ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভাল নেই মুক্তামণি, ডান হাতটা আবার ফুলে গেছে ॥ চামড়া ফেটে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২৬ এপ্রিল ২০১৮

ভাল নেই মুক্তামণি, ডান হাতটা আবার ফুলে গেছে ॥ চামড়া ফেটে যাচ্ছে

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ হাতের ব্যথা ও চুলকানি নিয়ে অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে মুক্তামণি। তার ডান হাতটা আবার ফুলে গেছে। চামড়া ফেটে যাচ্ছে, রস ঝরছে। ড্রেসিং করতে দেরি হলেই জন্মাচ্ছে পোকা। বের হচ্ছে দুর্গন্ধ। রক্তনালীর টিউমারে আক্রান্ত মুক্তামণির হাতটিতে আবারও পচন ধরেছে। আদৌও ভাল হবে কি সে? স্বয়ং চিকিৎসকরাও তা বলতে পারছেন না। বর্তমানে সাতক্ষীরা জেলার দক্ষিণ কামারবায়সার নিজ বাড়িতে সারাদিন শুয়েই দিন কাটছে মুক্তামণির। অনুরোধ রাখতে মাঝে মধ্যে হুইল চেয়ারে করে দাদার কবরের পাশে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। পাশাপাশি বই পড়ে ও মোবাইলে কার্টুন দেখে সময় কাটছে তার। মুক্তামণির বাবা ইব্রাহিম হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, ‘ইদানীং মেয়ের হাতের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। ডাক্তাররা যেভাবে বলে দিয়েছিলেন সেভাবেই ওর চিকিৎসা চলছে। তারপরও হাতে পচন ধরেছে। একটু ড্রেসিং করতে দেরি হলেই পোকা হচ্ছে। গন্ধ বেরোচ্ছে।’ তবে চিকিৎসকরা তো চেষ্টার কম করেননি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী আমাদের মেয়ের দেখভাল করেছেন। আমরা সত্যি কৃতজ্ঞ। এখনও ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটের ডাক্তাররা ফোন করে খোঁজখবর নেন। আমরাও নানা সময়ে দরকার হলে ফোন করি। ডাক্তাররা তো সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। বর্তমানে আর নতুন করে অপারেশন করার মতো অবস্থাও তার নেই। কোন বিকল্প চিকিৎসা আছে কি না তাও জানি না। কথা হয় মুক্তামণির সঙ্গে। কেমন আছো জানতে চাইলে সে জনকণ্ঠকে জানায়, ‘ভাল’। হাতের অবস্থা প্রসঙ্গে সে জানায়, ‘খুব ব্যথা ও চুলকায়। মা চুলকায়ে দেয়। আমি তো হাত নিয়ে উঠতেও পারি না। সারাদিন শুয়ে থাকতে হয়। হীরামণি স্কুলে যায় কিন্তু আমি যেতে পারি না। আমি একাই শুয়ে শুয়ে বই পড়ি। তবে শরীর ভাল লাগে না। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।’ ছয় মাস ১০ দিন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ২২ ডিসেম্বর ফোলা হাত নিয়েই বাড়ি ফিরতে হয় মুক্তামণিকে। এ সময় চিকিৎসকরা তাকে মাসখানেক পরে আসার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন। বাড়ি যাওয়ার পর থেকেই নিয়মিত চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগযোগ রাখছেন মুক্তার বাবা মোঃ ইব্রাহিম হোসেন। তবে এখন আর ঢামেকে আসতে রাজি হয় না মুক্তামণি। তাই বাড়িতেই কোনমতে চলছে তার চিকিৎসা। হতাশা প্রকাশ করে ইব্রাহীম হোসেন বলেন, ‘ছয়টা মাস ওখানে গিয়ে থেকে আসলাম। সামান্যতমও যদি উন্নতি হতো, তাহলে মনে করেন, সেই ভরসায় যাওয়া যেত। দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসা করালে ঠিক হয়ে যাবে। এমন তো কোন ভরসা নেই। কোন্ ভরসায় যাব। কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। এতো দিন চিকিৎসা করানোর পরও কোন প্রকার পরিবর্তন লক্ষ্য করতেছি না। বরং হাতটা ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে। এর চেয়ে বোধহয় মেয়ের হাতটি কেটে ফেললেই ভাল হতো। অন্তত এই কষ্ট থেকে সে নিস্তার পেত। চলাফেরাও করত পারত। মুক্তামণি কবেনাগাদ ঢামেকে আসবে জানতে চাইলে বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডাঃ সামন্ত লাল সেন জনকণ্ঠকে জানান, ‘শীতের পরপরই ওদের আসার কথা ছিল। তবে মুক্তার পরিবার আমার সঙ্গে কোন যোগাযোগ করেনি। আমাকে জানানো হয়নি ওর অবস্থার অবনতি হয়েছে। তবে আমি দু’একদিনের মধ্যে ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঢামেকে আসতে বলব।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওর যে রোগ এটি একেবারে নির্মূল হবার নয়। এই চিকিৎসাটি চলমান।’ মুক্তার গোসল খাওয়া সম্পর্কে তার বাবা বলেন, ওর যে অবস্থা তাতে প্রতিদিন গোসল করানো যায় না। তিন চার দিন পরপর গোসল করাই। সে স্বাভাবিক খাবাব খায়। যখন যা খেতে চায় তাই এনে খাওয়াই। তবে কারো তুলে খাওয়ানো লাগে না। নিজেই বাঁ হাত থেকে তুলে খেতে পছন্দ করে। তিনি বলেন, মুক্তার জন্য সকলে দোয়া করবেন। আপনারা সবাই ওর জন্য দোয়া করেন, তা আমি জানি।
×