ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভারততে যৌনহয়রানি থেকে বাঁচতে শিশুদের যা শেখাচ্ছে

প্রকাশিত: ১৮:৫০, ২৫ এপ্রিল ২০১৮

ভারততে যৌনহয়রানি থেকে বাঁচতে শিশুদের যা শেখাচ্ছে

অনলাইন ডেস্ক ॥ ভারতে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির ঘটনা বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন রাজ্যে তাই শিশুদের যৌন হয়রানির হাত থেকে রক্ষা পেতে কী করতে হবে সে সব বিষয়ে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। শিশুদের বলা হচ্ছে যে, যৌন হয়রানি থেকে তাদের বাঁচতে হলে শালীন পোশাক পরতে হবে, ঠিকমতো চলাফেরা করতে হবে আর বাস-ট্রেনে পুরুষদের স্পর্শ বাঁচিয়ে বসতে হবে। -খবর বিবিসির। তামিলনাডু রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলোতে অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে বিভিন্ন ধরনের উপদেশ দেওয়া হয়েছে। যেভাবে ওই পাঠ্যবইতে উপদেশ দেওয়া হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে যেন কন্যা শিশুদের পোশাক-আশাক বা ঠিকমতো বসতে না পারার কারণেই তাদের ওপরে যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটে। ভারতে একের পর এক কন্যাশিশুর ওপর ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির ঘটনার প্রেক্ষিতে বিজ্ঞানের পাঠ্যবইতে এমন অবৈজ্ঞানিক তত্ত্ব দেখে চোখ কপালে উঠেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর। তামিলনাডুর রাজ্যসরকারি স্কুলে অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞানের পাঠ্যবইতে একটি পরিচ্ছেদ রয়েছে যৌন হয়রানি কীভাবে রুখতে হবে তা নিয়ে। যৌন হয়রানি আটকানোর প্রাথমিক উপায় সম্পর্কে সেখানে লেখা হয়েছে, সন্দেহজনক কোনও ব্যক্তির সঙ্গে একলা থেক না, উত্তেজক পোশাক পর না, কাউকে চুমু খেতে অথবা আদর করতে দিও না। ঠিকমতো বসছ কী না, তার দিকে নজর রাখ। বাস, অটোরিকশা অথবা ট্রেনে করে যখন স্কুলে আসবে, তখন বিপরীত লিঙ্গের মানুষের থেকে দূরত্ব বজায় রাখ। এমন উপদেশের কথা শুনে মনে হচ্ছে যৌন হয়রানির হাত থেকে নিজেদের বাঁচানো যাবতীয় দায় দায়িত্ব শিশুদেরই। শিশু অধিকার ও সুরক্ষা নিয়ে কাজ করে এমন একটি সর্বভারতীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ক্রাইয়ের পূর্বাঞ্চলীয় প্রোগ্রাম হেড মহুয়া চ্যাটার্জী বলেন, আদি অনন্তকাল থেকে আমরা যে সামাজিক নিয়মশৃঙ্খলা দিয়ে মেয়েদের বেঁধে রেখেছি, তা থেকেই এসব অবশ্য কর্তব্য বিষয়গুলো উঠে আসছে। সেই চিন্তাভাবনা থেকেই আমরা বলে দিতে পারি যে একটি মেয়ে কীভাবে বসবে, কী পড়বে- তার ওপরই নির্ভর করছে যে মেয়েটির ওপরে কেমন ব্যবহার করবে পুরুষরা। তার কথায়, ছেলে বা মেয়েদের বড় হয়ে ওঠার সময়ে তাদের যে ধরণের পুরণো চিন্তাভাবনা প্রসূত নিয়মকানুনের বেধে ফেলার চেষ্টা হয়েছে, তা সম্পূর্ন ভুল। ছেলেদের বা পুরুষদের প্রতি একটা ভয়-ভীতি তৈরি করে দিলে বা তাদের থেকে দূরত্ব তৈরি করে দিলেই কি কন্যাশিশুদের যৌন হয়রানির হাত থেকে রক্ষা করা যাবে? সেটা কখনই সম্ভব নয়। বরং ছাত্রদেরও তো শেখানো উচিত তারা মেয়েদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করবে। তামিলনাডু রাজ্যে তামিল, ইংরেজি, মালয়লাম ও কন্নড়-এই চারটি ভাষাতেই সব সরকারি স্কুলে ওই পাঠ্যবইটি পড়ানো হয়। এটির লেখা ও বিলি বন্টন করে রাজ্য শিক্ষা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কাউন্সিল। যৌন হয়রানি রুখতে পড়ুয়াদের যেসব শেখানো হচ্ছে তা কি সঠিক কিনা সে বিষয়ে ওই সরকারি সংস্থার পরিচালক জি আরিভোলির কাছে জানতে চাওয়া হয়। এ বিষয়ে তিনি বলেন, এই বইগুলো অন্তত ১২ বছর আগে লেখা হয়েছে- তখন কী ভাবনাচিন্তা করে লেখা হয়েছিল আমি বলতে পারব না। তবে সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম বিষয়টি আমাদের নজরে এনেছে। এতদিন কোনও প্রশ্ন ওঠেনি বিষয়গুলি নিয়ে। কিন্তু এখন নজরে আসার পরে আমরা বিষয়টি ইতোমধ্যেই উচ্চপর্যায়ের কমিটির কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। শিক্ষা মন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন যে নতুন করে ওই পরিচ্ছেদটি লেখা হবে। তবে নতুন পাঠ্যবই আসতে এখনও তিন বছর সময় লাগবে। আর ততদিন তামিলনাডুর কয়েক লক্ষ ছাত্রছাত্রী এটাই শিখতে থাকবে যে যৌন হয়রানি রুখতে মেয়েদেরই শালীন পোশাক পড়তে হবে, সঠিকভাবে বসা শিখতে হবে আর পুরুষদের স্পর্শ বাচিয়ে বাসে-ট্রেনে চলার দায়ও তাদেরই।
×