ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গেজেট প্রকাশ

সরকারী কর্মচারী নাশকতায় লিপ্ত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৭:৩৬, ২৫ এপ্রিল ২০১৮

 সরকারী কর্মচারী নাশকতায় লিপ্ত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

তপন বিশ্বাস ॥ সরকারী কর্মচারী নাশকতার কাজে লিপ্ত হলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে এমন বিধান রেখে সরকারী কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপীল বিধিমালার গেজেট প্রকাশ হয়েছে। সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি মনে করলে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেবেন। এছাড়া অন্যান্য বিধিবিধান পূর্বের মতোই বহাল থাকছে। ১৯৮৫ সালের পর অর্থাৎ ৩২ বছর পর সরকারী কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপীল বিধি নতুন করে সংশোধন করা হলো। আপীল বিধিমালার ৩(ঙ) বলা হয়েছে, কোন কর্মচারী নাশকতামূলক কর্মে লিপ্ত হলে, লিপ্ত রয়েছে বলে সন্দেহ করার যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকলে, নাশকতার কাজে লিপ্ত অন্যান্য ব্যক্তির সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে সন্দেহ করার যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকলে সেই কারণে তাকে চাকরিতে রাখা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হানিকর বলে বিবেচিত হলে তার বিরুদ্ধে এক বা একাধিক দ- আরোপ করা হবে। উল্লিখিত অপরাধের দায়ে প্রাথমিকভাবে তাকে লিখিত আদেশ বলে ছুটিতে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হবে। তার বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেয়া হবে তার ভিত্তি সম্পর্কে তাকে লিখিতভাবে অবহিত করা হবে। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ও ব্যবস্থার বিপক্ষে কারণ দর্শানোর জন্য যুক্তিযুক্ত সুযোগ দেয়া হবে। তবে যে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি মনে করেন যে, বাংলাদেশের নিরাপত্তার স্বার্থে এই ধরনের সুযোগ দেয়া সমীচীন হবে না, সেই ক্ষেত্রে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন সুযোগ দেয়া হবে না। বিধিমালায় যে সব কারণে কোন কর্মচারীর বিরুদ্ধে দ- আরোপ করা হবে তা উল্লেখ করা হয়েছে। বিধিমালার ৩ বিধিতে দ-ের ভিত্তিতে বলা হয়েছে, শারীরিক ও মানসিক অসামর্থ্যতা, দুই বা ততোধিকবার নির্ধারিত বিভাগীয় পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া, যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া পরীক্ষায় অংশ গ্রহণে ব্যর্থ হওয়া, এই বিধিমালার অধীনে তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত হয়ে নির্ধারিত সময়ে তদন্ত আরম্ভ কিংবা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে ব্যর্থ হয়ে দক্ষতা হারালে এবং উপরিউক্ত দক্ষতা পুনরায় অর্জনের কোন সম্ভাবা না থাকলে। এছাড়া অসদাচরণের দায়ে, পলায়নের দায়ে দোষী হলে কিংবা দুর্নীতিপরায়ণ হলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জ্ঞাত আয় বহির্র্ভূত সম্পত্তির অধিকারী হলে কিংবা প্রকাশ্য আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিবিহীন জীবন যাপন করলে কিংবা দুর্নীতিপরায়ণতার অব্যাহত কুখ্যাতি থাকলে তিনি দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হবেন। অসদাচরণ বলতে অসঙ্গত আচরণ, চাকরি শৃঙ্খলার জন্য হানিকর আচরণ, বিদ্যমান বিধিমালার কোন বিধানের পরিপন্থী কোন কাজ, শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ, উর্ধতন কর্তৃপক্ষের আইনসঙ্গত আদেশ অমান্য করা, কর্তব্যে অবহেলা প্রদর্শন, আইনসঙ্গত কারণ ছাড়া সরকারের কোন আদেশ, পরিপত্র এবং নির্দেশ অবজ্ঞা করা, কোন কর্তৃপক্ষের কাছে কোন সরকারী কর্মচারীর বিরুদ্ধে অসঙ্গত, ভিত্তিহীন, হয়রানিমূলক, মিথ্যা, অথবা তুচ্ছ অভিযোগ সংবলিত দরখাস্ত দাখিল করা হলে তা অসদাচরণ বলে বিবেচিত হবে। উল্লিখিত অপরাধের দায়ে লঘুদ- হিসেবে তিরস্কার, পদোন্নতি বা আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধির অযোগ্যতার ক্ষেত্র ব্যাতিত নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখা এবং বেতন গ্রেডের নি¤œতর ধাপে অবনমিতকরা হবে। গুরুদ- হিসেবে নি¤œপদ বা নি¤œবেতন গ্রেডে অবনমিত করা, বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান, চাকরি থেকে অপসারণ এবং চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে। তবে চাকরি থেকে অপসারণের দ- আরোপ করা হলে সরকারী বা আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত কোন সংবিধিবদ্ধ সংস্থায় চাকরিতে যোগদানের ক্ষেত্রে অযোগ্য হবেন না। কিন্তু চাকরি থেকে বরখাস্তকরণের দ- আরোপ করা হলে উল্লিখিত সরকারী কিংবা সংবিধিবদ্ধ সংস্থায় চাকরিতে যোগদানে অযোগ্য হবেন। বিধিমালায় ব্যতিক্রম বিষয়গুলোও উল্লেখ করা হয়েছে, কোন কর্মচারী তার আচরণের জন্য ফৌজদারি অপরাধে সাজাপ্রাপ্তির কারণে চাকরি থেকে বরখাস্ত বা চাকরি থেকে অপসারিত হলে, পদাবনমিত হলে অথবা যে ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে চাকরি থেকে বরখাস্ত অথবা অপসারিত অথবা পদাবনমিত করার জন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কারণ দর্শাইবার সুযোগ প্রদান যুক্তিযুক্তভাবে বাস্তবসম্মত নয়, সেই ক্ষেত্রে এর সপক্ষে কারণ লিপিবদ্ধ করে তার বিরিুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শারীরিক ও মানসিক অসমর্থ্যতার দায়ে অভিযুক্তকে মেডিক্যাল বোর্ডের মাধ্যমে পরীক্ষা নিরীক্ষান্তে তার বিরুদ্ধে এই বিধির অধীনে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে মেডিক্যাল বোর্ডে উপস্থিত হতে অস্বীকার করলে কর্তৃপক্ষ ধরে নেবে যে মেডিক্যাল পরীক্ষার ফলাফল তার অনুকূলে যাবে না। সেইক্ষেত্রে এই বিধির আলোকে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×