ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

হুইলচেয়ারে বন্দী মেধাবী মেহেদীর স্বপ্ন

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৪ মার্চ ২০১৮

হুইলচেয়ারে বন্দী মেধাবী মেহেদীর স্বপ্ন

বদরগঞ্জ উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের বোর্ডের হাট এলাকায় মেহেদী হাসানের বাড়ি। বয়স সবে মাত্র ২১। তিন বোন এক ভাই। মেহেদী বড়। বাবা আমিনুল ইসলাম একজন খুদে ব্যবসায়ী। পিতা-মাতার বড় সন্তান হওয়ার কারনে ছোটবেলা হতে লেখাপড়ার পাশাপাশি গরিব পিতাকে নানা রকমের সহযোগিতা করত মেহেদী। লেখাপড়ায় মেহেদীর প্রচন্ড আগ্রহ দেখে আমিনুল ইসলাম শত কষ্টের মাঝেও ছেলেকে লেখাপড়ায় উৎসাহ দিতেন। আর ভাবতেন, ছেলে একদিন বড় হয়ে লেখাপড়া শিখে মানুষ হয়ে সংসারের হাল ধরবে। কিন্তু বিধিবাম। এখন মেহেদীর সময় কাটছে হুইল চেয়ারে বসে। মেহেদী ছাত্রাবস্থায় নিজের খরচ নিজে চালিয়ে ভাল ফলাফল নিয়ে এইচএসসি পাস করে। পরে সে ঢাকার একটি কলেজে অনার্সে ভর্তি হয় এবং পাশাপাশি একটি ফার্মে খন্ডকালীন চাকরি নেয়। এভাবে কষ্টের মাঝেই চলছিল তার শিক্ষা জীবন। হঠাৎ একদিন রাতে মেহেদী অসুস্থ হয়ে পড়লে তার বন্ধুরা তাকে ঢাকার উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করায়। সেখানে ডাক্তারি পরীক্ষায় তার মেরুদন্ডে টিবি ধরা পড়ে। আর এ কারনে তার কোমর হতে নিচ পর্যন্ত অবস হয়ে গেছে। পরে সাভারের সিআরপিতে ভর্তি হলে সেখানে ৬ মাস চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাকে থেরাপি দেয়া হয়। তার এই চিকিৎসার ব্যয় সামলাতে গিয়ে গরিব পিতার সংসারে সহায়-সম্বল বিক্রি করতে হয়েছে। এরপরও যখন মেহেদী সুস্থ হয়ে উঠছে না তখন ডাক্তাররা তার পিতাকে পরামর্শ দেন উন্নত চিকিৎসার জন্য মেহেদীকে বিদেশে চিকিৎসার। বাধ্য হয়ে অর্থাভাবে গরিব পিতা তার অসুস্থ ছেলেকে বাড়িতে নিয়ে চলে আসেন। এখন মেহেদীর সময় কাটছে হুইল চেয়ারে বসে। সোমবার (১৯ মার্চ) সরেজমিনে মেহেদীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, হুইল চেয়ারে বসে আছে মেহেদী। নির্বাক অপলক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে সে বলে, আমি কি আর সুস্থ হবো না! মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারব না! এ প্রতিবেদককে দেখে এমনই প্রলাপ বকছে মেহেদী। মেহেদীর পিতা আমিনুল ইসলাম কান্না জড়িত ক-ে বলেন, আমার সামর্থ্য অনুযায়ী সব রকমের চেষ্টা করেছি। কিন্তু ডাক্তাররা আমাকে জানিয়েছেন বিদেশে উন্নত চিকিৎসা করালে মেহেদী ভাল হয়ে যাবে। তার অসুস্থ মেধাবী ছেলেটির পাশে দাঁড়ানোর জন্য দেশের সুহৃদয়বান ব্যক্তিদের নিকট আকুল আবেদন জানান তিনি। গোপিনাথপুর ইউনিয়নের হায়দারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুল আলম জানান, মেহেদি ছোট বেলা হতে অত্যন্ত মেধাবী ছিল। বর্তমানে এমন শিক্ষার্থী আর পাওয়া যায় না। মেহেদীর মত মেধাবীদের বাঁচাতে সকলের এগিয়ে আসা উচিত। -এসএম জাহিদুল হক বদরগঞ্জ, রংপুর থেকে
×