ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতুর চতুর্থ স্প্যান বসছে ৩০ এপ্রিল

প্রকাশিত: ০৫:১০, ২১ এপ্রিল ২০১৮

পদ্মা সেতুর চতুর্থ স্প্যান বসছে ৩০ এপ্রিল

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ পদ্মা সেতুর ৪র্থ স্প্যান বসানোর তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ এপ্রিল। এই টার্গেট নিয়েই কাজ চলছে। ৪র্থ এই স্প্যান ‘৭ই’ এখন প্রস্তুত করা হচ্ছে। রঙের কাজ শেষ পর্যায়ে। ঘষামাজা করে একবারেই ঝকঝকে করা হয়েছে। সোনালি রঙের ওপর দেয়া হচ্ছে ধূসর রং। কুমারভোগে পদ্মা সেতুর বিশেষায়িত ইয়ার্ডের রং শেডে চলছে এই ফিনিশিং রঙের কাজ। এই কালার শপ থেকে ২৫ এপ্রিল প্রায় ৩২ শ’ টন ওজনের ১৫০ মিটার দীর্ঘ এই স্প্যানটি বের করে ক্রেনের লাইনে করে (ট্রেন লাইনের ন্যায়) পদ্মা তীরের জিডির কাছে নেয়া হবে। এখানেই অপেক্ষা করছে ৩৬শ’ টন ধারণ ক্ষমতার ভাসমান ক্রেনবাহী জাহাজ। এই ক্রেনের সঙ্গে বাঁধা হবে। এর পরদিন ২৬ এপ্রিল এই ক্রেন পাঁজা কোলে করে নিয়ে জাহাজ যাবে জাজিরা প্রান্তের দিকে। ২৭ এপ্রিল স্প্যানটি গন্তব্যে পৌঁছার কথা রয়েছে। এদিকে সেভাবেই সব তৈরি করা হচ্ছে। ৪১ নম্বর খুঁটি এখন পুরোপুরি প্রস্তুত এই স্প্যান বহনে। ওদিকে স্প্যানের একাংশের ভার বহনের জন্য তৈরি বিশেষ অবকাঠামোটি ‘লিফটিং ফ্রেম’ এখন ৩৯ নম্বর খুঁটি থেকে সরিয়ে ৪০ নম্বর খুঁটিতে আনার প্রক্রিয়া চলছে। এদিকে পদ্মা সেতুর ৪২টি খুঁটির মধ্যে ২৯টিতেই পাইল স্থাপনের কাজ হয়েছে, চলমান রয়েছে বা সম্পন্ন হয়েছে। তবে ১৩টি খুঁটিতে পাইলের কাজ এখনও শুরু হয়নি। এগুলো হচ্ছে- ৮, ১০, ১১, ১৫ ও ২৪ থেকে টানা ৩২। এই ১৩ খুঁটিরই নতুন ডিজাইন অনুযায়ী তলদেশে নরম কাদা মাটির কারণে ৭টি করে পাইল বসানো হবে। তবে এই ১৩টি খুঁটিতেও দ্রুততম সময়ের মধ্যেই পাইল বসানো শুরু হবে বলে দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন। নতুন ডিজাইন অনুযায়ী ২২টি খুঁটিতে এক বেশি অর্থাৎ ৭টি করে পাইল বসছে। সবগুলোর ডিজাইন হয়ে গেছে। তবে এখনও ১১টি খুঁটির নক্সা প্রদান করা হয়নি। তবে এর কাজ চলছে। কয়েকদিনের মধ্যেই আরও ২টির নক্সা অনুমোদন হচ্ছে। আর বাকি ৯টির নক্সাও দ্রুততম সময়ের মধ্যে কর্তৃপক্ষের হাতে আসছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নক্সার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে যাচ্ছে। সদ্য পাওয়া পদ্মা সেতুর চূড়ান্ত নক্সা দুটি খুঁটিরই কাজ শুরু হয়েছে। সেতুর মাওয়া প্রান্তের ৯ এবং ১২ নম্বর খুঁটির নক্সায় একটি করে পাইলের বটম সেকশন বসেছে। বৈচিত্র্যময় পদ্মার তলদেশের গভীরে নরম মাটি থাকার কারণে ৩৩, ৩৪, ৩৫ ও ৩৬ নম্বর খুঁটির ডিজাইনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। পরিবর্তিত ডিজাইনে এই চার খুঁটিতে সাতটি করে পাইল বসছে। এর মধ্যে অন্যান্য খুঁটির মতো রেকিং ছয়টি পাইল এবং মাঝে ভার্টিক্যাল অর্থাৎ সরাসরি সোজা আরও একটি অতিরিক্ত পাইল স্থাপন হচ্ছে। তবে দৈর্ঘ্য কমিয়ে ১২৮ থেকে ১১৪ মিটার করা হবে। এছাড়া ১৫, ১৯, ২৪, ২৫ ও ২৮ নম্বর খুঁটিতেও একই ডিজাইনে ৭টি করে পাইল বসবে। তলদেশের নরম মাটি, সেই একই কারণে পদ্মা সেতুর ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ২৬, ২৭, ২৯, ৩০, ৩১ ও ৩২ নম্বর খুঁটিতেই একই ডিজাইনে ৭টি করে পাইল বসবে। এইগুলোর ল্যান্থ নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। পদ্মা সেতুর স্প্যান বসানোর পাশপাশি স্প্যানের ওপারে স্লাভ তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। কুমারভোগের বিশেষায়িত ওয়ার্কশপের উত্তর প্রান্তে চলছে এই কাজ। স্প্যানের নিচের তলার রেলওয়ে ডেক্স স্লাভ সাড়ে ৪শ’ তৈরি হয়ে গেছে। এছাড়া এখনও ট্রায়ালে রয়েছে রোডওয়ে ডেক্স স্লাভ যার ওপর দিয়ে বাস চলবে। ট্রায়াল রিপোর্ট পাওয়ার পরই শীঘ্রই এই রোডওয়ে ডেক্স স্লাভ তৈরির কাজও শুরু হবে বলে দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন। এদিকে বর্ষার শৈশবকাল শুরু হয়ে গেছে। প্রতি জোয়ারেই পদ্মায় পানি বাড়ছে। বর্ষার ভরা যৌবন আসছে জুনে। তরে পদ্মা বেশি উত্তাল হওয়ার আগেই অনেক কাজ এগিয়ে নেয়া প্রচেষ্টা চলছে। নদী শাসন নিয়ে জাজিরা প্রান্তে ব্যবস্থা বেশি। কারণ এই প্রান্তে নদী ভাঙ্গন প্রবণতা রয়েছে। তবে মাওয়া প্রান্ত এখন পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে বলে জানান কর্তৃপক্ষ।
×