ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে কেন ভরাডুবি

প্রকাশিত: ০৪:৫০, ২৫ মার্চ ২০১৮

 সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির  নির্বাচনে কেন ভরাডুবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০১৮-১৯ মেয়াদের নির্বাচনে সাতটি কারণে আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের সাদা প্যানেলের ভরাডুবি হয়েছে। এবারের নির্বাচনে ১৪টি পদের মধ্যে সাদা প্যানেল একটি সহ-সম্পাদকসহ মাত্র ৪টি পদ পেয়েছে। কি কারণে সাদা প্যানেলের ভরাডুবি হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে এর অন্যতম কারণ আওয়ামী আইনজীবীদের দুটি সংগঠন একীভূত করে নতুন নেতৃত্বে নির্বাচন, ১১ জেলার ১১ আইনজীবীর ভূমিকা। আইন কর্মকর্তাদের ভূমিকা। এ প্রসঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ জনকণ্ঠকে বলেন, যাদের দিকে সাপোর্ট বেশি তারাই জয়লাভ করেছে। হয়তো বা সাদা প্যানেলের কেউ কেউ কম খেটেছে। এবার প্যানেল ভাল ছিল কিন্তু সাধারণ ভোটাররা হয়তো চয়েস করে নি। পাশাপাশি সাদা প্যানেলের কেউ কেউ নিষ্ক্রিয় ছিল যার ফলে বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীদের জয়লাভ হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী আইনজীবীদের দুটি সংগঠন বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ ও আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ দীর্ঘদিন বিরোধে লিপ্ত থাকায় বিভিন্ন বার সমিতিতে কোন্দল ও পরাজয় ঠেকাতে দলীয় প্রধানের উদ্যোগে দুটি সংগঠনকে বিলুপ্ত করে “বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ” নামে নতুন সংগঠন করা হয়। আহ্বায়ক হিসেবে সুপ্রীমকোর্ট সমিতির সাবেক সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনকে এবং বিলুপ্ত ঘোষিত আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সভাপতি সাহারা খাতুন ও বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের সভাপতি আব্দুল বাসেত মজুমদারকে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং তরুণ আইনজীবী ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসকে সদস্য সচিব করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। সাধারণ আইনজীবীদের মতে নতুন নেতৃত্বকে গ্রহণ করতে পারেনি কিছু নেতৃবন্দ। ফলে নির্বাচনে যতটা কাজ করার কথা ছিল তা তারা করেন নি। অন্যদিকে নতুন সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক করে ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনকে আহ্বায়ক করে পুনরায় সভাপতি পদে মনোনয়ন দেয়ায় ১১টি জেলার ১১ জন আইনজীবী কোনভাবেই মেনে নিতে পারেনি। এ সমস্ত আইনজীবী নিজেদের অবস্থান বিবেচনা করে কোনভাবেই ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনকে সমিতির সভাপতি পদে নির্বাচিত হোক তা মেনে নিতে পারেনি। সে কারণেই তারা সামনে সমর্থন দিলেও নির্বাচনে নিষ্ক্রিয় থেকেছে। নির্বাচনে আঞ্চলিক বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এছাড়া ঢাকা জজকোর্ট ও ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট-এ ২০০৮ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত পাবলিক প্রসিকিউটরসহ নিয়োগপ্রাপ্ত অন্যান্য আইন কর্মকর্তারা ৯ বছর বহাল থেকে সুযোগ সুবিধা গ্রহণের ফলে দলীয় অন্য আইনজীবীরা দীর্ঘদিন বঞ্চিত থাকার ক্ষোভ। একইভাবে এ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে ৯ বছর ধরে, কেউ কেউ ১২ বছর ধরে চাকরিতে বহাল থাকায় দলীয় অন্য আইনজীবীরা সুযোগ না পাওয়ায় তাদের ভিতরে ভিতরে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রেও নিদিষ্ট ব্যক্তির পছন্দের আইনজীবীরাই বিচারপতি নিয়োগের ফলে আওয়ামীপন্থী অনেক আইনজীবী ক্ষুব্ধ। তাদের মতে যারা সুযোগ সুবিধা নানাভাবে গ্রহণ করছে তারাই নির্বাচনে দয়িত্ব নেবে না কেন? ২০১৮-১৯ মেয়াদের নির্বাচনে সভাপতি পদে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলে অর্থাৎ নীল প্যানেল থেকে এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ২৩৬৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের সাদা প্যানেলর এ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন পেয়েছেন ২৩১৫টি ভোট। তাদের ভোট ব্যবধান ছিল ৫৪টি। এবারের নির্বাচনে ৬ হাজার ১৫২ ভোটারের মধ্যে ৪ হাজার ৮৬৫ আইনজীবী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। সম্পাদক পদে নীল প্যানেলের ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ৪৪১ ভোট বেশি পেয়ে টানা বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাদা প্যানেলের এ্যাডভোকেট এসকে মোঃ মোরসেদ। বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে সহসভাপতি ড. মো. গোলাম রহমান ভুঁইয়া, এম গোলাম মোস্তফা, কোষাধ্যক্ষ নাসরিন আক্তার, সহসম্পাদক কাজী জয়নুল আবেদীন, সদস্য পদে মাহফুজ বিন ইউসুফ, সাইফুর আলম মাহমুদ, মোঃ আহসান উল্লাহ ও মোহাম্মদ মেহেদী হাসান বিজয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে সাদা প্যানেল থেকে সহসম্পাদক পদে মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, সদস্য ব্যারিস্টার আশরাফুল হাদী, শাহানা ও শেখ মোহাম্মদ মাজু মিয়া জয়লাভ করেছেন।
×