ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের শীর্ষ সম্মেলনে শেখ হাসিনা (ভিডিও সহ)

প্রকাশিত: ০০:৪৭, ১৯ এপ্রিল ২০১৮

কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের শীর্ষ সম্মেলনে শেখ হাসিনা  (ভিডিও সহ)

উত্তম চক্রবর্তী, লন্ডন থেকে ॥ সরকার প্রধানদের নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে ২৫তম কমনওয়েলথ সম্মেলন। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের বৃটিশ রাজপ্রাসাদ বাকিংহাম প্যালেসে এ সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বৃটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। স্বাগত বক্তব্যে রাখেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টেরেজা মে। সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ তাঁর ভাষণে কমনওয়েলথকে বিশ্বের অন্যতম মিলিত শক্তি হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, কমনওয়েলথভূক্ত দেশগুলোকে তাদের যৌথ সামুদ্রিক সম্মদ ও বাণিজ্য রক্ষা করতে হবে। আনন্দঘন সময়ে দ্বি-বার্ষিক এ সভায় আমার বাড়িতে আপনাদের স্বাগত। আমার আন্তরিক ইচ্ছা, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য স্থিতিশীলতা এবং এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখবে কমনওয়েলথ। একদিন প্রিন্স ওয়েলস এই গুরুত্বপূর্ণ কাজ এগিয়ে নেবে। যেটি আমার বাবা ১৯৪৯ সালে শুরু করেছিলেন। সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টেরেজা মে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়াসহ কমনওলেথ সদস্যভূক্ত ৫৩টি দেশের দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা এ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। বর্তমানে কমনওয়েলথভূক্ত দেশগুলোর মোট জনসংখ্যা হচ্ছে ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন (২৪০ কোটি)। এই বিপুল সংখ্যেক মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী সরকার প্রধানরা সম্মেলনের বিভিন্ন সেশনে অংশ নিয়ে বৈশ্বিক নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা এবং সমাধানের নানা প্রস্তাব করেন। এছাড়া দু’দিনের এ সম্মেলনে সদস্য দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা সমুদ্র সংরক্ষণ, সাইবার নিরাপত্তা ও বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা করবেন। দুই বছর পর পর কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর কমনওয়েলথ সম্মেলনের (সিএইচজিএম) মূল প্রতিপাদ্য হ”েচ্ছ- ’’টুয়ার্ডস এ কমন ফিউচার’ (অভিন্ন ভবিষ্যত অভিগামী)। লন্ডনের সম্মেলনস্থলের আশেপাশে গড়ে তোলা হয়েছে নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কমনওয়েলথভূক্ত দেশগুলোর সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানদের সম্মেলনস্থলে আগমনকে সামনে রেখে সম্মেলনস্থলের চতুর্দিকে বসানো হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। একমাত্র সম্মেলনে আসার অনুমতিপ্রাপ্ত কার্ড ছাড়া সম্মেলনের আশেপাশে কাউকে ঘেষতেও পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে না। বাকিংহাম প্যালেসের সামনেও বৃটিশ ঐতিহ্যকে ধারণ করে কামান, ঘোড়াসহ নিরাপত্তা বাহিনীদের পাহাড়া দিতে দেখা যায়। সকাল থেকেই বৃটিশ রাজপ্রাসাদ বাকিংহাম প্যালেসে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানরা আসতে শুরু করেন। বলরুমে সকাল ১০টায় রাজ পরিবারের সদস্যদর নিয়ে প্রবেশ করেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। সম্মেলন ঘিরে বাকিংহাম প্যালেসের বাইরে রাজকীয় সাজে সাজানো হয়। সম্মেলনের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন প্রিন্স চার্লস। এরপর সম্মেলনের যৌথ আয়োজক দেশ যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে বক্তব্য দেন। কমনওয়েলথের বিদায়ী চেয়ারম্যান মালটার প্রধানমন্ত্রী জোসেফ মাসকাটের বক্তব্যের পর সম্মেলনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড। এরপর সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে বক্তব্য রাখেন বৃটেনের রানি এলিজাবেথ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাখা হয় সঙ্গীত, নৃত্যসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজন। স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় যুক্তরাজ্যে প্রধানমন্ত্রী টেরেজা মে এবং কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড অংশগ্রহণকারী সরকার প্রধানদের দেয়া সংবর্ধনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বেলা সোয়া ১২টায় কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের সভার প্রথম সেশনেও অংশ নেন তিনি। বেলা সোয়া একটায় প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ডের দেওয়া সংবর্ধনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সম্মেলনে যোগ দেওয়া সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানরা। স্থানীয় সময় বেলা আড়াইটার দিকে কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের সভার দ্বিতীয় সেশন এবং সোয়া চারটায় তৃতীয় পর্বে কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের এক্সিকিউটিভ সেশনে অংশ নেবেন। রাতে বাকিংহাম প্যলেসে বৃটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেবেন। বৈঠকে বসবেন শেখ হাসিনা-মোদী ॥ কমনওয়েলথ সম্মেলনে যুক্তরাজ্যে আসা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হবেন। বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুটি আলোচনায় প্রাধান্য পেতে পারে। বৃহস্পতিবার লন্ডনের ল্যানক্যাস্টার হাউজে স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে তিনটায় এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু, তিস্তার পানিবন্টন চুক্তি, দু’দেশের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতাসহ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক, বিদ্যুত ও জ্বালানি, বাণিজ্য সহযোগিতা, দুই দেশের মধ্যে রেল ও সড়ক যোগাযোগ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। লন্ডনের ব্যস্ত সময়েও অফিসের কাজ করলেন প্রধানমন্ত্রী ॥ কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে লন্ডনে অবস্থান করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৩টি জরুরি ফাইলে ডিজিটাল স্বাক্ষর করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের জানান, লন্ডনে ব্যস্ত সূচির মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী তাঁর অফিসের কাজ ডিজিটালি চালিয়ে যাচ্ছেন এবং নিয়মিত ফাইলে স্বাক্ষর করছেন। কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিতে গত ১৬ তারিখ রাতে লন্ডনে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে ক্রয় সংক্রান্ত কমিটি, জ্বালানি বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের ১৩টি ফাইলে (ই-ফাইল) সই করেছেন। প্রেস সচিব জানান, লন্ডনে অবস্থানের সময় গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলো পাঠানোর জন্য নিজের দফতরকে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন।
×