ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাঁচ বাংলাদেশিসহ নিহত ১৪০ শান্তিরক্ষীকে স্মরণ করল জাতিসংঘ

প্রকাশিত: ১৮:৫৭, ২০ এপ্রিল ২০১৮

পাঁচ বাংলাদেশিসহ নিহত ১৪০ শান্তিরক্ষীকে স্মরণ করল জাতিসংঘ

অনলাইন ডেস্ক ॥ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত শান্তিরক্ষী ও বেসামরিক কর্মীদের স্মরণ করা হয়েছে। সম্প্রতি নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে আয়োজিত এক স্মরণ সভায় তাদের স্মরণ করা হয়। স্মরণের এই তালিকায় স্থান পায় ২০১৬ সালের পহেলা জুলাই থেকে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর জাতিসংঘের বিভিন্ন শান্তিরক্ষা মিশনে আত্মোৎসর্গকারী বাংলাদেশের ৫ জনসহ বিশ্বের ৪২টি দেশের ১৪০ শান্তিরক্ষী ও বেসমারিক কর্মীর নাম। নিহতদের মধ্যে ১২৩ জন সামরিক বাহিনী, ৩ জন পুলিশ এবং ১৪ জন বেসামরিক সদস্য। এর মধ্যে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীগণ হলেন- ২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবরে মালি মিশনে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সিপাহী মো. আবুল বাশার, ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারিতে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক মিশনে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক মো. আব্দুর রহিম, ২০১৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মালি মিশনে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত সিপাহী মো. মনোয়ার হোসেন, ল্যান্স কর্পোরাল মো. জাকিরুল আলম সরকার ও সার্জেন্ট মো. আলতাফ হোসেন। জাতিসংঘ ট্রাস্টিশীপ কাউন্সিলে অনুষ্ঠিত এই স্মরণ সভায় অংশ নেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন এবং স্থায়ী মিশনের ডিফেন্স অ্যাডভাইজর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খান ফিরোজ আহমেদ। এছাড়া জাতিসংঘে কর্মরত বাংলাদেশ সেনা, নৌ, বিমান ও পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তাগণও অংশ নেন। কর্তব্যরত অবস্থায় আত্মোৎসর্গকারী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীসহ বেসামরিক নাগরিকগণের পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে আয়োজিত এই স্মরণ সভা শুরু করা হয় ভায়োলিনের করুন সুর পরিবেশনের মাধ্যমে। মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের পর এক মিনিট নিরবতায় নিহতদের স্মরণ করেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি মিরোস্লাভ লাইচ্যাক ও নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি গুস্তাভো মেজা-কোয়াড্রা। জাতিসংঘ মহাসচিব আত্মোদানকারী জাতিসংঘের সকল শান্তিরক্ষী ও বেসামরিক কর্মীর প্রতি গভীর শোক এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সহনশীলতা ও উদারতার প্রতি শ্রদ্ধা এবং সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেন। সমবেত সুধিমন্ডলীর উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, 'জাতিসংঘের নীল পতাকা বিশ্বের অসহায় মানুষের শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নত ভবিষ্যতের সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে আশার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। অসহায় এই মানুষেরা তাদেরই উপর নির্ভর করে যারা জাতিসংঘে সেবা দেওয়ার জন্য নিজেদের নিবেদিত করেছেন। আজ, আমরা আত্মদানকারী সহকর্মীদের স্মরণ করছি এবং তাদের উদারতা ও অবদানের প্রতি স্বীকৃতি জানাচ্ছি'। মহাসচিব আরও বলেন, 'আমাদের শান্তিরক্ষী, মানবিক সহায়তাদানকারী এবং অন্যান্য সহকর্মীদের সাহস ও প্রতিশ্রুতি ব্যতীত, আমরা প্রতিদিন যা করছি, তা অর্জন করতে পারতাম না। বিশেষ করে কঠিন ও বিপজ্জনক পরিবেশে'। জাতিসংঘ মহাসচিব উল্লেখ করেন, 'এটা আমাকে ক্ষুব্ধ করে যখন দেখি খুব সামান্য কোনো কারণে আমাদের উপর আক্রমণ হয় যা কোনো কোনো ক্ষেত্রে যুদ্ধাপরাধের শামিল'। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীকর্মীদের উপর আক্রমণকারীদের প্রতিহত করতে এবং শান্তিরক্ষা মিশনসমূহের নিরাপত্তা উন্নত করতে নিজের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির কথা ব্যক্ত করেন মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ। জাতিসংঘ নিযুক্ত সদস্য রাষ্ট্রসমূহের স্থায়ী প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কূটনৈতিক, সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তা এবং জাতিসংঘের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানটিতে উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ একটি অন্যতম বৃহৎ শান্তিরক্ষী সরবরাহকারী দেশ। ১৯৮৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত শান্তিরক্ষা মিশনে কর্তব্যরত অবস্থায় বাংলাদেশের ১৪৩ জন শান্তিরক্ষী শাহাদৎ বরণ করেছেন।
×