ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শাহাব উদ্দিন মাহমুদ

সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকার শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২১ এপ্রিল ২০১৮

সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকার শেখ হাসিনা

(গতকালের পর) দীর্ঘ ৪৬ বছর পরে হলেও জাতিসংঘের মতো বিশ্বসংস্থার এ সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এর ফলে বাঙালীর ইতিহাসের মহানায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশ সৃষ্টির প্রণোদনাময়ী ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ বিশ্বব্যাপী মানবজাতির মূল্যবান ও ঐতিহ্যপূর্ণ সম্পদ হিসেবে স্বীকৃত ও গৃহীত হলো। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) শ্রেণী থেকে বের হওয়ার যোগ্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর ফলে জাতিসংঘের বিবেচনায় উন্নয়নশীল দেশের পথে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলো। স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার তিনটি সূচকের মধ্যে সব কটিই পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালের শুরু থেকে ২০১৮ পর্যন্ত তিন বছর নিবিড় পর্যবেক্ষণের পর জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতিপত্র দিয়েছে গত ২৩ মার্চ। বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হলো এই অর্জন। এর আগে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া জাতিসংঘ ঘোষিত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো (এমডিজি) ভালভাবে অর্জনের স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ এখন এক বিস্ময়। গত জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘ইনক্লুসিভ ইকোনমিক ইনডেক্স’ অনুযায়ী ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। এটি উন্নয়নের পথে আরেকটি মাইলফলক। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৪ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে অন্তর্ভুক্ত হবে। এসব অর্জনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের আস্থা বেড়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসকে সম্মান জানানোর জন্য ২৬ মার্চকে বাংলাদেশ দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে ওয়াশিংটন ডিসির মেয়র মুরিয়েল বাওসার। বাংলাদেশের ৪৮তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চিঠি তারই প্রমাণ বহন করে। চিঠিতে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক, সহনশীল, বহুত্ববাদী এবং মধ্যপন্থী জাতির দেশ হিসেবে বিশ্বের কাছে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছে মার্কিন স্বরাষ্ট্র দফতর। বাংলাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য বিশ্বের বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনাকে বিভিন্ন ডিগ্রী এবং পুরস্কার প্রদান করেন। ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রায় ৪০টি পুরস্কার, পদক, ডক্টরেট ও সম্মাননা অর্জন করেছেন। এর মধ্যে জাতিসংঘের বেশকটি পুরস্কার রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন ইউনিভার্সিটি, ব্রিজপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়, স্কটল্যান্ডের এ্যাবারটে বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের বিশ্বভারতী এবং ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্রাসেলসের বিশ্ববিখ্যাত ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়, রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্টেট ইউনিভার্সিটি অব পিটার্সবার্গ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করেন। এছাড়া ফ্রান্সের ডাওফি বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডিপ্লোমা প্রদান করে। সামাজিক কর্মকা-, শান্তি ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য শেখ হাসিনাকে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা সম্মানিত করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সুদীর্ঘ ২৫ বছরের গৃহযুদ্ধ অবসানের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯৮ সালে ইউনেস্কো তাঁকে ‘হুপে-বোয়ানি’ (Houphouet-Boigny) শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসিকতা ও দূরদর্শিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের রানডলপ ম্যাকন উইমেন্স কলেজ ২০০০ সালের ৯ এপ্রিল মর্যাদাসূচক ‘Pearl S. Buck ’৯৯’ পুরস্কারে ভূষিত করে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ক্ষুধার বিরুদ্ধে আন্দোলনে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শেখ হাসিনাকে সম্মানজনক ‘সেরেস’ (CERES) মেডেল প্রদান করে। সর্বভারতীয় শান্তিসংঘ শেখ হাসিনাকে ১৯৯৮ সালে ‘মাদার টেরেসা’ পদক প্রদান করে। ১৯৯৮ সালে আন্তর্জাতিক রোটারি ফাউন্ডেশন তাঁকে Paul Haris ফেলোশিপ প্রদান করে। পশ্চিমবঙ্গ সর্বভারতীয় কংগ্রেস ১৯৯৭ সালে তাঁকে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু স্মৃতি পদক প্রদান করে। আন্তর্জাতিক লায়ন্স ক্লাব কর্তৃক ১৯৯৬-১৯৯৭ সালে তিনি ‘Medal of Distinction’ পদক ও ১৯৯৬-১৯৯৭ সালে ‘Head of State’ পদক লাভ করেন। ২০০৯ সালে ভারতের ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল ট্রাস্ট শান্তি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অসামান্য ভূমিকা পালনের জন্য শেখ হাসিনাকে ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কারে ভূষিত করেন। এছাড়া তিনি ব্রিটেনের গ্লোবাল ডাইভারসিটি পুরস্কার এবং ২ বার সাউথ সাউথ পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০১৪ সালে ইউনেসকো তাঁকে ‘শান্তিরবৃক্ষ’ এবং ২০১৫ সালে উইমেন ইন পার্লামেন্টস