ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কেন এই দুর্ঘটনা?

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ১৯ এপ্রিল ২০১৮

কেন এই দুর্ঘটনা?

রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা ঝুঁকিমুক্ত হতে পারেনি এখনও। যে কোন সময় যে কোন স্থানে ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা। অথচ ট্রেনকে গণ্য করা হয় তুলনামূলক নিরাপদ বাহন। কিন্তু ঘন ঘন দুর্ঘটনা ঘটতে থাকলে রেল ভ্রমণে মানুষের নিরাপত্তা বোধে চির ধরতেই পারে। রেল দুর্ঘটনার পরিমাণ কমে এলেও পুরোপুরি দুর্ঘটনামুক্ত করা সম্ভব হয়নি, কোথাও ঘাটতি রয়ে গেছে। দুর্ঘটনার কারণগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়ার কাজটি আর যথাযথভাবে পালন করা হয় না। অধিকাংশ সময়ে দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে চালক, গার্ড, স্টেশন মাস্টারসহ সংশ্লিষ্টদের ভুলের কারণে। মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চালানোর কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে। লাইনের সংস্কার সময়মতো করা হয় কিনা, সে নিয়ে কোন জবাব মেলে না। লাইনে পাথর না থাকা, সিগন্যাল ব্যবস্থার ত্রুটি, লাইন ক্ষয়, সিøপার নষ্ট, লাইন ও সিøপার সংযোগস্থলে লোহার হুক না থাকা ইত্যাকার নানা কারণে দুর্ঘটনা বেড়েছে। বিষয়টি রেল কর্তৃপক্ষের জানা থাকলেও এসব দিকে গুরুত্বসহকারে নজর দেয়ার মতো সময় হয়ত তাদের নেই। অবশ্য রেল কর্তৃপক্ষ অজুহাত তোলেন যে, ট্রেন চালনায় চালক ও গার্ডের স্বল্পতা রয়েছে। কিন্তু কেন এই অবস্থা, সে ব্যাখ্যা মেলে না। আশ্বাস দেন কর্তৃপক্ষ যে, আগামী বছর দুয়েকের মধ্যে প্রশিক্ষিত চালক ও গার্ডরাই ট্রেন চালাবেন। যদি তাই হয়, তবে এই সময়কালে ট্রেন যে ঝুঁকিমুক্ত হয়ে চলাচল করবে তার নিশ্চয়তা মেলে না। জরুরী ভিত্তিতে যেখানে পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী, সেখানে দু’বছর অপেক্ষা বিপজ্জনক বৈকি। ঢাকার কাছে টঙ্গীতে ক’দিন আগে একটি যাত্রীবাহী ট্রেনের লাইনচ্যুতির ঘটনা প্রমাণ করেছে ট্রেন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের অবহেলা কী ধরনের হতে পারে, ঘটনায় চারজন যাত্রী নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। এই একই স্থানে এর আগেও দুর্ঘটনা ঘটেছে। টঙ্গী রেলস্টেশনের কাছে নতুন বাজার এলাকায় ঢাকা-জয়দেবপুর ক্রসিংয়ে ঢাকাগামী জামালপুর কমিউটার ট্রেনটি দুর্ঘটনার শিকার হয়, এ সময় ট্রেনের পেছনের পাঁচটি বগি লাইনচ্যুত হলে প্রাণ বাঁচাতে যাত্রীরা লাফিয়ে নামার সময় হতাহতের ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার সময় ট্রেনের গতি কম থাকায় হতাহতের সংখ্যা বাড়েনি। ক্রসিং এলাকায় প্রায়ই লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে উপবন এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হওয়ায় সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল চলাচল প্রায় ১৯ ঘণ্টা বন্ধ ছিল। দুর্ঘটনার কারণ জানতে তদন্ত কমিটি অতীতের মতো এবারও গঠন করা হয়েছে, কমিটি হয়ত সুপারিশ করবে। কিন্তু সেই সুপারিশ গ্রাহ্যে আনা হবে কিনা, তা জানেন রেল কর্তৃপক্ষই। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কারিগর ত্রুটির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেনি। ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্টেশন মাস্টার ও সঙ্কেত ব্যবস্থার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তার অবহেলায় ঘটনা ঘটেছে। এর আগের দিনই একই স্থানে তিতাস কমিউটার ট্রেন দুর্ঘটনায় পড়ে, বড় ক্ষতি না হলেও কিছু যন্ত্রাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত ছয় মাসে যতগুলো দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার অধিকাংশই স্টেশন লোকেশন ও ক্রসিংগুলোয়। প্রযুক্তির অগ্রগতি রেলকে স্পর্শ করছে না। ম্যানুয়াল ব্যবস্থায় ট্রেন চালাতে গিয়ে এই বিপত্তি ঘটেছে। একেকটি দুর্ঘটনায় মালামাল তো বটেই রেলওয়েরও ক্ষয়ক্ষতি হয় প্রচুর। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতাকে রেল এখনও ধারণ করতে পারেনি। বর্তমানে রেলওয়েতে যে সব চালক, গার্ড ও স্টেশন মাস্টার রয়েছেন, তাদের ৪০ শতাংশই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন। তাই এদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। ট্রেন চালাতে চালক, স্টেশন মাস্টার, গার্ড ও পয়েন্টম্যান পদ খুবই জরুরী। কারণ এরাই মূলত ট্রেন পরিচালনা করেন। এর কোন একটিতে ঘাটতি থাকলেই দুর্ঘটনা ঘটে। দক্ষ জনবল কেন নেই, সে প্রশ্নের জবাব মেলে না। টঙ্গীর দুর্ঘটনা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, রেল ব্যবস্থা এখনও কত পশ্চাতে রয়েছে।
×