ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দেশ আমার দোষ আমার ॥ রাজীবের ফেসবুক থেকে

প্রকাশিত: ০০:১১, ২০ এপ্রিল ২০১৮

দেশ আমার দোষ আমার ॥ রাজীবের ফেসবুক থেকে

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল ॥ রাজীব তার ফেসবুকে লিখেছিলেন “লাইফ মানেইতো জীবন, আর জীবনতো কিছু সময়ের জন্য একটি মোমবাতির সাথে তুলনা করা যায়। একটি মোমবাতি প্রথমে জ্বালিয়ে দিলে তা আস্তে আস্তে জ্বলে শেষ হয়ে নিভে যায়। তেমনি আমিও হয়তো একদিন শেষ হয়ে যাব...জ্বলছি নিভে যাব বলে” মৃত্যুর ঠিক দুই মাস আগে ১৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭ টা ১০ মিনিটের সময় তার ফেসবুক আইডিতে এই লেখাটি পোস্ট করেছেন। কে জানতো তার এই লেখাটি সাথে তার জীবনের সাথে মিলে যাবে। রাজীবের হোসেন নামের তার এই ফেসবুক আইডি থেকে নিজের জীবন নিয়ে হতাশার কথা লিখেছেন। লিখেছেন, তার মৃত বাবা-মাকে নিয়েও। সর্ব শেষ ১ এপ্রিল ৭টা ২৪ মিনিটের সময় রাজীব তার ফেসবুক আইডি থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। দেশ আমার দোষ আমার, ঢাকার রাস্তায় বেপরোয়া যানচলাচল, যেখানে ইচ্ছে সেখানেই হাত উচিয়ে বাস থামাই। আশ পাশে তাকালে নাক ছিটকাই, মনে মনে চরম বিরক্ত লাগে। তবুও ময়লা ফেলার সময় হুস থাকেনা। দেশটা আমাদের হলে দোষটা কাদের ? দেশ আমার দোষ আমার। একটি সচেতনমূলক পোস্ট ছিল তার। অথচ সেই বেপরোয়া সড়ক দানবের রেষারেষির শিকার হয়ে অকালে তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। রাজীব গত ৩ এপ্রিল দুপুর ১টার সময় রাজধানীর কাওরান বাজারের সার্ক ফোয়ারার কাছে বিআরটিসির একটি দ্বিতল বাসের পেছনের দরাজায় দাঁড়িয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। এমন সময় স্বজন পরিবহনের একটি বাস বিআরটিসির বাসটির গা ঘেঁষে অতিক্রম করছিল, এসময় দুই বাসের ফাঁকে পরে তার ডান হাত পরে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঘটনার পর রাজীবের নিথর দেহ রাস্তাই পরে ছিল। কেউ এগিয়ে আসেনি। প্রায় দুই ঘন্টা পর বিকাল তিনটার সময় তিন ব্যক্তি তাকে উদ্ধার করে পান্থপথের শমরিত হাসপাতালে নিয়ে যান। এর পরের দিন তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৪ দিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে হেরে যান তিনি। ১৮ এপ্রিল সকাল সাওে ১০ টার সময় বাউফলের দাশপাড়া ইউনিয়নের ১নম্বও ওয়ার্ডে নানা মোকলেসুর রহমান লাল মিয়া ও নানু পিয়ারা বেগমের কবরের পাশে তাকে শায়িত করা হয়। রাজীবের গ্রামের বাড়ি বাউফলের সূর্যমনি ইউনিয়নের ইন্দ্রোকুল হলেও ছোট বেলা থেকে তিনি নানা বাড়িতে থেকে বড় হয়েছেন। রাজিব হোসেন মাত্র আট বছর বয়সে মা ও ১৩ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে ছোট দুই ভাই মেহেদি ও আবদুল্লাহকে নিয়ে নতুন করে জীবনযুদ্ধে নেমেছিলেন । তার এই জীবন সংগ্রামে কখনও খালার বাসায় থেকে, কখনও টিউশনি করে, কখনও বা পার্টটাইম কাজ করে নিজে পড়াশোনা করেছিলেন। শুক্রবার জুম্মাবাদ রাজীবের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে নানা বাড়িতে দোয়া-মিলাদ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিপুল সংখ্যক লোক উপস্থিত হয়েছেন দোয়া-মিলাদে। এর আগে জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ ও বাউফলের এমপি আসম ফিরোজ রাজীবের কবর জিয়ারত করেন। রাজিবের খালা খাদিজা বেগম লিপি জানান, শনিবার তারা ঢাকায় চলে যাবেন। তাদের সাথে যাবেন রাজীবের ছোটি দুই ভাই হাফেজ মেহেদী হাসান ও আবদুল্লাহ। সন্তান ¯েœহে তারা দুই ভাই খালাদের কাছেই থাকবেন। পড়া লেখা করবেন। বড় হয়ে রাজীবের স্বপ্ন পূরণ করবেন।
×