ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ষার আগেই ১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিরাপদ স্থানে সরানো হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ২৩ এপ্রিল ২০১৮

বর্ষার আগেই ১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিরাপদ স্থানে সরানো হচ্ছে

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ বর্ষা মৌসুম আসন্ন। রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে যেসব রোহিঙ্গা উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসতি গড়েছে তাদের মধ্যে ১ লাখ নারী-পুরুষ ও শিশুকে অন্যত্র স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইউএনএইচসিআর-এর তত্ত্বাবধানে এ কাজ সম্পন্ন করতে জেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছে। অতিবর্ষণে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটলে প্রাণহানি হতে পারে এমন আশঙ্কায় কুতুপালং ক্যাম্পের পশ্চিমে মধুরছড়ার পার্শ্ববর্তী এলাকায় ইতোমধ্যে কিছু রোহিঙ্গাকে সরানো হয়েছে। এছাড়া টেকনাফ ক্যাম্পে আশ্রিতদের সরিয়ে নিতে নিরাপদ স্থান খোঁজার কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রবিউল হাসান। নিরাপদ স্থানে নেয়ার লক্ষ্যে টেকনাফের উনচিপ্রাং, চাকমারকুল রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। গত ২১ এপ্রিল পরিদর্শনকালে জাতিসংঘ উদ্বাস্তু বিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর), আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, বর্ষা যতই এগিয়ে আসছে রোহিঙ্গাদের মাঝেও আতঙ্ক বাড়ছে। উখিয়া টেকনাফের বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকায় লাখ লাখ রোহিঙ্গা বসতি গড়ে তুলেছে। এর পাশাপাশি মাটি ভরাট করে তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন সড়ক উপসড়ক। গত কদিন আগে সামান্য বৃষ্টিতেই বিভিন্ন রাস্তায় ধস নামে। ওইসব সড়কগুলোর অবস্থা এখন বিপজ্জনক। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা পড়েছে বিপাকে। উল্লেখ্য, উখিযা টেকনাফের বার রোহিঙ্গা শিবিরের মধ্যে ১০ শিবিরের ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রবিউল হাসান আরও জানিয়েছেন, ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের বর্ষার আগেই নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হবে। রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে সহস্রাধিক মাঝি ॥ রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তায় ১ হাজার ৬০৯ জন মাঝি কাজ করছে। রোহিঙ্গা যুবকদের মধ্য থেকে বাছাই করে কমিউনিটি লিডার হিসেবে তাদের মনোনয়ন করা হয়েছে। ত্রাণ বিতরণসহ নানা শৃঙ্খলার কাজে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনকে এসব মাঝি সহযোগিতা করে। স্বেচ্ছাসেবীর গেঞ্জি পরে গলায় ‘মাঝি কার্ড’ ঝুলিয়ে তারা নির্ধারিত কাজ করে যাচ্ছে। একজন মাঝির তত্ত্বাবধানে সহস্রাধিক রোহিঙ্গা পরিবার থাকে। রোহিঙ্গা সঙ্কটের শুরুতে দায়িত্ব পালনকারী লে. কর্নেল শাহ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান জানিয়েছেন, আমরা রোহিঙ্গাদের একটা ডাটাবেজ সংরক্ষণ করছি। ওই মাঝিদের সিস্টেমটা কাজের সুবিধার্থে গড়ে তুলেছি। প্রতিটি ব্লক অনুযায়ী মাঝিদের ছবিসহ তালিকা আমরা সংরক্ষণ করছি। শিবিরে বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি ॥ উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে এইডস, হাম, ডিপথেরিয়া, মেনিনজাইটিস, গুরুতর জন্ডিস, হেমোরেজিক ফিভার, পানিবাহিত ডায়েরিয়া, রক্ত আমাশয়সহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বেড়েই চলেছে। সরকারী-বেসরকারী সংস্থার চিকিৎসা সেবা প্রদানে গাফেলতি নেই। টেকনাফ ও উখিয়ার ১৫৫টি স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র রয়েছে। বিজিপির চাঁদা দাবি ॥ রাখাইন রাজ্যের বুচিদং দক্ষিণাঞ্চলের রোহিঙ্গারা বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)’র চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে বলে ওপারের সূত্রগুলো জানিয়েছে। মিনগিছিসহ আশপাশের এলাকার রোহিঙ্গাদের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ এবং গ্রাম থেকে বিতাড়নের ভয় দেখিয়ে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সদস্যরা- অভিযোগ ওপারের সূত্র থেকে পাওয়া। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাচ্ছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ টিম ॥ আগামী ২৮ এপ্রিল উখিয়া-টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাচ্ছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রতিনিধি টিম। এ উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে প্রশাসন। গত বছরের আগস্টের শেষ সপ্তাহে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা বিরোধী অভিযান শুরু করলে নতুন পুরনো মিলে ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ঘটনার ৮ মাসের মাথায় এ প্রথম নিরাপত্তা পরিষদের পর্যবেক্ষক টিম রোহিঙ্গাদের দেখতে যাচ্ছে।
×