ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রমজানে নৈতিকতার সাথে ব্যবসা করুণ

প্রকাশিত: ০২:৪৯, ১৫ এপ্রিল ২০১৮

রমজানে নৈতিকতার সাথে ব্যবসা করুণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রমজান মাসে নৈতিকতার সাথে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন। এ সময় ব্যবসায়ীরা রমজানে দ্রব্যমুল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ ও রাজনৈতিক দলের চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি জানান। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার পাশাপাশি আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে এলাকাভিত্তিক ও বিশেষায়িত ব্যবসায়ী সমিতিগুলোর সাথে এই মতবিনিময় সভা রবিবার ডিসিসিআইতে আয়োজন করেন। স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে মে মাসের ব্যবধানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম গড়ে ১৭.৫১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং এই মূল্যবৃদ্ধির মূলে রয়েছে প্রথাগত বাজার সরবরাহ প্রক্রিয়া, অতিরিক্ত মজুদকরণের মাধ্যমে বাজারে পণ্যদ্রব্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, অপর্যাপ্ত ও সমন্বয়হীন বাজার মনিটরিং, পরিবহনখাতে চাঁদাবাজি, দুর্বিষহ যানজট এবং অতিরিক্ত পরিবহন ব্যয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০১৮ সালে দেশে গড় মুল্যস্ফীতি ৫.৮২ শতাংশ এবং খাদ্যদ্রব্যে গড় মূল্যস্ফীতি ৭.১৩ শতাংশ। এ পরিস্থিতে আসন্ন রমজান মাসে খাদ্যদ্রব্যের দাম আরও বাড়লে মধ্যবিত্ত আয়-ব্যয়ে সমন্বয় করতে হিমশিম খাবে। ডিসিসিআই’র সভাপতি বলেন, বর্তমানে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো দুই অঙ্কের উচ্চ সুদের হার এবং কোনো কোনো ব্যাংকের ১৬ শতাংশ থেকে ১৭ শতাংশ সুদ হার উৎপাদন খরচ বাড়াতে পারে, পাশাপাশি রয়েছে ঋণ পাওয়ার জটিলতা ও অপ্রয়োজনীয় সময়ক্ষেপণ এবং এসব কিছুর চাপ শেষ পর্যন্ত গিয়ে উৎপাদন খরচের সাথে যোগ হয় এবং ভোক্তাকেই তা বহন করতে হয়। তিনি আরোও বলেন, পাশাপাশি রমাজানে ট্যারিফ কমিশন ও রাজস্ব বোর্ড এসব নির্দিষ্ট ভোগ্যপণ্যে ট্যারিফ ও শুল্ক হ্রাস করতে পারে এবং ব্যবসায়ীরা রমজানে পাইকারী পর্যায়ে বিক্রয় করার ক্ষেত্রে অন্যান্য মাসের তুলনায় সুলভমূল্যে বিক্রয় করতে পারবে। তিনি পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি ও যানজট নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ব্যবসায়ী সমাজ ও আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর ও সরকারি সংস্থার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য এবং আইন আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা সম্ভব বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন আসন্ন রমজান মাসে নৈতিকতার সাথে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, দেশের আইন-শৃক্সখলা বাহিনীর সদস্যবৃন্দ কোন ধরনের অনৈতিক কার্যক্রম কে প্রশয় দিবে না এবং এ ধরনের পরিস্থিতি কঠোর হস্তে দমন করা হবে। তিনি আরোও বলেন, এ ধরনের অসাধু কার্যক্রমে আইন-শৃংখলা বাহিনীর কোন সদস্য জড়িত থাকলে তাকেও কোন ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। মাহসড়াকে যানজটের বিষয়ে তিনি গাড়ির চালকদের কে নিয়ম মেনে গাড়ি চালানোর আহবান জানান এবং মাত্রারিক্তি পণ্য পরিবহনে বিরত থাকার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান। তিনি আসন্ন রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা এবং বিপনী বিতান সমূহে নিরাপত্তা বিধানে সরকারের পক্ষ হতে সকল ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেন। কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি সভা আয়োজন করে, যেখানে এবছর রমজান মাসে চাহিদা মাফিক পণ্য সরবরাহের বিষয়টি সরকার ও ব্যবসায়ীদের পক্ষ হতে আশ্বাস প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকা