ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আয়মুখী কর্মসংস্থান বাড়াতে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে : সিপিডি

প্রকাশিত: ০১:৪০, ১৭ এপ্রিল ২০১৮

আয়মুখী কর্মসংস্থান বাড়াতে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে : সিপিডি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আয়মুখী কর্মসংস্থান বাড়াতে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। সংস্থাটির মতে, প্রবৃদ্ধি বাড়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে সরকারী বিনিয়োগ। তবে কর্মসংস্থান ও উৎপাদন বাড়াতে বেসরকারীখাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধি হওয়া প্রয়োজন। মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে চলতি অর্থবছরের বাজেট পর্যালোচনা ও আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনা বিষয়ে বক্তব্য রাখেন সিপিডি’র সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এ সময় সিপিডি'র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সিপিডি ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, সিপিডি’র সিনিয়র রিচার্স এ্যাসোসিয়েট উম্মে সেফা রেজবানা, মোস্তফা আমির সাবিহা, মুনতাসির কামাল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সিপিডি'র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান আগাম বাজেট নিয়ে ‘স্টেট অফ দ্যা বাংলাদশ ইকোনমি ২০১৭-১৮’ এর উপর ভিত্তি করে আসছে ২০১৮-১৯ বাজেটে নানা সুপারিশ উপস্থাপন করেন। ওই সময় দেশের ব্যাংকিংখাতের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েও খোলামেলা কথা বলেন দেবপ্রিয়। তিনি বলেন, ব্যাংকিংখাত এখন এতিমে পরিণত হয়েছে। এই এতিম ব্যাংকে রক্ষকরা নির্যাতন চালাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি ঘোষণা করে। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত মুদ্রানীতি নিজেরাই মানে না বলে অভিযোগ রয়েছে তার। তিনি বলেন, এই খাতকে বাংলাদেশ ব্যাংক বিকলাঙ্গ করে রেখেছে। ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে দেয়া হয় না। দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে শেয়ারবাজার আবারও অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন ড. দেবপ্রিয়। তিনি বলেন, ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ তিন বছর স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে সরকারী বিনিয়োগে ফলে। এতে দেশে আয়হীন কর্মসংস্থান দেখা যাচ্ছে। এতে করে প্রবৃদ্ধির সুফল সাধারণ মানুষের কাছে যাচ্ছে না। আয়মুখী কর্মসংস্থানে ব্যক্তিগত বিনিয়োগ বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি। বাজেট ঘাটতি প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় বলেন, গত বছর ৪২ হাজার কোটি টাকা বাজেট ঘাটতি হবে বলেছিলাম। শেষ পর্যন্ত ৪৩ হাজার কোটি ঘাটতি বাজেট হয়েছিলো। এবার এটা ৫০ হাজার কোটি ছাড়াবে। রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের আশ্রয়, খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, পুষ্টি ও নিরাপত্তার জন্য আসছে বাজেটে এক বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন। যদিও সরকার রোহিঙ্গাদের ভাষানচরে আবাসন নির্মাণসহ নানা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। রোহিঙ্গাদেও মৌলিক সুবিধা দেয়ার পাশাপাশি ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ দিতে হবে। দেবপ্রিয় আরও বলেন, প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে তর্কবিতর্ক হতেই পারে। কিন্তু ফল যা দেখা যাচ্ছে, তাতে মনে হয় দেশে আয়হীন কর্মসংস্থান বাড়ছে। ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ জিডিপির তুলনায় তিন বছর ধরে একই জায়গায় আটকে আছে। মুদ্রানীতিতে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১৬ দশমিক ৫ ছাড়িয়ে ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ হয়েছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন তাহলে এত টাকা গেল কোথায়? ব্যক্তি খাতে ব্যাংক থেকে এত টাকা ঋণ আকারে যাওয়ার পরও কেন বিনিয়োগ বাড়ল না। এই বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে বলে মনে করছে সিপিডি। তিনি বলেন, ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিষয়ে গত বছরের শুরুতে আমরা বলেছিলাম, ২০১৭ সাল ব্যাংকখাতের কেলেঙ্কারির বছর। এবার আমাদের মনে হচ্ছে, এখাতের রক্ষকরাই এখন এই শিশু, এতিমের ওপর অত্যাচার করছেন। যাদের এটা রক্ষা করার কথা ছিল, তারাই বিভিন্ন চাপের মুখে বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছেন। দেবপ্রিয় বলেন, মুদ্রানীতি ও ব্যাংকিং খাতে সংযত থাকার দরকার আছে। একইভাবে মুদ্রা বিনিময় হারে সংযত থাকার দরকার আছে। বিনিময় হারে হয় তো ডলারের দাম বাড়বে। কিন্তু এমনভাবে মজুদ বাড়িয়ে সামাল দিতে হবে, যাতে আমদানি ব্যয় উস্কে না দেয়। সুদের হার, বিনিময় হার, ঋণের প্রবাহ সংযতই রাখতে হবে। এছাড়া প্রবৃদ্ধি বাড়লেও এর সুফল না পাওয়াকে রহস্যজনক বলে মনে করছে সিপিডি। এসব রহস্যের সুরাহা করে যেন আগামী বাজেট প্রণয়ন করা হয়, সে দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি। আগামী বাজেটকে সামনে রেখে সংযত সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা বজায় রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে সংস্থাটির বাজেট প্রস্তাবনায়।
×