ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অভিমত ॥ শেখ হাসিনা ॥ মাদার অব এডুকেশন

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ১৬ এপ্রিল ২০১৮

অভিমত ॥ শেখ হাসিনা ॥ মাদার অব এডুকেশন

সত্যিই অতুলনীয়, কল্পনাতীত। এই তো মাত্র কিছুদিন আগেই ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ বিশ্ববাসী প্রদত্ত খেতাব পেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বনন্দিত এ খেতাবের প্রভাব বিশ্ববাসীর মনজুড়ে থাকতেই দেশের নতুন প্রজন্ম তাদের অন্ধকার ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তার সমাধান খুঁজতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী একত্রিত হয়। অতঃপর তারা সরকারী চাকরিতে বর্তমান কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। এতে সংঘর্ষ বাধে পুলিশের সঙ্গে। টিয়ারশেল ও জলকামানে ছত্রভঙ্গ হয় শিক্ষার্থীরা। লক্ষণীয় যে, শিক্ষার্থীদের অনেকের হাতে বঙ্গবন্ধুর ছবি সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন দেখা যায়। তাদের দাবি- ‘সরকারী চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতির সংস্কার করতে হবে।’ এর মাঝে আহত হয় অসংখ্য আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী। গুজব ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলনকারী একজন ছাত্রের পুলিশের আক্রমণে মৃত্যুর খবর। এ খবর কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে আরও তীব্রতর করে। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘোষণা দেয়া হয় যে, সে ছাত্র মারা যায়নি; সামান্য একটু আঘাত পেয়েছে। আবার গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, সরকার ছাত্রদের এ আন্দোলনকে কোটাবিরোধী আন্দোলন হিসাবে আখ্যায়িত করছে যা আন্দোলনকারীদের দাবিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার একটি চক্রান্ত হিসাবে উল্লেখ করা হয়। ইতোমধ্যে, বেশ কয়েকজন অজ্ঞাতনামা যুবক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের গাড়ি ও বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং বাসার ভেতরের আসবাবপত্র ভাংচুর করে। সংসদে আমাদের বিচক্ষণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপির প্রশ্নের উত্তরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে তার সংশয় ব্যাক্ত করেন। এ প্রেক্ষিতে তিনি পরিসংখ্যান দিয়ে প্রমাণ করেন যে, ইতোমধ্যে শতকরা ৭০ জন মেধাবী ছাত্রছাত্রী সরকারী চাকরি পাচ্ছে। বাকি শতকরা ৩০ জন যারা কোটায় চাকরি পাচ্ছে তারাও মেধাবী। সুতরাং, কোটা সংস্কার এ সমস্যার সমাধান আনবে না, কোটা বাতিলই হবে এ সমস্যার সমাধান। সে ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের ভিন্ন পথ বের করতে হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেন। প্রথম দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখালেও পরে তারা এটিকে উত্তম সমাধান বলে উল্লসিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং শিক্ষক সমিতি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের এ দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে আসছিলেন। লক্ষণীয় যে, প্রধানমন্ত্রীর সংসদে দেয়া বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আন্দোলন যখন স্তিমিত হয়ে আসছিল তখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে টেলিফোনে/স্কাইপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. মামুনকে এ আন্দোলন বেগবান করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। অধ্যাপক মামুন তার আহ্বানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে কথা দেন। এদিকে বিএনপির প্রখ্যাত নেতা রূহুল কবির রিজভী প্রধানমন্ত্রীর কোটা বাতিলের প্রস্তাবকে সংবিধান পরিপন্থী বলে আখ্যায়িত করেন। অন্যদিকে সকল শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর কোটা বাতিলের ঘোষণা এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তাবকে উত্তম এবং ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষা বান্ধব হিসেবে আখ্যায়িত করে। তদুপরি এ পদক্ষেপ সকলকে শিক্ষার প্রতি উৎসাহিত করবে বলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তা আনন্দ ও উল্লাসের সঙ্গে গ্রহণ করে। তারা বিভিন্ন আনন্দঘন বক্তব্য দেয়ার পর প্রধানমন্ত্রীকে ‘মাদার অব এডুকেশন’ হিসাবে আখ্যায়িত করে আনন্দর‌্যালি করে। পরে তারা সকলেই যার যার জায়গায় ফিরে যায়। এর মাঝ দিয়ে তারেক রহমান, রুহুল কবির রিজভী এবং প্রফেসর মামুন নিশ্চয়ই তাদের রাজনৈতিক দৈন্য এবং বুদ্ধিমত্তার সংকীর্ণতা সম্পর্কে জাতিকে প্রকৃত ধারণা দিয়েছেন। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ছাত্র-ছাত্রীদের প্রত্যাশা পূরণে যথার্থ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। যার জন্য তিনি আবারও নতুন খেতাবে ভূষিত হয়েছেন ‘মাদার অব এডুকেশন’ হিসেবে। লেখক : সাবেক উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
×