ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশীরা আতঙ্কে

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ২৫ মার্চ ২০১৮

দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশীরা আতঙ্কে

ফিরোজ মান্না ॥ দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশী নাগরিকরা চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। গত ৮ মার্চ বাংলাদেশী এক নাগরিককে একদল কৃষ্ণাঙ্গ সন্ত্রাসী কুপিয়ে হত্যার পর থেকেই এ অবস্থা বিরাজ করছে। সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশী ওই নাগরিকের দোকানে চাঁদা চাইতে গেলে এ ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে বাংলাদেশী নাগরিকদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দেশটির কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে তেমন কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় পরিস্থিতি উদ্বেগজনক রূপ নিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, বহু এলাকায় এখন বাংলাদেশী নাগরিকরা ঘরের বাইরে বের হতে পারছেন না কৃষ্ণাঙ্গ সন্ত্রাসীদের ভয়ে। আফ্রিকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাসকারী ফেনীর এক ব্যবসায়ী বেলায়েত হোসেন টেলিফোনে জানান, তারা খুব জটিল পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। গত ২০ বছরে কৃষ্ণাঙ্গরা এমন হিংস্র হয়ে ওঠেনি। তারা এবার বাংলাদেশী নাগরিক দেখলেই মারমুখী হয়ে উঠছে। কেন এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে কৃষ্ণাঙ্গরা চাঁদা চাইলে বাংলাদেশীসহ অন্য দেশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা চাঁদা দিয়ে দিত। এবার চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় এক বাংলাদেশীকে দোকানের মধ্যেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। খুন হওয়া ওই নাগরিক চার বছরের বেশি সময় ধরে দেশটিতে অবস্থান করছে। সেখানে তিনি চাল ডালের দোকান করেন। আফ্রিকানরা যখন খুশি তখনই দোকান থেকে চঁদা নিয়ে যেত। এবার তিনি প্রতিবাদ করায় তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার ঘটনাটি স্থানীয় থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে কালো সন্ত্রাসীরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এখন আফ্রিকার বিভিন্ন এলাকায় কৃষ্ণাঙ্গ সন্ত্রাসীদের হামলার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটিতে বর্তমানে বাংলাদেশের ৫ থেকে ৬ লাখ নাগরিক বসবাস করছেন। তারা বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসাসহ অন্যান্য কাজ করেন। নানা প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে আফ্রিকায় বসবাস করা নাগরিকরা দেশে বড় অঙ্কের রেমিটেন্সও পাঠিয়ে আসছেন। প্রায়ই দেশটিতে বাংলাদেশী, ভারতীয়, নেপালীসহ বেশ কয়েকটি দেশের নাগরিকরা কৃষ্ণাঙ্গ সন্ত্রাসীদের আক্রমণের স্বীকার হন। তারা চাঁদা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকেন। কিন্ত এবারের ঘটনা অন্য রকম রূপ নিয়েছে। গোটা কমিউনিটিকে তারা শত্রু মনে করছে। যেখানেই বাংলাদেশী নাগরিক দেখছেন সেখানেই হামলার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। বিষয়টি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ হলে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না। তিনি বলেন, আফ্রিকায় আমাদের শ্রমবাজার নেই। দেশটিতে বিভিন্ন উপায়ে দেশের নাগরিকরা গিয়েছেন। সেখানে কিছু ঘটলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানতে পারবে। আমরা এ বিষয়ে তেমন কিছু বলতে পারব না। এদিকে, হত্যাকা-ের ঘটনা নিয়ে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। সংবাদ প্রকাশের পর ঘটনার সন্ত্রাসীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় মাঝে মধ্যেই এ ধরনের ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। কিন্তু তা বেশি দূর আগায়নি। এ ঘটনাটি নিয়ে দেশটিতে বড় রকমের আলোচনা হচ্ছে বলে বাংলাদেশী নাগরিকরা জানিয়েছেন। বাংলাদেশী নাগরিকরা জানিয়েছে, দেশটিতে বর্তমানে মুদ্রাস্ফীতির কারণে ইদানীং ব্যবসা বাণিজ্যও ভাল যাচ্ছে না। যদিও এক সময় অভিবাসীদের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা ভাল একটি দেশ ছিল। কিন্ত এখন দেশটিতে টিকে থাকাই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। সহজভাবে জীবন চালানোই কঠিন। আর্থিক সঙ্কটের কারণে কৃষ্ণাঙ্গ সন্ত্রাসীরা প্রায় বিভিন্ন দেশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা চালায়। কেড়ে নেয় টাকা পয়সা-দামী জিনিসপত্র।
×