ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘আজীবন অভিনয় করতে চাই’

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ২৬ এপ্রিল ২০১৮

‘আজীবন অভিনয় করতে চাই’

আনন্দকণ্ঠ : স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি প্রসঙ্গে বলুন- খালেদা আক্তার কল্পনা ॥ ‘ম আকার’ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন আজাদ আল মামুন। আমি নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছি। পৃথিবীতে সবকিছুর উর্ধে ভালবাসা। সন্তানের প্রতি মায়ের ভালবাসার টান, মায়ের প্রতি সন্তানের ভালবাসার টান। গল্পে দেখা যাবে, মায়ের অসুস্থতার কথা শুনে চাকরি রেখে সন্তান চলে আসে। অথচ অনেক কষ্টের পর চাকরিটি পায় এবং ওই দিনই জয়েন করার কথা। কিন্তু হঠাৎ মায়ের অসুস্থতার কথা শুনে ছেলে মাকে এক নজর দেখার জন্য সবকিছু ছেড়ে চলে আসে। এমনই একটি গল্প নিয়ে মা দিবসের জন্য নির্মিত হয়েছে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি। গল্পটি শুনে আমার ভাল লেগেছে তাই কাজটি করার জন্য আগ্রহী হয়েছি। আশা করি দর্শকদেরও ভাল লাগবে। আনন্দকণ্ঠ ॥ অভিনয়ে আগের চেয়ে আপনাকে অনেক কম দেখা যায়, কারণ ? খালেদা আক্তার কল্পনা ॥ অসুস্থ থাকার কারণে কম দেখা গিয়েছিল। ডাক্তারের পরামর্শে এখনও চেকআপ করতে হচ্ছে। তবে আমি আগের চেয়ে অনেক ভাল। তবে আমার দুঃখটা এখানে যে, যখন আমি অসুস্থ ছিলাম তখন মিডিয়ার কেউ আমার খোঁজ খবর নেয়নি। হাতে গোনা দু-একজন ছাড়া কেউই খবর নেননি। কাছের কিছু লোক থাকে না, তারা খবর নিয়েছে। সব তো আর পর হয়ে যায় না। যখন আমি ভাল হয়ে এসেছি এখন তারা আমাকে আরও বেশি অসুস্থ করে দিচ্ছে। প্রশ্ন থাকতে পারে তারা কারা ? তারা হলো আমার ওপরে যারা জেলহাজ। তারা চায় আমি মিডিয়াতে না থাকি। আমার হাতের কাজ কমে যাক। আমি ভাল হয়ে গেছি তারা মানতে নারাজ। তারা আরও বেশি করে ফেসবুক, ইন্টারনেটে বিভিন্নভাবে আমার নামে অপপ্রচার চালাচ্ছে যে, আমার ক্যান্সার হয়েছে। বিছানায় পরে আছি, চলতে পারি না। আমি কাজ করতে পারি না। আমি অন্ধ হয়ে গেছি। আমি যদি অন্ধ হয়ে যেতাম তাহলে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে কিভাবে অংশগ্রহণ করলাম ? শিল্পী সমিতির পিকনিকসহ বিভিন্ন পিকনিকের দাওয়াতে উপস্থিত ছিলাম। এ কাজগুলো তো ফেসবুকে আসছে তারা দেখছে অনেক প্রোগ্রামই উপস্থিত হয়েছি, ভূমিকা রেখেছি। কই এসব তারা দেখছেন না কেন? খবর না নিয়েই বেশি করে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমার