ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

২১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে জামালপুর রেলওয়ে ওভারপাস

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১০ এপ্রিল ২০১৮

২১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে জামালপুর রেলওয়ে ওভারপাস

আজিজুর রহমান ডল, জামালপুর থেকে ॥ রেলওয়ের উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যানজট নিরসন এবং নিরাপদ যাতায়াতের লক্ষ্যে জামালপুরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে জামালপুর শহরের ব্যস্ততম প্রধান সড়কের প্রধান রেলগেটে রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ ও প্রধান সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি একনেকের সভায় এ প্রকল্পের জন্য ২১৯ কোটি ১৯ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন পাওয়া গেছে। রাস্তার দুই পাশের ভূমি মালিকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিয়ে ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শেষ করে খুব শীঘ্রই প্রকল্পটির কাজ শরু হতে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। জামালপুর রেলওয়ে জংশন স্টেশন সংলগ্ন শহরের প্রধান সড়কের এই প্রধান রেলগেট হয়ে জামালপুর-সরিষাবাড়ী-যমুনা সেতু লিংক রুট এবং জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ-বাহাদুরাবাদ ঘাট রেলপথে প্রতিদিন যাত্রীবাহী চারটি আন্তঃনগর ট্রেনসহ ২০টি যাত্রীবাহী ট্রেন যাতায়াত করে থাকে। সরকার বাহাদুরাবাদ-বালাসী নৌরুট চালুর করতে ইতোমধ্যে যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদের বাহাদুরাবাদ ও বালাসী প্রান্তে নৌ-টারমিনাল স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। নৌ-টারমিনাল চালু হলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ রেলওয়ে ফেরি সার্ভিসও চালু করার আশ^াস দিয়েছে। একই সঙ্গে সরকার জয়দেবপুর থেকে জামালপুর পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথসহ ডাবল লাইনের রেলপথ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে রেলপথে যাত্রীদের যাতায়াত আগের চেয়ে আরও বাড়বে। ফলে শহরের প্রধান সড়কের প্রধান রেলগেট হয়ে ট্রেন চলাচল আগের চেয়ে আরও বাড়বে এবং রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ না করা হলে এক অসহনীয় তীব্র যানজটে গোটা শহর অচল হয়ে পড়বে। এক হিসেবে দেখা গেছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটেই প্রতিঘণ্টায় এই রেলগেট হয়ে ট্রেন চলাচল করে থাকে। ফলে ট্রেন চলাচলের সময় এই রেলগেটের দুই দিকে দীর্ঘ প্রায় দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। একবার যানজট না ছাড়তেই পুনরায় ট্রেনের সময় হয়ে যায় এবং গেটবেরিয়া নামিয়ে ট্রেন পার করা হয়। এই যানজট ছড়িয়ে পড়ে গোটা শহরজুড়ে। শহরের এই রেলগেট হয়েই সারা জেলার যানবাহন ও যাত্রীদের চলাচল করতে হয়। এই রেলগেট হয়েই প্রতিদিন শতশত খাদ্যবাহী ট্রাক চলাচল করে সরকারী খাদ্যগুদামে। ফলে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক ভারি যানবাহন, যাত্রীবাহী বাস কোস্টার, ইজিবাইক থেকে শুরু করে এই রেলগেট হয়ে প্রতিঘণ্টায় শতশত যানবাহন চলাচল করে থাকে। এই রেলগেটের যানজটে পড়ে ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপণের গাড়ি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি এবং জরুরী রোগী বহনকারী এ্যাম্বুলেন্স আটকা পড়ে যায়। ট্রেনের যাত্রীরা বাসা থেকে বের হয়ে রেলওয়ে স্টেশনের যেতে চরম বিড়ম্বনার শিকার হন। অনেকেই সময় মতো স্টেশনে বা কেন্দ্রীয় বাস টারমিনালে পৌঁছতে না পেরে টিকিটের টাকা নষ্ট হওয়াসহ জরুরী কাজে সময় অপচয় হওয়াসহ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন। শহরের প্রধান সড়কের এই রেলগেটের গেটবেরিয়ারও দীর্ঘদিন ধরে অচল হয়ে গেছে। ট্রেন দেখে রেলওয়ে কর্মী ও ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা বাঁশি ফুঁকে যানবাহন থামিয়ে ট্রেন পার করেন। রেলগেটে এই অব্যবস্থাপনার কারণে মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। রেলগেটে সৃষ্ট তীব্র যানজটের চিত্র তুলে ধরে দীর্ঘ দুই যুগে ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে অনেক সচিত্র সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। এ সমস্যাটি নিয়ে জেলা প্রশাসনের মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি ও জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির প্রতিটি সভায় আলোচনা হতো। শহরের সচেতন মহল রেলগেটে রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণের জন্য বিভিন্ন সময়ে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচীর মাধ্যমে সরকারের প্রতি দাবিও জানিয়ে আসছিল। জামালপুর সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, জামালপুর জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা রাস্তার দুই পাশের ভূমি অধিগ্রহণের জরিপ কার্যক্রম চালাচ্ছে। জেলা প্রশাসন থেকে আমাদের কাছে ভূমির মালিকদের নাম তালিকা এবং চূড়ান্ত ক্ষতিপূরণের তালিকা দেয়া হলে প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে আশা করছি ক্ষতিপূরণ দেয়ার কাজ চলতি অর্থ বছরের জুন মাসের মধ্যে শেষ হবে।
×