ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতে ধর্ষণ বেড়েই চলেছে ॥ এনসিআরবি পরিসংখ্যান

প্রকাশিত: ১৯:৫৯, ২১ এপ্রিল ২০১৮

ভারতে ধর্ষণ বেড়েই চলেছে ॥ এনসিআরবি  পরিসংখ্যান

অনলাইন ডেস্ক ॥ না, নির্ভয়া কাণ্ড থেকে কোনও শিক্ষা নিতে পারেনি কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য প্রশাসনগুলি। শিক্ষা নিতে পারেনি পুলিশ, এমনকী নিম্ন আদালতগুলিও। ২০১২ সালের নির্ভয়া কাণ্ডের পর গত ৫ বছরে দেশে ধর্ষণের ঘটনা কমা তো দূরের কথাই, বরং তা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। বিভিন্ন আদালতের তথ্য বলছে, ২০১২ থেকে ২০১৬, এই ৫ বছরে ভারতে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে ৬০ শতাংশ। আর ওই সব ঘটনায় শাস্তির হার আগেও যা ছিল, তেমনই রয়ে গিয়েছে। আইন কঠোরতর হয়ে ওঠার পরেও! আরও উদ্বেগজনক চিত্র পাওয়া গিয়েছে শিশু ধর্ষণের ক্ষেত্রে। ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি)’-র পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৬ সালে দেশে ধর্ষণের যে মোট ৩৯ হাজার অভিযোগ দায়ের হয়েছিল, তার ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রেই ধর্ষণের শিকার হয়েছিল শিশুরা। সে ক্ষেত্রে ৬ বছরের কম বয়সী শিসুরাও রেহাই পায়নি। ৬ থেকে ১২ বছরের শিশুরা ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪-৫%। ১২ থেকে ১৬ বছরের কিশোরীরা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন প্রায় ১৮ শতাংশ ক্ষেত্রে। যদিও ২০১২ সালের নির্ভয়া কাণ্ডের পর সরকার নড়েচড়ে বসেছে বলেই মনে হয়েছিল। কঠোরতর করা হয়েছিল ধর্ষণ আইন। তাতে জোড়া হয়েছিল মৃত্যুদণ্ডও। ধর্ষণ মামলাগুলির শুনানি দ্রুততর করতে দেশে ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও দেশে ধর্ষণের ঘটনার ঊর্ধ্বগতি রুখতে পারেনি পুলিশ। বরং সেগুলির অভিযোগ গ্রহণ ও তদন্তের ক্ষেত্রে পুলিশের গাফিলতি, অপদার্থতা স্পষ্টতর হয়ে উঠেছে। নির্ভয়া কাণ্ডের পর গত ৫ বছরে দেশে শ’য়ে শ’য়ে ফাস্ট ট্র্যাক আদালত চালু হলেও ধর্ষণের মামলাগুলির দ্রুত নিষ্পত্তির স্বপ্ন অধরাই থেকে গিয়েছে। এনসিআরবি-র পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০০৬ থেকে ২০১২ পর্যন্ত দেশে ধর্ষণের ঘটনা ততটা না বাড়লেও, ২০১২ সালের পর থেকেই তা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। বড় লাফটা শুরু হয় ২০১৩ সালে। ২০১২-য় যে সংখ্যাটা ছিল ২৫ হাজারের কাছাকাছি, এক বছরের মধ্যেই (২০১৩) তা ৩৫ হাজার পেরিয়ে যায়। আর ২০১৬-য় তা পৌঁছে যায় ৪০ হাজারের কাছাকাছি। তবে ধর্ষণের শিকার বেশি হচ্ছেন ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে থাকা কিশোরী ও যুবতীরা। সেই হার ৪০ শতাংশেরও বেশি। এনসিআরবি-র তথ্য এও বলছে, ২০১২ সালে ধর্ষণের যতগুলি অভিযোগ দায়ের হয়েছিল তার ২৫ শতাংশ ক্ষেত্রে শাস্তি হয়েছিল অপরাধীদের। নির্ভয়া কাণ্ডের জেরে ধর্ষণ আইন কঠোরতর ও অসংখ্য ফাস্ট ট্রযাক আদালত চালুর ৫ বছর পর, ২০১৬ সালেও ধর্ষণের ঘটনায় শাস্তির হার সেই ২৫ শতাংশই থেকে গিয়েছে। এনসিআরবি’র পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, এ ব্যাপারে আদালতের ছবিটাও আশাব্যঞ্জক নয়। ২০১২ সালে দেশের আদালতগুলিতে দীর্ঘ দিন ধরে আটকে থাকা মামলার সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ। আর ৫ বছর পর, ২০১৬-য় সেই সংখ্যাটা পৌঁছেছে ১ লক্ষ ৩৩ হাজারে। ও দিকে, বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ক্রাই’ জানিয়েছে, ভারতে প্রতি ১৫ মিনিটে একটি শিশুকে যৌন নিগ্রহ করা হচ্ছে। ওই শিশুঅধিকার রক্ষা সংক্রান্ত সংস্থার রিপোর্ট বলছে, নাবালকদের বিরুদ্ধে অপরাধ দেশে গত ১০ বছরে ৫০০ শতাংশ বেড়েছে। আর ওই ধরনের অপরাধের ৫০ শতাংশ পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশে নথিভুক্ত। ১৫ শতাংশ শুধু উত্তরপ্রদেশেই। পশ্চিমবঙ্গে শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তীর মতে, শিশু নিগ্রহ আগেও হত। কিন্তু বিষয়গুলি সামনে আসত না। বাবা-মা, অভিভাবক সামাজিক লজ্জা-অপমানের ভয়ে বিষয়গুলিকে লুকিয়ে রাখতেন। এখন দিন বদলেছে। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×