ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রিপল থ্রি

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ২৩ এপ্রিল ২০১৮

 ট্রিপল থ্রি

জনগণের দোরগোড়ায় নাগরিকসেবা পৌঁছে যাওয়ার পর জীবনে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। পশ্চাৎপদ সব ধ্যান-ধারণা এখন আমূল বদলে যাওয়ার পথে। ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে আরেক প্রক্রিয়া চালু হলো। দেশের প্রতিটি গ্রামের মানুষ এখন সরকারী সেবা পাবে সহজেই। দেশের প্রতিটি মানুষের জীবনের উন্নয়নে পরিবর্তন আনা, দারিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত করা, সবাইকে শিক্ষা দেয়া, সবার আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রগুলো ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে। মানুষের ভোগান্তি হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়েছে অনেক। কোথাও বেড়াতে যাবেন- প্রয়োজন সে অঞ্চলের হোটেল-মোটেল ভাড়া করা, কোন্্ নম্বর থেকে যাবতীয় তথ্য পেতে হবে, কী ভাবে পাবেন, জানা নেই। সে সমস্যার সহজ সমাধান করে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই)। চালু করেছে নতুন কল সেন্টার। ‘সরকারী তথ্য ও সেবা সবসময়’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে এই সেন্টার চালু হয়েছে। এ সেবার আওতায় দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে ৩৩৩ নম্বরে কল করে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক সেবা পাওয়া যাবে। সরকারী বিভিন্ন তথ্য, সেবা, কর্মকর্তাদের তথ্য, বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার প্রতিকার এবং পর্যটন ও জেলা সম্পর্কিত যে কোন সময় দেশ ও দেশের বাইরে থেকে এই নম্বরে ফোন করে জেনে নেয়ার এই সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে জনগণের প্রতি সরকারে দায়বদ্ধতা পূরণের এক উজ্জ্বল উদাহরণ বৈকি। দেশের মানুষকে আর সেবার জন্য সরকারী অফিসে আসা-যাওয়া করতে হবে না। ঘরে বসেই পেয়ে যাবে সেবার সকল তথ্য। ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল উদ্দেশ্য ছিল সরকারী সেবা প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষও যাতে পেতে পারে, সেজন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে ডিজিটাল সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। ইন্টারনেটকে সহজলভ্য করা হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে এই ‘ট্রিপল-থ্রি’ চালু হয়েছে। এটা অত্যন্ত প্রশংসনীয় এবং জনগুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী পশ্চাৎপদতা থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগও পাচ্ছে। তাদের জীবনে নতুন এক ভুবন তৈরি হলো। এই দেশ ও দেশের সরকার এবং জনগণের মধ্যকার সম্পর্ক, কাজকর্ম এবং নিজস্ব অধিকার প্রাপ্তির দরজাগুলো খুলে যাচ্ছে ক্রমান্বয়ে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সেবাপ্রাপ্তির এই সুবর্ণ সুযোগ মানুষকে অগ্রগতির পথে নিয়ে যাচ্ছে। এক বছর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে কল সেন্টারটি। পরীক্ষামূলক পর্যায়ে গত মার্চ মাস পর্যন্ত ছয় লাখের বেশি নাগরিক এ সেবায় কল করেছেন। এর মধ্যে চার হাজারের বেশি ছিল বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার বিষয়ে অভিযোগ। যার মধ্যে ছিল খাদ্যে ভেজাল বিষয়ে ৫২১টি, বাল্যবিয়ে নিয়ে ২৯২টি, মাদক বিক্রির অভিযোগ ১৬১টি। প্রাপ্ত এসব অভিযোগ তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়। এতে সাধারণ জনগণের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। এটা তো বাস্তব যে, এখনও দেশের অধিকাংশ মানুষ নানা কারণে তথ্য প্রাপ্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত। বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে নানা কারণে সঠিক প্রতিকার পায় তারা। এই সেবা তাদের জীবনে এক আলোকবর্তিকা অবশ্যই। ফোন করার কল রেট ‘টোল ফ্রি’। দেশের মানুষ যেমন, তেমনি প্রবাসীরাও সুবিধা নিতে পারবেন। রাতদিন ২৪ ঘণ্টা চালু থাকায় যে কোন সময় অভিযোগ জানানো যাবে। দেশের ৬৪ জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে এই কল সেন্টার চালু করা হয়েছে। নকল ও ভেজালপণ্য ক্রয়ে প্রতারিত হওয়া, বাল্যবিয়ে সংক্রান্ত, সরকারী অফিসে বিড়ম্বনায় পড়া, এলাকার রাস্তাঘাট নষ্ট থেকে আরম্ভ করে যে কোন সামাজিক সমস্যা জানিয়ে ফোন করা যাবে। দুর্যোগকালীন সহায়তাও মিলবে। ফোনের পাশাপাশি এসএমএসের মাধ্যমেও তথ্য দেয়া যাবে। তবে সংশয় জাগে, অদক্ষ জনবল, অভিযোগ সমাধানে কর্তৃপক্ষের আগ্রহ না থাকা ইত্যাকার কারণে একসময় না অকার্যকর হয়ে পড়ে। তবে এই সেবা জনগণের মধ্যে নতুন প্রণোদনা জোগাবে অবশ্যই।
×