ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ২৫ মার্চ ২০১৮

উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা

উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠার জন্য বাংলাদেশকে এ সংক্রান্ত তিন শর্ত পূরণ করতে হয়েছে। এই তিন শর্ত হলো : দেশবাসীর মাথাপিছু বার্ষিক আয় তিন বছরের গড় হিসেবে ১ হাজার ২৪২ মার্কিন ডলারে উন্নীত হওয়া। বাংলাদেশে এখন মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৬১০ ডলার। মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচকে ১০০-এর মধ্যে ৬৬ বা তার বেশি অর্জন করা, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ৭০। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে ৩২ বা তার নিচে থাকা, বাংলাদেশের অবস্থান ২৫.০৩-এ। শর্ত পূরণ হওয়ায় স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা-এলডিসির তকমা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করার অনুমতি পেয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ মার্চে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার স্বীকৃতিপত্র প্রদান করেছে। একটি দেশের বৈশ্বিক পর্যায়ে উন্নয়নসংক্রান্ত মর্যাদার এক ধাপ উত্তরণ সেই জাতির জন্য গৌরবজনক ঘটনা অবশ্যই। একসময় বাংলাদেশকে দরিদ্র দেশের মডেল হিসেবে গণ্য করা হতো। বলা হতো, এলডিসির নেতৃত্বদানকারী দেশ বাংলাদেশ। আমাদের দারিদ্র্যকে কটাক্ষ করে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আখ্যায়িতও করা হয়েছিল। সেই অবস্থা থেকে উত্তরণ অবশ্যই কৃতিত্বপূর্ণ। বেড়েছে দেশের মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা। ফলে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় প্রবেশের প্রথম ধাপ অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ। ২০২১ সালে অনুষ্ঠেয় মধ্যবর্তী পর্যালোচনায় বাংলাদেশ তার অবস্থান ঠিক রাখতে পারলে ২০২৪ সালে আমরা চূড়ান্তভাবে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তীর্ণ হতে পারব। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের মর্যাদা ও অবস্থান আগের তুলনায় বাড়বে ও সুসংহত হবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলও বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকা-ের প্রশংসা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণেই বলেছিলেন, বাংলার মানুষকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হওয়ার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। এই অর্জন বাংলাদেশের উন্নয়নে কাজ করেছেন তাদের সকলের এবং জনগণের। কাজেই মনে করি বাংলাদেশের জনগণই হচ্ছে মূল শক্তি। তাদের অভিনন্দন জানাই। আর জনগণই পারে সব রকম অর্জন করতে।’ সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এ্যাগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্টের (ইফাদ) ৪১তম পরিচালনা পর্ষদের বার্ষিক অধিবেশনে যোগ দিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী গিয়েছিলেন ইতালির রোমে। সেখানে মূল বক্তা হিসেবে তিনি দেশের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূর করতে গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিনিয়োগের জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। দারিদ্র্য বিমোচন তথা স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য শুধু শহর-নগর নয়; বরং গ্রামীণ অর্থনীতিতেও বিনিয়োগ অত্যাবশ্যক। বিশ্বব্যাপী অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা ছাড়া এটি অর্জন করাও সম্ভব নয়। আমাদের প্রত্যাশা একদিন দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশই হবে শ্রেষ্ঠ। শ্রেষ্ঠ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ মর্যাদা পাবে। সেজন্য যে সুপরিকল্পনা গ্রহণ, শ্রমনিষ্ঠা, দেশপ্রেম ও আন্তরিকতার কোন বিকল্প নেই এবং একইসঙ্গে সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখাও গুরুত্বপূর্ণÑ সেকথা বলাই বাহুল্য। উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন ধরে রাখতে চারটি চ্যালেঞ্জের কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। এসব চ্যালেঞ্জ কৃতিত্বের সঙ্গে মোকাবেলা করে বাংলাদেশ ২০২৪ সালে পাকাপোক্তভাবে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে- এটাই প্রত্যাশা।
×