ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমারকে দেয়া রোহিঙ্গাতালিকা ত্রুটিপূর্ণ ও অসম্পূর্ণ ॥ নেপিডো

প্রকাশিত: ০৯:০৩, ২১ এপ্রিল ২০১৮

মিয়ানমারকে দেয়া রোহিঙ্গাতালিকা ত্রুটিপূর্ণ ও অসম্পূর্ণ ॥ নেপিডো

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে পাঠানো তালিকাকে ত্রুটিপূর্ণ ও অসম্পূর্ণ বলে অভিযোগ করেছে মিয়ানমার। প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে দুই দেশের চুক্তি অনুযায়ী ফরম পূরণ করে পাঠানো হয়নি বলে মিয়ানমারের অভিযোগ। বাংলাদেশের দেয়া তালিকা থেকে যাচাইয়ের পর মাত্র ৭৫০ জনকে রাখাইনে ফিরিয়ে নিতে রাজি দেশটি। শুক্রবার মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী উইন মিয়াতের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল গত ১০-১২ এপ্রিল বাংলাদেশ সফর করে। বাংলাদেশ থেকে ফিরে গিয়ে বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের নেপিডোয় কূটনীতিক ও সাংবাদিকদের সামনে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রতিনিধি দল। সে প্রেক্ষিতে মিয়ানমার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বিবৃতি দেয়। বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমার স্টেট কাউন্সিলর আউং সান সুচির দফতর বিষয়কমন্ত্রী কিয়া তিন্ত সোয়ে নেপিডোয় অবস্থানরত বিদেশী কূটনীতিক ও সাংবাদিকদের রাখাইনের স্থানচ্যুত নাগরিকদের বিষয়ে বিস্তারিত অভিহিত করেছেন। কিয়া তিন্ত সোয়ে বলেন, গত ২৩ নবেম্বর মিয়ানমারের স্থানচ্যুত নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়। এছাড়া মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরকালে দুই দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীদের মধ্যে এক বৈঠক হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ ৮০৩২ মিয়ানমার নাগিরকের একটি তালিকা দেয়। সেই তালিকা মিয়ানমার দ্রুত যাচাই-বাছাই শুরু করে। তবে দুই দেশের ফিজিক্যাল এ্যারেজমেন্ট অনুযায়ী যে ফরম তৈরি করার কথা ছিল, সেই অনুযায়ী এই ফরম তৈরি হয়নি। এছাড়া বাংলাদেশ মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষের কাছে যে ফরম পাঠিয়েছে সেই ফরমে সই, ফিঙ্গার প্রিন্ট, যথাযথ ছবি সংযুক্ত নেই। সে কারণে তালিকা যাছাই-বাছাই কঠিন হয়ে পড়েছে। মিয়ানমার বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে, যথাযথভাবে নির্ধারিত ফরম পূরণ করে পাঠানোর জন্য। তিনি আরও বলেন, মিয়ানমার ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের তালিকা থেকে যাচাই বাছাইয়ের পর রাখাইনের ৭৫০ মুসলিম নাগরিকের নাম বাছাই করেছে। তবে এর বাইরেও মিয়ানমার এককভাবে ৫০৮ হিন্দু নাগরিককে যাচাই-বাছাই করেছে। প্রত্যাবাসন শুরু হলে প্রথম ব্যাচেই মুসলিম নাগরিকদের সঙ্গে এই ৫০৮ হিন্দু নাগরিককে ফিরিয়ে নেবে মিয়ানমার। আউং সান সুচির দফতর বিষয়ক মন্ত্রী কিয়া তিন্ত সোয়ে বলেন, মিয়ানমার দ্রুত তার নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে চায়। সে কারণে মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী উইন মিয়াতের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে এসেছে। এই প্রতিনিধি দল কক্সবাজার সফর করে রাখাইন থেকে স্থানচ্যুত নাগরিকদের মিয়ানমারে ফিরে আসার জন্য উৎসাহিত করেছে। কিয়া তিন্ত সোয়ে অভিযোগ করেন, মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল কক্সবাজার সফরকালে রাখাইন থেকে যাওয়া অনেকের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে রাখাইনের স্থানচ্যুত নাগরিকরা প্রতিনিধি দলের সদস্যদের জানিয়েছেন, প্রত্যাবাসন চুক্তির বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। এমনকি তাদের প্রত্যাবাসন ফরমও দেয়া হয়নি। ঢাকায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর বৈঠকে ফরমের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। মিয়ানমার জানিয়েছে রাখাইনের স্থানচ্যুতদের জন্য পাঠানো ফরমটি যথাযথভাবে তৈরি করা হয়নি। এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছেন, মিয়ানমারের নিকট শীঘ্রই যথাযথ ফরম পাঠানো হবে। এছাড়া মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল অনানুষ্ঠানিকভাবে জানতে পেরেছে, বাংলাদেশের পাঠানো ৮০৩২ জনের তালিকার নাগরিকদের ফরম সেখানকার কমিউনিটি নেতাদের দিয়ে পূরণ করা হয়েছে। এই ফরমে যাদের নাম রয়েছে ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই তারা অবহিত নন। মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী উইন মিয়াত কূটনীতিকদের জানান, তারা কক্সবাজারে রাখাইনে স্থানচ্যুতদের সঙ্গে আলাপ করেছেন। সেই আলাপে জানতে পেরেছেন, তারা অনেকেই এই ফরম পূরণ করেননি। অনেকেই এই ফরমের বিষয়ে জানেনও না। উল্লেখ্য, মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী উইন মিয়াত আইয়ের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসে। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা গত ১২ এপ্রিল ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে মিয়ানমারের মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, এখানে আসা নাগরিকদের দ্রুত ফিরিয়ে নেয়া হবে। আমরা সে অনুযায়ী কাজ করছি। বাংলাদেশ সফরকালে কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা পরিচালিত একটি কমিউনিটি সেন্টারে প্রায় ৫০ রোহিঙ্গার সঙ্গে সাক্ষাত করেন মিয়ানমারের মন্ত্রী। সে সময় মিয়ানমারের প্রতি রোহিঙ্গাদের ভীতি ও আস্থাহীনতার কথা স্বীকার করে উইন মিয়াত অতীত ভুলে তাদের নিজ ভূমিতে ফেরার প্রস্তুতি নিতে বলেছিলেন। রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন করে গড়ে তোলা গ্রামে হাসপাতাল ও স্কুল করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। উল্লেখ্য, রাখাইনে সেনা নির্যাতন থেকে রেহাই পেতে গত বছরের আগস্ট থেকে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার পর এই প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের কোন মন্ত্রী তাদের দেখতে আসেন। তবে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের ফিরে গিয়ে তিনি ফরম ত্রুটিপূর্ণ ও অসম্পূর্ণ বলে অভিযোগ করলেন।
×