ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাহিয়ান দ্বীপ

আর্সেনাল-ওয়েঙ্গারের বিচ্ছেদ

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ২৫ এপ্রিল ২০১৮

আর্সেনাল-ওয়েঙ্গারের বিচ্ছেদ

অবশেষে বিদায় বললেন আর্সেন ওয়েঙ্গার। চলতি মৌসুম শেষেই আর্সেনালের দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন এই ফরাসি কোচ। এর ফলে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের অন্যতম সেরা এই ক্লাবটির সঙ্গে প্রায় ২২ বছরের দীর্ঘ এক সম্পর্কের ইতি টানতে চলেছেন তিনি। আর্সেনালের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বর্ণাঢ্য কোচিং ক্যারিয়ারকে বিদায় বলে দিলেন তিনি। গত শুক্রবার আর্সেনালের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে পদত্যাগের কথা জানান ওয়েঙ্গার। এ প্রসঙ্গে ৬৮ বছর বয়সী এই কোচ বলেন, ‘ক্লাবের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা শেষে আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি মনে করি, কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর এটাই সেরা সময় এবং এটা মৌসুম শেষেই। এতগুলো স্মরণীয় বছর ক্লাবকে সেবা করার সুযোগ পেয়ে আমি কৃতজ্ঞ। প্রতিশ্রুতি ও সততার সঙ্গে আমি ক্লাবের দায়িত্ব পালন করেছি। সব আর্সেনালপ্রেমীকে বলছি, ক্লাবের যতœ নেবেন। আপনাদের জন্য আমার ভালবাসা ও সমর্থন আজীবন থাকবে।’ ১৯৯৬ সালে আর্সেনালের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ওয়েঙ্গার। এরপর দেখেছেন ক্লাবটির উত্থান-পতন। সাক্ষী হয়েছেন সাফল্য-ব্যর্থতার। তার হাত ধরে এসেছে শিরোপা। কাটিয়েছে অনেক শিরোপাহীন মৌসুমও। বলা চলে, আর্সেনালের সমার্থক হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তার অধীনে তিনটি ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগসহ সাতটি এফএ কাপ জিতেছে আর্সেনাল। এ ছাড়া ওয়েঙ্গারের হাত ধরে আর্সেনালের ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে উজ্জ্বল অধ্যায়টা রচিত হয়েছিল ২০০৩-০৪ মৌসুমে। প্রিমিয়ার লীগের সেই মৌসুমে কোন ম্যাচ হারেনি আর্সেনাল। সে সময় আর্সেনালকে ‘ইনভিনসিবল’ লীগ শিরোপা জেতান ওয়েঙ্গার। তবে অবসরের ঘোষণা দেয়ার পর শুরু হয় বিতর্ক। কেননা, সকলেই জেনেছেন স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়িয়েছেন ওয়েঙ্গার। কিন্তু ওয়েঙ্গারের সাবেক শিষ্য ইয়ান রাইট দাবি করেন, ওয়েঙ্গারকে নাকি চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। অথচ, এই ওয়েঙ্গারের অধীনেই লম্বা একটা সময় খেলেছেন ইংলিশ ফুটবলার রাইট। ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে লীগ শিরোপা জেতার দলেও ছিলেন তিনি। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য সান; এর এক প্রতিবেদনে রাইট দাবি করেন, ‘আর্সেন ওয়েঙ্গার একজন সৎ ও নীতিবান লোক। আমি মনে করি সে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ানোর মতো মানুষ নয়। সমর্থকরা তার দিকে যতই অভিযোগের আঙুল তুলুক না কেন, সে চুক্তি শেষ না করে বিদায় নেয়ার মতো নয়।’ সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের কারণে অবশ্য ফরাসী এই কোচ গানারদের সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিলেন। চলতি মৌসুমে পয়েন্ট তালিকার ষষ্ঠ স্থানে অবস্থান করছে ক্লাবটি। টানা দ্বিতীয়বারের মতো শীর্ষ চারের বাইরে থেকে মৌসুম শেষ করার শঙ্কায় রয়েছে আর্সেনাল। এ নিয়েও চলছিল সমালোচনা। তবে সাবেক গানার রাইট মনে করেন, যত খারাপ সময়ই যাক না কেন, মাথা উঁচু করেই ক্লাব ছাড়বেন ওয়েঙ্গার। এ প্রসঙ্গে ইংল্যান্ড ও আর্সেনালের সাবেক এই ফুটবলার বলেন, ‘যত খারাপ সময়ই পার করুক না কেন, ওয়েঙ্গার মাথা উঁচু করেই ক্লাব ছাড়বে, একজন আর্সেনালের লিজেন্ড হয়েই থাকবে। আমরা সবাই তার কাছে ঋণী হয়ে থাকব।’ এদিকে, আর্সেন ওয়েঙ্গারের বিদায় বলার পর থেকেই শুরু হয়ে গেছে জল্পনা-কল্পনা। কে হবেন বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম বড় বাজেটের এই ক্লাবটির পরবর্তী কোচ? তবে ওয়েঙ্গারের উত্তরসূরি খুঁজে পাওয়াটা যে মোটেও সহজ হবে না তা অনুমিতই। তারপরও এ্যামিরেটস স্টেডিয়ামে পরবর্তী কা-ারি হিসেবে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন কয়েকজন। তাদের মধ্যে কার্লো আনচেলত্তি, লুইস এনরিকে, জোয়াকিম লো, প্যাট্রিক ভিয়েরা এবং ব্রেন্ডন রজার্স অন্যতম। ২০০৩-০৪ সালে পুরো মৌসুমে অপরাজিত থাকা উজ্জীবিত আর্সেনালের নেতৃত্বে ছিলেন প্যাট্রিক ভিয়েরা। ওয়েঙ্গারের অধীনে সেই মৌসুমে ক্লাবের সব ধরনের সাফল্যের দারুণ এক প্রতিচ্ছবি ছিলেন ভিয়েরা। আর্সেনালে থাকাকালীন সমান তিনটি করে লীগ শিরোপা ও এফএ কাপের শিরোপা জিতেছিলেন তিনি। ভক্তদের কাছে দারুণ জনপ্রিয় ভিয়েরার শীর্ষ পর্যায়ে কোচিংয়ের অনভিজ্ঞতা থাকলেও প্রিমিয়ার লীগের শিরোপার জন্য আবারও নিজেদের দাবীকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে আর্সেনাল ভিয়েরাকে নিয়ে ঝুঁকি নিতেই পারে। সেলটিকের হয়ে দুর্দান্ত সময় কাটছে ব্রেন্ডন রজার্সের। গত দুই বছরে নিজের হারানো খ্যাতি আবারও পুনরুদ্ধার করেছেন তিনি। টানা দ্বিতীয়বারের মত এই নর্দান আইরিশম্যানের অধীনে ঘরোয়া ট্রেবল জয়ের একেবারে কাছাকাছি রয়েছে গ্ল্যাসগো জায়ান্টসরা। ২০১৫ সালের অক্টোবরে লিভারপুলের সঙ্গে সাড়ে তিন বছরের সম্পর্ক শেষ হয় ৪৫ বছরের রজার্সের। কিন্তু ২০১৩-১৪ সালে লীগ শিরোপার খুব কাছাকাছি গিয়েও ব্যর্থ হতে হয়েছিল লিভারপুলকে। ফলে লীগ শিরোপা জয়ের ২৮ বছরের অপেক্ষা অধরাই থেকে যায়। সেলটিকের অন্যতম মালিক ডারমট ডেসমন্ড বলেন রজার্স যদি চলে যেতে চায় তবে তাতে কোন বাধা দিবেন না। তার মতে আর্সেনালের মত বিশ্বসেরা একটি ক্লাবের প্রস্তাব আসলে কাউকেই আটকে রাখা ঠিক হবে না। এটা সম্পূর্ণভাবেই ব্রেন্ডনের সিদ্ধান্ত। অন্য সব প্রার্থীর তুলনায় কার্লো আনচেলত্তির ইউরোপিয়ান শীর্ষ ক্লাবে কোচের দায়িত্বে থাকার অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। এটাই তাকে অন্য সবদিক থেকে আর্সেনালের কোচের জন্য এগিয়ে রেখেছে। বার্সিলোনার কোচ হিসেবে নিজের প্রথম মেয়াদেই ট্রেবল জয়ের কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন লুইস এনরিকে। ন্যু ক্যাম্পে তিনটি কঠিন মৌসুম কাটানোর পর আপাতত এক মৌসুমের জন্য বিশ্রামে রয়েছেন তিনি। ঐ দুই মৌসুমে বার্সা দু’টি লীগ শিরোপা ছাড়াও তিনটি কোপা ডেল রে ও ২০১৫ সালে চ্যাম্পিয়নস লীগের শিরোপা ঘরে তুলেছে। এনরিকে নিজেও প্রিমিয়ার লীগে কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছেন। গাজিডিস ইতোমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছেন ওয়েঙ্গারের পথ ধরেই আক্রমণাত্মক স্টাইল সমৃদ্ধ একজন কোচকে তারা নিয়োগ দিতে চায়। বিশ্বকাপজয়ী জার্মান কোচ জোয়াকিম লো দীর্ঘদিন ধরেই ক্লাব ফুটবলের অনেক লোভনীয় প্রস্তাব প্রত্যাখান করে এসেছেন। ২০২০ সাল পর্যন্ত এখনও জার্মান ফেডারেশনের সঙ্গে চুক্তি বহাল রয়েছে তার। তবে বাজিকরদের তালিকায় আর্সেনালের পরবর্তী কোচের জন্য ফেবারিটদের একজন লোও।
×