপ্রান্তরে পরিণত হয়েছে তার জন্য সড়কের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। অচিরেই তারা মৃত গাছের স্থলে নতুন করে চারা রোপণ করে সড়কের সৌন্দর্য বর্ধনের দাবি জানান। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, এই মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে চট্টগ্রাম সিটি গেট পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার ফোরলেন অংশের মধ্যে এ প্রকল্পের আওতায় ১৪৩.৪ কিলোমিটার এলাকায় ফুলের গাছ রোপণ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের মধ্যে দাউদকান্দি থেকে ময়নামতি, ময়নামতি থেকে বাতিশা, বাতিশা থেকে ধুমঘাট, ধুমঘাট থেকে সীতাকুন্ড এবং সীতাকুন্ড থেকে চট্টগ্রাম সিটি গেট পর্যন্ত ৫টি প্যাকেজে ওই গাছ রোপণ করা হয়েছিল। -রাজিব মজুমদার মীরসরাই, চট্টগ্রাম থেকে
×