ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এলএনজি যুগে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৭ এপ্রিল ২০১৮

এলএনজি যুগে বাংলাদেশ

অবশেষে বহুল প্রত্যাশিত এলএনজি বা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। গত মঙ্গলবার কক্সবাজারের মাতারবাড়ি উপকূলে নবনির্মিত জেটিতে মধ্যপ্রাচ্যের কাতার থেকে এলএনজি বোঝাইকৃত বেলজিয়ামের জাহাজ ‘এক্সিলেন্স’ নোংরের মাধ্যমে হলো এর শুভ সূচনা। বিশেষায়িত এই জাহাজটি ব্যবহৃত হবে ভাসমান টার্মিনাল হিসেবে। চুক্তি অনুযায়ী ১৫ বছর পর এর মালিকানা চলে আসবে বাংলাদেশের হাতে। কারিগরি ও প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর তরলীকৃত এই গ্যাস সমুদ্রের তলদেশে স্থাপিত পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হবে আনোয়ারায় নির্মিত সাবস্টেশনে। এলএনজি সরবরাহের জন্য কক্সবাজারের মহেশখালী থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত ৯১ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে ইতোমধ্যে। প্রথম দিকে এই এলএনজি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরবরাহ করা হবে চট্টগ্রাম মহানগরীতে, বিশেষ করে ক্যাপটিভ পাওয়ার স্টেশনগুলোতে। নিকট ভবিষ্যতে চট্টগ্রামের চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ করা হবে জাতীয় গ্রিডে। মধ্যপ্রাচ্যের কাতার থেকে এলএনজির প্রথম চালান আসার পর থেকে সার্বিকভাবে স্বস্তি নেমে এসেছে দেশের জ্বালানির বাজারে। সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিরাজ করছে এক ধরনের আস্থা ও বিশ্বাস। কেননা ইত্যবসরে রাজধানী ও অন্যত্র দেখা দিয়েছে কমবেশি গ্যাস সঙ্কট। সিলিন্ডার গ্যাসও দুর্লভ ও দুর্মূল্য। অনেক স্থানে পর্যাপ্ত সরবরাহ তো দূরের কথা, সুলভও নয়। এ অবস্থায় দেশে নিয়মিত এলএনজির সরবরাহ ও প্রাপ্তি সুনিশ্চিত করা সম্ভব হলে এর সামগ্রিক ইতিবাচক প্রভাব পড়বে জ্বালানি সেক্টরে। সার ও বিদ্যুত সেক্টরসহ শিল্পাকলকারখানাগুলো সচল থাকবে সারা বছর ধরে। বন উজাড়সহ জ্বালানি কাঠের উপর চাপ কমবে। তবে এর জন্য সর্বাগ্রে নিশ্চিত করতে হবে নিয়মিত এলএনজির সরবরাহ। সরকার ইতোমধ্যে বাসাবাড়িতে রান্নাবান্নার জন্য নতুন গ্যাস সংযোগ না দেয়ার কথা বলেছে। বাস্তবতা ও সময়ের নিরিখে প্রমাণিত হয়েছে যে, সিদ্ধান্তটি খুব সুবিবেচনাপ্রসূত ও সুদূরপ্রসারী ছিল না। কেননা, মানুষের চাহিদা ও প্রয়োজন অসীম। অন্যদিকে প্রাকৃতিক সম্পদ সীমিত ও সীমাবদ্ধ। গত কয়েক বছর ধরে অগভীর সমুদ্র উপকূলসহ বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার ও অনুসন্ধান অব্যাহত থাকলেও ক্রমবর্ধমান চাহিদা মোকাবেলায় তা পর্যাপ্ত নয়। অন্যদিকে ব্যবহৃত গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মজুদও খুব দ্রুতই ফুরিয়ে আসছে। সে অবস্থায় সরকার বাসাবাড়িতে পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ কমিয়ে অথবা একেবারে বন্ধ করে দিয়ে রফতানিনির্ভর পণ্য ও উৎপাদনমুখী শিল্পের জন্য গ্যাস ব্যবহারে সবিশেষ আগ্রহী। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য এহেন সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী নিঃসন্দেহে। সে অবস্থায় বিকল্প হলো এলপি গ্যাস সিলিন্ডার। একাধিক দেশী কোম্পানিকে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার উৎপাদনের জন্য সুযোগ-সুবিধাসহ অনুমোদন দেয়া হলেও তারা এর অপব্যবহার করছে। মাঝখানে মিটার বসিয়ে বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ ও ব্যবহার সীমিত রাখার একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। সেই অবস্থা থেকে সরকার সরে এসেছে। যা হোক, এলপি গ্যাস ও এলএনজি সিলিন্ডার সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী হলে গ্যাস ব্যবহারকারীদের তা মেনে নিতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তবে এর জন্য সংশ্লিষ্ট জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে বিদেশ থেকে নিয়মিত এলএনজি আমদানিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ ডিপো স্থাপন করতে হবে। এর পাশাপাশি স্থলে-জলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানও জোরদার করতে হবে।
×