ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ছে বাইসাইকেল রফতানি

প্রকাশিত: ০৭:৪০, ২২ এপ্রিল ২০১৮

বাড়ছে বাইসাইকেল রফতানি

রফতানিতে বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় খাত বাইসাইকেল। এক্ষেত্রে দেশের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপ। পোশাকের পর অপর সম্ভাবনাময় খাত হয়ে উঠেছে সাইকেল শিল্প। আমদানিকারক থেকে ক্রমেই এ শিল্পে দেশ হয়ে উঠেছে রফতানিকারক। সম্ভাবনা ও দেশী-বিদেশী চাহিদার ওপর ভর করে বৃহৎ পরিসরে পরিবেশবান্ধব সাইকেল তৈরি করছে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান সমূহ। গত কয়েক বছরে দেশ থেকে বাইসাইকেল রফতানি বেড়েছে। ফলে বাড়ছে এ খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আয়। মজার বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে সাইকেল রফতানি হলেও দেশের বাজারে যে চাহিদা রয়েছে, তার বেশিরভাগই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা পেলে এ খাত আরও বিকাশ হবে। পাশাপাশি এ খাতে বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থান তৈরি হবে। পরিবেশবান্ধব বাহন হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাইসাইকেল। যানজটে সহজে চলতে অনেকেরই পছন্দ বাহারি রঙের এই বাহন। দিনে দিনে বড় হচ্ছে সাইকেলের বাজার। চাহিদা বাড়ছে বিশ্বব্যাপী। কিছুদিন আগেও দেশের সাইকেলের পুরোটাই ছিল আমদানি করা। তবে সময়ের পরিবর্তনে এখন চাহিদার বড় অংশই মিলছে দেশীয় কারখানা থেকে। সাইকেল প্রস্তুতে এগিয়ে আসছে অনেকেই। ২০১৬ সালে ইউরোপের দেশগুলোতে বাইসাইকেল রফতানি কমে গেলেও ২০১৭ সাল থেকে তা আবার বাড়তে শুরু করে। বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোতে সাইকেল রফতানিতে বাংলাদেশ তৃতীয়। এর আগে আছে তাইওয়ান ও কম্বোডিয়া। ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের ফেবব্রুয়ারি পর্যন্ত ইউরোপে বাইসাইকেল রফতানি বেড়েছে নয় শতাংশ। ২০১৬ সালে ইউরোপে বাংলাদেশ সাত লাখ ৩১ হাজার সাইকেল রফতানি করেছে। ইউরোপীয় পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্যমতে, এটা ২০১৫ সালের চেয়ে এক শতাংশ কম। ওই বছর এই সংখ্যা ছিল সাত লাখ ৩৮ হাজার। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের তৈরি করা বাইসাইকেল বিদেশে রফতানি হচ্ছে। এরমধ্যে মেঘনা গ্রুপ, জার্মান বাংলা, আলিতা, নর্থবেঙ্গলসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান উল্লেখযোগ্য। ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে তাইওয়ানের কোম্পানি আলিতা বাংলাদেশ লিমিটেড স্বল্প পরিসরে বাংলাদেশ থেকে বাইসাইকেল রফতানি শুরু“করে। পরে এই ধারায় যুক্ত হয় মেঘনা গ্রুপ। ২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে আমদানিকৃত বাইসাইকেলের ১১ শতাংশই বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে। এছাড়া ওই দেশগুলোর আমদানিকৃত বাইসাইকেলের ২৪ শতাংশ সরবরাহ করেছে তাইওয়ান, কম্বোডিয়া সরবরাহ করেছে ১৮ শতাংশ আর ফিলিপিন্স সরবরাহ করেছে ১০ শতাংশ। সেই হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে বাইসাইকেল রফতানিতে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। বাংলাদেশে উৎপাদিত বাইসাইকেল মূলত যুক্তরাজ্য, জার্মানি, হল্যান্ড, ইতালি, গ্রিস, আয়ারল্যান্ড, বেলজিয়াম ডেনমার্ক, অস্ট্রিয়া, পর্তুগালে রফতানি হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের তথ্য মতে, ২০১৬ সালে সংস্থাটির ২৮টি দেশ মোট ১ কোটি ৭০ লাখ বাইসাইকেল আমদানি করেছে। এর মধ্যে ৫৮ শতাংশই সদস্য দেশগুলো থেকে আমদানি করেছে ওই ২৮ দেশ। আর বাকি ৪২ শতাংশ আমদানি করেছে ইউনিয়নের বাইরে থেকে। এছাড়া এই সময়ে ওই ২৮ দেশ ১ কোটি ১০ লাখ বাইসাইকেল রফতানি করেছে। এদিকে সাইকেল রফতানিতে বাংলাদেশের বড় বাজার ইউরোপের দেশগুলো। প্রতি মাসে দেশ থেকে গড়ে ৮০-৮৫ কোটি টাকার সাইকেল রফতানি হচ্ছে। বাংলাদেশের শ্রমবাজার সস্তা হওয়ায় তাইওয়ানের কোম্পানি আলিতা বাংলাদেশ লিমিটেড স্বল্প পরিসরে সাইকেল রফতানি শুরু করে। পরে এ ধারায় যুক্ত হয় মেঘনা গ্রুপ ও আরএফএল গ্রুপ। এখন আরও কিছু প্রতিষ্ঠানও সাইকেল উৎপাদন করছে। এর মধ্যে এইস বাইসাইকেল লিমিটেড, ট্রান্সওয়ার্ল্ড বাইসাইকেল কোম্পানি, সিরাজ বাইসাইকেল লিমিটেড, জার্মানি-বাংলাদেশ বাইসাইকেল, নর্থ বেঙ্গল সাইকেল ইন্ডাস্ট্রিজসহ অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে মাউন্টেন বাইক, সিটি বাইক, ফ্রি স্টাইল, ট্র্যাকিং, ফোল্ডিং, বিচ ক্রুসার ও কিডস বাইক জাতীয় সাইকেল তৈরি হচ্ছে। এর একটি অংশ দেশের বাজারে ও বাকি অংশ রফতানি হচ্ছে। বর্তমানে ফ্রিস্টাইল, মাউন্টেন ট্র্যাকিং, ফোল্ডিং, চপার, রোড রেসিং, টেন্ডমেড ধরনের বাইসাইকেল রফতানি হচ্ছে। এসব সাইকেলের কিছু যন্ত্রাংশ আমদানি করা হলেও বেশির ভাগ যন্ত্রাংশই দেশে তৈরি হচ্ছে। বিশেষত চাকা, টিউব, হুইল, প্যাডেল, হাতল, বিয়ারিং, আসন তৈরি করছে দেশীয় এসব প্রতিষ্ঠান।
×