অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ফার্স্ট ট্র্যাকের প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার তেলভিত্তিক ১২টি বিদ্যুৎপ্রকল্পের অগ্রগতি মোটেও সন্তোষজনক নয়। নির্ধারিত সময়ের আড়াই মাস পর উৎপাদনে এসেছে ডিজেলচালিত ৫টি প্রকল্পের মাত্র ১টি। পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোচ্ছে না ফার্নেস অয়েলভিত্তিক ৭ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজও।
নির্বাচনের বছরে লোডশেডিং এড়াতে জরুরি ভিত্তিতে অনুমোদন দেয়া এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির জন্য জমি অধিগ্রহণসহ আমলাতান্ত্রিক নানা জটিলতাকে দায়ী করলেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী।
গরম আসতে না আসতেই রাজধানীসহ দেশজুড়ে ফিরে এসেছে লোডশেডিং। অথচ নির্বাচন সামনে রেখে পরিস্থিতি সহনীয় রাখতে গত বছর নানা সমালোচনার মধ্যেও অনুমোদন দেয়া হয় বেসরকারি খাতে ব্যয়বহুল ১২টি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎপ্রকল্পের।
কুমিল্লা, যশোর ও কেরানীগঞ্জে ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ডিজেলভিত্তিক ৫ বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসার কথা ছিল ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। নির্ধারিত সময়ের আড়াই মাস পর ১০০ মেগাওয়াটের ১টি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাকিগুলোর বিদ্যুৎ মে মাসের আগে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম। প্রত্যাশিত অগ্রগতি নেই ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ফার্নেস অয়েলভিত্তিক ৭ বিদ্যুৎকেন্দ্রেরও। মে মাসের শুরুতে উৎপাদনে আসার কথা থাকলেও গাজীপুর, আশুগঞ্জ, চট্টগ্রাম, বগুড়া, জামালপুর, লবণছড়া ও চাঁদপুরে নির্মাণাধীন এসব প্রকল্পের অগ্রগতি ৪৫ থেকে ৭৫ শতাংশ।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, 'ফার্নেস ওয়েলেরগুলো জুনের মধ্যে না হলেও কোন কোনটা হয়তো জুলাইতে যাবে বা সর্বোচ্চ আগস্টের দিকে যাবে।'
কিন্তু সরকারের অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পগুলোর কেন এই ধীরগতি? বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ দায়ী করলেন, প্রকল্পের জন্য জমি পেতে দেরি আর আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে। তিনি বলেন, 'আমার সচিব পারেন নাই, পিডিবি পারে নাই তারপরে আমার কাছে এসেছে। সব জায়গায় বাধাগ্রস্ত হয়েছে।'
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, বৃহৎ বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর মতো জরুরি ভিত্তিতে নেয়া এসব প্রকল্পও যথাসময়ে বাস্তবায়নে ব্যর্থ হওয়ায় এবারও পিছু ছাড়বে না লোডশেডিং। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, 'লোগশেডিং থাকবেই। এখনও তো গরম পড়ে নাই সেভাবে। চাহিদা যতোখানি হওয়ার কথা তারচেয়ে আরও বাড়বে। তখন লোডশেডিংও বাড়বে।'
উৎপাদন ব্যয় বেশি হওয়ার পরও গত বছর বেশকিছু তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প অনুমোদন দেয়ার পেছনে সরকারের যুক্তি ছিল, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হবে দ্রুতগতিতে। ফলে মিটবে গ্রীষ্মের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা। কিন্তু এরই মধ্যে দেশের নানা জায়গায় লোডশেডিং দেখা দিলেও সরকারের অগ্রাধিকারমূলক এসব প্রকল্প এগোচ্ছে ঢিমেতালে।
