ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁয় অপরিকল্পিত ক্রস ড্যাম

তলিয়ে যাচ্ছে এক হাজার একর জমির বোরো

প্রকাশিত: ০৪:১২, ২৩ এপ্রিল ২০১৮

তলিয়ে যাচ্ছে এক হাজার একর জমির বোরো

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ রানীনগর উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সীমানায় অবস্থিত শত বছরের ঐতিহ্যবাহী রক্তদহ বিল। এই রক্তদহ বিলের প্রধান শাখা খালে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্মিত অপরিকল্পিত দুইটি ক্রসড্যামের কারণে এবছরও তলিয়ে যাচ্ছে বিলের মধ্যে লাগানো প্রায় এক হাজার একর জমির পাকা-আধাপাকা বোরো ধান। এই অবস্থা আরও চরম আকার ধারণ করেছে দুইটি ক্রসড্রাম নির্মাণের পর থেকে। এ বিষয়টি নিয়ে কৃষকরা নানাভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে এলেও কোন ফল হয়নি। তাই কষ্টে অর্জিত স্বপ্নের সোনালি ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকের মাথায় হাত উঠেছে। কৃষকরা এখন ধান ঘরে তুলতে পারবে কিনা এই চিন্তা তাদের পেয়ে বসেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, কয়েক দিনের বৃষ্টির পানি কয়েকটি শাখা খাল দিয়ে এসে জমা হয়েছে রক্তদহ বিলে। কিন্তু বিলে জমা হওয়া পানি আত্রাই নদীতে যেতে পারছে না। নিষ্কাশন পথের রানীনগর উপজেলা অংশে শাখা খালে দুইটি স্থানে ক্রসড্যাম থাকার কারণে পানি আটকা পড়েছে। জানা গেছে, বৃষ্টির পানি ধরে রেখে আপদকালীন সেচ দেয়ার জন্য ২০১৪ সালে রক্তদহ বিলের উজানে সান্তাহার ইউনিয়নের দমদমা গ্রামের পাশে এবং ভাটির দিকে রানীনগর উপজেলায় তিলাবাদুরী ও আকনা বাঁশবাড়িয়া নামক দুই স্থানে অপরিকল্পিতভাবে দু’টি ক্রসড্যাম নির্মাণ করে নওগাঁ বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এতে করে বোরো আবাদ মৌসুমের শেষ দিকে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। গত কয়েক দিনে জেলার রানীনগর উপজেলাসহ আশপাশের এলাকায় বৃষ্টি হয়। সেই বর্ষণের পানি উজান থেকে নেমে বিভিন্ন খাল দিয়ে জমতে থাকে রক্তদহ বিল ও বিলের চার পাশের বোরোর মাঠে। কিন্তু পানি স্বাভাবিকভাবে নিষ্কাশন হতে পারছে না। এর কারণে রক্তদহ বিলের রানীনগর উপজেলার বোদলা, পালসা, তেবাড়িয়া, বিশিয়া এবং আদমদীঘি উপজেলা সদর ইউনিয়নের করজবাড়ি, দক্ষিণ গনিপুর, কদমা, সান্তাহার ইউনিয়নের সান্দিড়া, দমদমা, কাশিপুর, ছাতনি, ঢেকড়াসহ অন্তত ১৫ গ্রামের প্রায় এক হাজার একর জমির পাকা আধাপাকা বোরো ধান বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়ে হুমকির মুখের পড়েছে। বোদলা, পালশা, তেবাড়িয়া গ্রামের হুরমত আলী, ইয়াকুব আলীসহ কয়েকজন কৃষক জানান, অপরিকল্পিত ক্রসড্যামের কারণেই গত চার বছর ধরে আমাদের এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে আমরা আদমদীঘি ও রানীনগর উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছি। কিন্তু কোন প্রতিকার পাইনি। রানীনগর উপজেলা কৃষি অফিসার এসএম গোলাম সারওয়ার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, রক্তদহ বিলের ভাটিতে বরেন্দ্র প্রকল্পের অপরিকল্পিত ক্রসড্যামের কারণে জলাবদ্ধতায় উঠতি বোরো ধান জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। মোহনগঞ্জে শ্রমিক সঙ্কট নিজস্ব সংবাদদাতা মোহনগঞ্জ, নেত্রকোনা থেকে জানান, শ্রমিক সঙ্কটে ব্যাহত হচ্ছে মোহনগঞ্জের হাওড়গুলোতে বোরো ধান কাটা। সাতশত টাকা রোজে শ্রমিক মিললেও বৃষ্টির কারণে ধান ঘরে তুলতে পারছেন না কৃষক। আর তাই বাধ্য হয়ে জমিতেই কমমূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে ধান। সরেজমিন হাওড় ঘুরে দেখা গেছে, অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হলেও রয়েছে পর্যাপ্ত শ্রমিকের অভাব। এ কারণে ধানের দামও কিছুটা কম। বাধ্য হয়ে কৃষক কমমূল্যে জমিতেই ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। তেঁতুলিয়ার কৃষক আবু চান জানান, গত বছর এমনিতেই ধান ঘরে তুলতে পারিনি। এ বছর ভাল ফলন হলেও শ্রমিক সঙ্কটের কারণে পাকা ধান কেটে ঘরে তোলার আগে জমিতেই বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। গাগলাজুরের কৃষক আবুল মিয়া জানান, বর্তমানে ৬৫০ টাকা দরে ধান বিক্রি হচ্ছে। একজন শ্রমিককে দিতে হচ্ছে রোজ ৭শ’ টাকা। আমরা লোকসানের মধ্যে আছি।
×