কথা দ্বিগুণ বাড়িয়ে লিখছে। এখন আমি ভাল হয়ে গেছি এখন মনে হয় আরও বেড়ে গেছে অসুস্থতা সেভাবে তারা প্রচার চালাচ্ছে। এই যে আমি একটি শুটিং স্পটে বসে কথা বলছি। আমি যদি অচল হতাম তাহলে কি আমাকে তারা কাজে নিত ? ভাল একটি গল্পের কাজে নাম ভূমিকায় অভিনয় আমাকে নিয়েছে। সামনে আরও ভাল কিছু কাজ করব কথা চলছে। আমি অসুস্থ থাকলে তো কাজ পেতাম না। আমার ভেতরে এতদিন একটা ক্ষোপ ছিল এতদিন কাউকে এ কথাগুলো বলতে পারিনি। আজ মন খুলে কথাগুলো জনকণ্ঠ পত্রিকাকে বলছি। এমনও হয়েছিল আমার কাছে পা-ুলিপি এসেছে আমি জানি কাজ করছি। আমাকে গাড়িতে নিতে আসবে গাড়ি আর আসেনি। শুটিং এর তারিখ নিয়েছে তারপর যোগাযোগ করেনি এমনটাও ঘটেছে আমার সঙ্গে। এক থেকে দেড় বছর যাবত এগুলো হচ্ছে। সেটা আমি মেনে নিয়েছি মনে করেছি এটা আমার দুর্ভাগ্য। আমার কাছে ভাল লাগত তারা যদি আমার খোঁজ খবর নিয়ে আসল সত্যতা যাচাই করত। তা না যেনে আমাকে ক্যান্সারের রোগী পর্যন্ত বানিয়ে দিয়েছে। আমাকে অচল বানিয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে আমি অন্ধ হয়ে গেছি। তবে আমার চোখে সমস্যা ছিল সবাই জানে। আমি এখন সুস্থ হয়ে কাজ করছি তো...। অন্ধ হলে এত কাজ কি করে করলাম। দেড়টা বছর আমি বেকার ছিলাম। চোখের চিকিৎসার জন্য আমার প্রায় চার থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। আল্লাহর রহমতে এখন আমি সুস্থ আছি। আনন্দকণ্ঠ : চলচ্চিত্রের কী খবর? খালেদা আক্তার কল্পনা ॥ এক দুইটা ছবি হাফ ডান হয়ে আছে। চলতি মাসেই ঝর চলচ্চিত্রের কাজ শুরু করব বিক্রমপুরে। ছবিটি পরিচালনা করবেন ড. ইলারা জাহান। এক বছর পর চলচ্চিত্রের কাজ করব। চোখের সমস্যা নিয়েও আমি দুইটা ভাল কাজ করেছি সালাউদ্দিন লাভলুর ‘সোনার পাখিরুপার পাখি’। দেশ বিদেশে সালাউদ্দিন লাভলুর অনেক ভক্তই নাটকটি দেখে প্রশংসা করেছে। তখনও কিন্তু আমার চোখে সমস্যা ছিল কিন্তু কেউ বুঝতে পারেনি। এটার পাশাপাশি আবুল হায়াত ভাইয়ের একটা সিরিয়াল করছিলাম ‘তিন পাগলের হলো মেলা’। তখনও চোখের বড় রকম সমস্যা ছিল। তখন তারা কেউ তো বলেনি আপনার চোখে সমস্যা কাজে নেয়া যাবে না। এটাই আমার বড় দুঃখ আমরা হুজুগে নাচি। সবাই আমার সমস্যা মেনে নিয়েই কাজ করতে চাচ্ছে তারা বলছে আপনি যে খালেদা আক্তার কল্পনা এটা বোঝা যায় তো, তাতেই হবে। আনন্দকণ্ঠ ॥ আচ্ছা, আপনি কখনও মমতাময়ী মা, রাগি মা আবার গরিব মায়ের চরিত্রেও অভিনয় করেছেন- এর জন্য কি এমন ধরনের মায়েদের সঙ্গে সরাসরি মিশে কিংবা তাদের জীবনযাপন খুব কাছ থেকে দেখতে হয়েছে কী শুটিংয়ের আগে? খালেদা আক্তার কল্পনা ॥ বিষয়টা সে রকম নয়। তবে দেখতে জানতে হয়েছে অভিজ্ঞতা নেয়ার জন্য। কষ্ট করে কেন এ রকম পরিবেশে যেতে হয়নি। জীবনে তো অনেক সময় পার করে চলে এসেছি। অনেক মানুষের সংস্পর্শ পেয়েছি। যার কারণে সে অভিজ্ঞতাটা বেশ কাজে লেগেছে। নিয়মিত চর্চা কিংবা অনুশীলন তো রয়েছেই। তবে আমাদের আশপাশে তাকালে এ রকম হাজারও গরিব পরিবার দেখা যায়। সমাজের গরিব মানুষের খেয়াল রাখা আমাদের উচিত এবং আমরা খেয়ালও রাখি। সেখান থেকে অভিজ্ঞতা হয়ে যায়। আনন্দকণ্ঠ ॥ দীর্ঘদিন ধরে মা চরিত্রে অভিনয় করছেন-একঘেঁয়েমি লাগে না? খালেদা আক্তার কল্পনা ॥ হ্যাঁ প্রচুর একঘেঁয়েমি লাগে। একঘেঁয়েমি তখনই লাগে যখন দেখি যে আমরা একটা গ-ির মধ্যে আবদ্ধ হয়ে আছি। বেশিরভাগই দেখা যায় ব্যতিক্রম ধারার গল্প পাই না। খুবই কম ব্যতিক্রমী গল্প পাই। সব গল্প দেখা যায় ঘুরে ফিরে একই। ব্যতিক্রম গল্পে কাজ করতে আগ্রহী। ইদানীং বেশি চাচ্ছি ব্যতিক্রম ভাল লাগার মতো গল্পে কাজ করতে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অভিনয় করে যাব ইচ্ছে আছে। কারণ, আমি অভিনয় ছাড়া কিছুই বুঝি না। আনন্দকণ্ঠ ॥ আপনি তো লেখালেখিও করেন। লেখালেখির কী খবর ? খালেদা আক্তার কল্পনা ॥ অবসর সময় কাটে লেখালেখির মাধ্যমে। কারণ আমি লেখালেখি করতে পছন্দ করি। চ্যানেলের জন্য লেখালেখি করতেছি। আমার লেখা নিয়ে অনেকেই আগ্রহ দেখিয়েছে কাজ করার। চলচ্চিত্রর গল্পও আমার লেখা আছে এখানও কেউর কাছে গল্প নিয়ে যাইনি। প্যাকেজ নাটক নিয়ে এত বেশি ব্যস্ত যে চলচ্চিত্র নিয়ে যাওয়া হয়ে উঠেনি, তবে যাব। প্যাকেজ নাটকের কাজ মাথা থেকে হালকা হলে চলচ্চিত্রের কাজে মনোযোগ দেব। আনন্দকণ্ঠ : বর্তমান সময়ের অভিনয়শিল্পীরা অভিনয় কতটা পেশাদারিত্বের সঙ্গে করছেন বলে মনে হয় আপনার? খালেদা আক্তার কল্পনা ॥ প্রাথমিক পর্যায়ে এক রকম থাকে। দুইদিন গেলেই অভিনয় জানুক বা নাই জানুক পুরোপুরি পেশাদার হয়ে যায়। এবং আবদার থাকে আমার এসি গাড়ি লাগবে, এসি রুম লাগবে, এত টাকা লাগবে। এটিকে আমি কিসের মধ্যে ফালাব। যদি শৌখিন হতো তাহলে তার চিন্তাভাবনা অন্যরকম থাকত যে আগে আমি কাজ শিখি। সর্বোচ্চ দিয়ে কাজটি করি। আর কিছুদিন যাক তারপর আমার মূল্যটা বাড়াই আমাকে ভালভাবে পেশাদারিত্ব করি। এটা কয়জনই বা করছে। আমাদের কিছু পরিচালকদেরও একটু দোষ আছে পুরোপুরি শিল্পী হলো না হাঁটতে চলতে শিখল না আমরাও টাকাটা বাড়িয়ে দিচ্ছি। এটা ঠিক না। আনন্দকণ্ঠ ॥ তরুণ প্রজন্মের যারা অভিনয়ে আসতে চায় তাদের উদ্দেশ্য কি বলার আছে? খালেদা আক্তার কল্পনা : যারা আসতে চায় তারা মনে করে অভিনয় খুবই সহজ একটি ব্যাপার। একেবারেই সহজ বিষয় না। অভিনয় আসতে হলে লেখাপড়া জানা দরকার আছে। বেশি সুন্দর হলে নায়ক নায়িকা হবে। স্মার্ট না হলে অভিনয়ের গুণে এগিয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে সবাইকে অভিনয় শিখে আসতে হবে। অভিনয় শেখার অনেক স্কুল আছে। মঞ্চ শিক্ষা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। অনেক বিখ্যাত শিল্পীই মঞ্চ করে এসেছে। আমিও মঞ্চে অভিনয় করে এসেছি। আমাদের দেশে অনেকেই না শিখে আসছে এবং কাজেও নিচ্ছে। অভিনয় শেখার প্রধান মাধ্যম হচ্ছে মঞ্চ। তারাহুড়া না করে ধৈর্যসহকারে সময় নিয়ে তৈরি হয়ে আসতে হবে। আনন্দকণ্ঠ : অনেক কাজই করেছেন। এমন কোন চরিত্র আছে যে এখনও করতে পরেননি? খালেদা আক্তার কল্পনা ॥ এমন অসংখ্য চরিত্র রয়েছে। তবে নিদিষ্ট করে বলব না। এমন অনেক গল্প চরিত্র আছে। আমার মনে হয় এখনও আমি মানুষের মনে দাগ কাটার মতো এমন কোন চরিত্রে কাজ করতে পরিনি। কিন্তু আমাকে অনেকেই নিতে পারত। অনেক পরিচালকই আছে আমাকে নিয়ে কাজ করেনি। তাদের সঙ্গে আমি কাজ করতে চাই। তারা অনেক ভাল গল্পের আর্ট ফিল্ম করেন। তারা তাদের নিজস্ব গ-ির লোকই নিয়ে থাকে বেশির ভাগ। এমন কিছু গল্প চরিত্র আছে যেখানে ভালো একজন শিল্পীর প্রয়োজন হয়। সেটা কিন্তু ভাল শিল্পী পাচ্ছে না। সেই বিষয়টিতে নজর দিতে হবে। আমি মনে করি সবাইকে নিয়ে কাজ করা উচিত। এবং আরও একটি বিষয় বলতে চাই ইদানীং যেটা হচ্ছে যে কোন কাজ করতে গেলে সম্পর্কের দরকার আছে। কাজের ক্ষেত্রে পরিচালক থেকে শুরু করে টিমের সঙ্গে ভাল একটি সম্পর্ক থাকলে কাজটি সুন্দরভাবে করা যায়। এ বিষয়ে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। সম্পর্ক সুন্দর না থাকলে একটি কাজ সুন্দরভাবে আদায় করা যায় না। অনেক বেকার রয়েছে সম্পর্ক না থাকার কারণে কাজ পাচ্ছে না। দু’পক্ষের প্রতি শ্র্রদ্ধার সঙ্গে সুন্দর একটি সম্পর্ক থাকা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। আনন্দণ্ঠ : বর্তমান টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা কেমন মনে হচ্ছে? খালেদা আক্তার কল্পনা ॥ প্রথমত বাংলাদেশ টেলিভিশন নিয়ে বলতে চাই বর্তমানে বিটিভিতে অনেক সুন্দর সুন্দর নাটক প্রোগ্রাম মেকিং হচ্ছে। বিটিভির নাটকগুলো আমি দেখার চেষ্টা করি। আর চ্যানেলের অন্য অন্য নাটক নিয়ে বলব সব নাটক দেখার মতো না। যেগুলো দেখার মতো সেগুলো দেখি।
×