ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

হাত হারানো সুমি যন্ত্রণায় ছটফট করছে

প্রকাশিত: ০২:০৭, ২৩ এপ্রিল ২০১৮

 হাত হারানো সুমি যন্ত্রণায় ছটফট করছে

অনলাইন রিপোর্টার ॥ ছোট্ট শিশু সুমির দুই হাত ব্যান্ডেজে ঢাকা। সারা মুখে এখনও অজানা আতঙ্ক। হাসপাতালের বেডে যন্ত্রণায় ছটফট করছে সে। পাশেই বসে মেয়ের যন্ত্রণা অনুভব করার চেষ্টা করছিলেন মা মরিয়ম বেগম। মায়ের করুণ চাহনি যেন সেটাই বলে দিচ্ছিল। পাগল প্রায় মা প্রিয় সন্তানের কাছে গিয়ে বিড় বিড় করে সান্তনার বাণী শোনানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছেন। সোমবার দুপুরে সুমির দুটো হাতই ছিল ব্যান্ডেজে মোড়ানো। মুখমন্ডলে রক্তের ছাপ স্পষ্ট। অভাবী পরিবারের এই শিশুটির চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করছে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ ডা. রেজাউল আলম জুয়েল বলেন, ট্রাকের ধাক্কায় শিশুটির বাম হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ডান হাতের অবস্থা তেমনটা ভালো না। তালুর চামড়া উঠে গেছে। চামড়া আগের অবস্থায় ফিরে আনতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তালুর চামড়ার জন্য তিন দিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে তার মাথার আঘাতটা গুরুতর নয়। হাসপাতাল থেকে রক্তের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাবতীয় ওষুধপত্র সরবরাহ করা হচ্ছে। এরপরও অর্থের প্রয়োজন দেখা দিলে আমরা চিকিৎসকরা আছি। শিশুটির সুচিকিৎসার জন্য অর্থের কোনো সমস্যা হবে না। রবিবার বিকেলে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের শেরুয়া বটতলা এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় শিশু সুমির বাম হাত। এ ঘটনায় সোমবার সকালে ট্রাক চালকের নামে ওই শিশুর চাচা বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রথমে শুনেছিলাম বাসের ধাক্কায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে রাতে প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে সেটি বাস নয় ট্রাক ছিল। এখন পর্যন্ত সেই ঘাতক ট্রাকসহ চালক পলাতক রয়েছে। তাকে ধরতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। আহত শিশু সুমির বাড়ি বগুড়ার শেরপুর উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের ফুলতলা দক্ষিণপাড়ায় গ্রামে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, টিনের ঘেরা ও ছাউনি বিশিষ্ট একটি বাড়ি। জায়গাটিও নিজস্ব নয়। সেটি খাস সম্পত্তি। সুমির বাবা দুলাল খা আগে ভ্যান চালাতেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ঘরের সঙ্গে আরেকটি ঝুপড়ি ঘর তুলে মুদি দোকান দিয়েছেন। সেই দোকানে দিনে বড়জোড় ১০০ টাকা বেচা-কেনা হয়। মা মরিয়ম অন্যত্র কাজ করেন। কিন্তু শারীরিক অবস্থার কারণে সেটিও ভালোভাবে করতে পারেন না। তাদের সংসার রয়েছে তিনটি মেয়ে সন্তান। অভাবের সংসারে অপুষ্টিতে সবার শরীর প্রায় হাড্ডিসার। বড় মেয়ে দোলেনার বছর দুয়েক আগে বিয়ে হয়। কিন্তু পাগলের মত হাবভাব হওয়ায় সংসার বেশি দিন টিকেনি। এখনও ঢাকায় কোনো এক ব্যক্তির বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন। তার ছোট সুখিয়া খাতুন (৯)। স্থানীয় একটি স্কুলে মাঝেমধ্যে পড়তে যায়। কিন্তু ঠিকমত কথাও বলতে পারে না। সবার ছোট সুমি। গ্রামের ব্র্যাক স্কুলে শিশু শ্রেণিতে পড়ে সে। শিশু সুমির চাচি জুলেখা বেগম জানান, ওদের সংসারে খুব অভাব। অনেক সময় পুরোদিন না খেয়ে কাটাতে হয়। আবার অনেক দিন দু-এক বেলা খাবার খায় ওরা। তাই কোথাও কোনো দাওয়াতের কথা শুনলে ছোট দুই শিশুকে নিয়ে কখনও বাবা আবার কখনও মা সেখানে ছুটে যান সামান্য খাবারের আশায়। আলতাফুন্নেছা, চায়নাসহ একাধিক প্রতিবেশী জানান, খেয়ে না খেয়ে দিন চলে ওদের। বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. নির্মলেন্দু চৌধুরী জানান, শিশুটির একটি হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, আরেক হাতের আঙ্গুল ভেঙে গেছে। এখানে ভর্তি করার সময় শিশুটির জ্ঞান ছিল না। বর্তমানে তার জ্ঞান ফিরেছে।
×