গ্লোবাল ফোরাম নারীর ক্ষমতায়নের জন্য তাঁকে রিজিওনাল লিডারশীপ পুরস্কার এবং গ্লোবাল সাউথ-সাউথ ডেভেলপমেন্ট এক্সপো-২০১৪ ভিশনারি পুরস্কারে ভূষিত করে। বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে অব্যাহত সমর্থন, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতা অর্জন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে অবদানের জন্য আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৫ সালে তাঁকে সম্মাননা সনদ প্রদান করে। জাতিসংঘ পরিবেশ উন্নয়ন কর্মসূচী দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিবেশ এবং টেকসই উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য লিডারশীপ ক্যাটাগরিতে শেখ হাসিনাকে তাদের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ-২০১৫’ পুরস্কারে ভূষিত করেছে। এছাড়া, টেকসই ডিজিটাল কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য International Telecommunication Union (ITU) শেখ হাসিনাকে ICTs in Sustainable Development Award-২০১৫ প্রদান করেন। সর্বশেষ জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ান ও এজেন্ট অব চেঞ্জ এ্যাডওয়ার্ড পুরস্কারে ভূষিত হন শেখ হাসিনা। শিক্ষাবিদ ও গবেষকরা মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জাতিসংঘসহ বিশ্বের খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর দেয়া এ ধরনের পুরস্কার গোটা জাতির জন্য গর্বের বিষয়। সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনী নিরীহ রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর যে জাতিগত নিধন চালিয়ে যাচ্ছে তা স্মরণকালের ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। নির্যাতিত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যখন বাংলাদেশ অভিমুখী, তখন মানবতার নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সীমান্ত মজলুম রোহিঙ্গাদের জন্য খুলে দেয়ার নির্দেশ দেন। প্রায় ৮ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে আশ্রয় নেয় বাংলাদেশের টেকনাফ, উখিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায়। শেখ হাসিনা এগিয়ে যান আর্তমানবতার সেবায় এবং তাদের পাশে দাঁড়ান, তাদের দুঃখ-কষ্ট দেখে কাঁদেন। তিনি ঘোষণা দেন; ‘আমরা রোহিঙ্গা ভাইবোনদের সঙ্গে খাবার ভাগাভাগি করে খাব।’ রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন যাতে না হয় সে বিষয়ে আমলাদের সমন্বয়ে উচ্চপর্যয়ের কমিটি করা হয়েছে। ত্রাণ বিতরণে সেনাবাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে। প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বার্থে নিজ বিচক্ষণতায় বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে শান্তি, উদার ও মানবিক রাষ্ট্রে অধিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যম রোহিঙ্গা প্রশ্নে শেখ হাসিনার ভূমিকার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছে। বিপর্যস্ত রোহিঙ্গারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আশ্রয় খুঁজে পাওয়ায় ব্রিটিশ মিডিয়া শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব হিউমেনিটি’ উপাধিতে ভূষিত করে। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের সবচেয়ে দামী ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসাডর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা, যিনি এখন আন্তর্জাতিক মহলে ‘মানবতার জননী’ নামে পরিচিত। আরব আমিরাতের বহুল প্রচারিত দৈনিক খালিজ টাইমস শেখ হাসিনাকে ‘পূর্ব দেশের নতুন তারকা অভিধায় ভূষিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত সাময়িকী ফোর্বস শেখ হাসিনকে বিশ্বের ত্রিশজন ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপ্রধানের তালিকায় স্থান দিয়েছে। পিপলস এ্যান্ড পলিটিকস নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা শেখ হাসিনাকে বিশ্বের তৃতীয় সৎ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কখনও কখনও দেশ দিয়ে মানুষ পরিচিত, আবার উল্টো মানুষ বা নেতা দিয়ে দেশ পরিচিতি লাভ করে। যেমনটি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পূর্ব পর্যন্ত অনেক দেশই বাংলাদেশকে ‘মুজিব কান্ট্রি’ নামে চিনত। শেখ মুজিব তখন বাংলাদেশের ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসাডর। বর্তমানে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ দেশের মানুষ অনেকটা শেখ হাসিনাকে দিয়ে বিশ্বের অনেক দেশেই পরিচিত হচ্ছে। দেশে ও দেশের বাইরে শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনায়কসুলভ কিছু অর্জনের কারণে শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশের ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসাডর। বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনীতিবিদদের মাঝে সবচেয়ে ঘটনা বহুল জীবন শেখ হাসিনার। ২০ বারেরও বেশি এ্যাসাসিনেশনের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া এবং ভয়াবহ এ্যাসাসিনেশনের ঝুঁকি নিয়ে জীবন যাপন করতে হচ্ছে তাকে। বঙ্গবন্ধুুর মতই শেখ হাসিনাও তার সমসাময়িক রাজনীতিবিদদের পেছনে ফেলে একক লিডারশীপে চলে গেছেন বেশ আগেই। শত বাধা-বিপত্তি এবং হত্যার হুমকিসহ নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠন এবং সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষার অবিচল সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণ অর্জন করেছে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি। বাংলাদেশ পেয়েছে মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা। শেখ হাসিনার অসীম সাহস দৃঢতার ফলেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। (সমাপ্ত) লেখক : শিক্ষাবিদ
×