সত্তে¡ও ডলারের দামের ওঠা-নামার ফলে আমাদের আভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায় এবং এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আরো সচেতন থাকতে হবে। তিনি আরো বলেন, রাস্তাঘাটে যানজট, বন্দরসমূহে জাহাজ ও পণ্যবাহী ট্রাকের জটের ফলে বিশেষকরে রমজান মাসে চাহিদা মাফিক পণ্যের সরবরাহ ব্যাহত হয়, তাই এ সমস্যা সমাধানে বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আরোও উদ্যোগী হতে হবে। ক্যাব সভাপতি বলেন, ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য রোধকল্পে অবশ্যই সকল সংস্থার সমš^য়ে নিয়মিতভাবে মোবাইল কোট পরিচালনা করতে হবে। তিনি জানান, বাংলাদেশে সয়াবিন তেলের চেয়ে পামওয়েল বেশি আমদানি করা হলেও বাজারে সয়াবিন তেলের আধিক্য পরিলক্ষিত হয়, এ অবস্থা নিরসনে দুটো পণ্য আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক কাঠামোর সংষ্কার আবশ্যক। পঁচনশীল পণ্যে সংরক্ষণে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না থাকার এ ধরনের পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায় বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। মতবিনিময় সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ তত্ত¡ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, রমজান মাসে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর যোগসাজশে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কিছু পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রচেষ্ঠা আমাদের পরিলক্ষিত হয় এবং এটা হয়ে থাকে মূলত পণ্যের চাহিদা ও যোগানের ঘাটতির কারণে। তিনি “ভোক্তা অধিকার আইন” এবং “বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য আইন” যথাযথভাবে বাস্তবায়নের উপর জোরারোপ করেন। তিনি অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য “ন্যায্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ সেল” গঠনের প্রস্তাব করেন। তিনি আরোও বলেন, সরকার যদি রমজানের আগে বাজরে কি কি পণ্যেও চাহিদা কত রয়েছে তা নিরূপণ করতে পারে, তাহলে সেটার ভিত্তিতে ব্যবসায়ীরা এলসি’র মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি আমদানি করতে স¶ম হবে এবং পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি সম্ভব হবে না। মুক্ত আলোচনায় ডিসিসিআই পরিচালক আলাউদ্দিন মালিক, এস এম জিল্লুর রহমান, প্রাক্তন ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুস সালাম, এম এস সেকিল চৌধুরী, প্রাক্তন সহ-সভাপতি সিরাজ উদ্দিন মালিক, প্রাক্তন পরিচালক মোঃ শারফুদ্দিন, ডিসিসিআই’র আহবায়ক শামসুন নাহার, বাংলাদেশ জুট গুডস্ এক্সপোটার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি এনামুল হক পাটোয়ারি, বাংলাদেশ পাইকারী ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী সমিতি’র মহাসচিব আবুল হাসেম এবং বাংলাদেশ ডাল ও ছোলাবুট ব্যবসায়ী সমিতি শফিকুর রহমান প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন। আলোচকবৃন্দ চাহিদা মাফিক পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিতকরণের লক্ষে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পণা প্রণয়ন, পণ্য আমদানিতে আন্তর্জাতিক বাজারের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আভ্যন্তরীণ ভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি, ব্যাংকের সুদের হার কমানো এবং স্থল ও সমুদ্র বন্দর হতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনকারী ট্রাক সমূহের জন্য ফেরি ঘাটে আলাদা ফেরির ব্যবস্থা করা প্রভৃতি বিষয়ের উপর সরকারের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের আহবান জানান। আলোচকবৃন্দ জানান, আসন্ন রমজান মাসে ভোজ্যতেল, ডাল, ছোলাবুট এবং চিনি পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ রয়েছে এবং এ পণ্যগুলোর দাম বাড়ার কোন কারণ নেই।
×