ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

হ্যাটট্রিক ফাইনালের পথে রিয়াল

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৭ এপ্রিল ২০১৮

হ্যাটট্রিক ফাইনালের পথে রিয়াল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ টানা দুইবার শিরোপা জয়ের নজির ছিল না কারও। গত বছর প্রথমবারের মতো সেটা করে দেখিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। ইতিহাস গড়া দলটি এবারও ট্রফি উঁচিয়ে ধরার দিকেই এগোচ্ছে। সেমিফাইনালের প্রথম লেগে স্বাগতিক বেয়ার্ন মিউনিখকে ২-১ গোলে হারিয়ে যে টানা তৃতীয়বারের মতো উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে উঠে গেছে গ্যালাক্টিকোরা। বুধবার রাতে মিউনিখের এ্যালিয়েঞ্জ এ্যারানায় জিতে আসায় ১ মে সান্টিয়াগো বার্নাব্যুতে অনেকটা চাপমুক্ত হয়ে মাঠে নামতে পারবে সর্বশেষ দুই আসরের চ্যাম্পিয়নরা। ইউরোপ সেরার আসরে বারবারই রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে বেয়ার্নের। এবার সেই বৃত্ত ভাঙ্গার স্বপ্ন বুনছিল মিউনিখের ক্লাবটি। কিন্তু প্রথম লেগে যেভাবে হেরেছে তারা তাতে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তার ওপর আবার দলের দুই নির্ভরযোগ্য তারকা আরিয়েন রোবেন ও জেরোমে বোয়েটেং পেয়েছেন চোট। নকআউট পর্বে বেয়ার্নের বিপক্ষে ৮ বারের দেখায় ৫ বারই শেষ হাসি হেসেছে রিয়াল। সেই সংখ্যাটা ছয়ে নিতেই মাঠে নেমেছিল তারা। এতে সফলও হয়েছে লীগের ইতিহাসের সেরা সাফল্যের দলটি। বাভারিয়ানদের কোন ছাড় না দিয়েই মার্সেলো ও মার্কো এ্যাসেনসিওর লক্ষ্যভেদে দারুণ জয় নিয়ে ফিরেছে গেল দুইবারের চ্যাম্পিয়নরা। পিএসজি, জুভেন্টাসের পর ইউরোপের আরেক বড় দল বেয়ার্ন মিউনিখকেও বিদায় করার পথে জিদানের দল। এ্যালিয়েঞ্জ এ্যারানায় ম্যাচের প্রথম মিনিটেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় বেয়ার্ন। কারভাজালের ভুলে বল পান লেভানডোস্কি। সেখানে থেকে এই পোলিশ স্ট্রাইকারের ক্রস ডি বক্সে থাকা মুলারের সামান্য কাছ দিয়ে চলে যায়। ম্যাচের দশম মিনিটেই বেয়ার্নের জন্য ধাক্কা হিসেবে আসে রোবেনের ইনজুরি। তার পরিবর্তে মাঠে নামেন থিয়াগো আলকান্টারা। ২৪ মিনিটে ডি বক্সের সামান্য ভেতর থেকে কারভাজালের বুলেট গতির শট তালুবন্ধী করেন বেয়ার্ন গোলকিপার ইউলরিচ। ২৮ মিনিটে বেয়ার্নের হয়ে গোলের খাতা খোলেন জার্মান রাইট ব্যাক জশুয়া কিমিচ। মাঝমাঠ থেকে জেমস রড্রিগুয়েজের বাড়ানো বল থেকে ডান পাশ দিয়ে ক্ষিপ্র গতিতে ঢুকে দারুণ শটে লক্ষ্যভেদ করেন। ম্যাচের ৩৬ মিনিটে বোয়েটেং ইনজুরিতে পড়লে আবারও খেলোয়াড় বদল করতে বাধ্য হয় বেয়ার্ন। ম্যাচের অর্ধেক না যেতেই দুইটা খেলোয়াড় পরিবর্তন করে মনস্তাত্ত্বিক দিক দিয়ে কিছুটা পিছিয়ে পড়ে জাপ হেইঙ্কেসের দল। সেই সুযোগে প্রথমার্ধের একদম অন্তিম মুহূর্তে ডি বক্সের বাইরে থেকে আচমকা দূরপাল্লার অসাধারণ শটে গোল করে রিয়ালকে ম্যাচে ফেরান মার্সেলো। পিএসজি, জুভেন্টাসের পর বেয়ার্নের বিপক্ষেও গোল করলেন ব্রাজিলিয়ান লেফটব্যাক। বিরতির পরপরই ইস্কোর পরিবর্তে এ্যাসেনসিওকে মাঠে নামান রিয়াল কোচ জিনেদিন জিদান। আর তাতেই বাজিমাত করে দলটি। ৫৭ মিনিটে কাউন্টার এ্যাটাকে লুকাস ভাসুকয়েজের কাছ থেকে বল পেয়ে স্বাগতিক গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে গোল করেন স্প্যানিশ স্ট্রাইকার এ্যাসেনসিও। দুইটি এ্যাওয়ে গোল দিয়ে অনেকটা নির্ভার হয়ে খেলতে থাকে রিয়াল সেই সঙ্গে ডিফেন্সটাও বেশ পোক্ত করে নেয় জিদান শিষ্যরা। ৬৯ মিনিটে রিবেরির শট গোলবারের সামান্য বাইরে দিয়ে চলে গেলে গোলবঞ্চিত হয় বাভারিয়ানরা। ৮৮ মিনিটে আবারও গোলমুখে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেন লেভানডোস্কি। পুরো ম্যাচেই নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন রোনাল্ডো। বলার মতো তেমন কোন পারফর্মেন্স দেখাতে পারেননি তিনি। ফলে ১১ ম্যাচ পর গোল বঞ্চিত থাকতে হয়েছে তাকে। ৭২ মিনিটে অবশ্য একবার বল জালে জড়িয়েছিলেন সি আর সেভেন। কিন্তু হ্যান্ডবলের কারণে গোলটি বাতিল হয়ে যায়। গোল না পেলেও দারুণ রেকর্ড গড়ছেন রোনাল্ডো। ইউরোপের শীর্ষ ক্লাব আসরে ৯৬তম ম্যাচ জিতেছেন পর্তুগীজ সুপারস্টার। এই ম্যাচ জেতার মধ্য দিয়ে রিয়ালের এক কিংবদন্তিকে পেছনে ফেলেছেন ফিফা সেরা তারকা। চ্যাম্পিয়ন্স লীগে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জয়ের কৃতিত্ব এখন ৩৩ বছর বয়সী রোনাল্ডোর। রিয়ালের সাবকে গোলরক্ষক ইকার ক্যাসিয়াসকে টপকে গেছেন তিনি। রিয়াল মাদ্রিদেরই জার্সি গায়ে ক্যাসিয়াস জিতেছেন ৯৫ ম্যাচ। ম্যাচ শেষে রিয়াল কোচ জিনেদিন জিদান বলেন, চ্যাম্পিয়ন্স লীগে আপনাকে কষ্ট করতে হবে। আমাদের আরও ভাল খেলা উচিত ছিল। তবে এ ম্যাচ নিয়ে আমি খুশি। ম্যাচের ৬০ শতাংশ বল নিজেদের দখলে রাখার সঙ্গে সঙ্গে গোল মুখে ১৭টি শট নিয়েও হারতে হয়েছে বেয়ার্নকে। স্বাভাবিকভাবেই হতাশ জার্মান ক্লাবটি। দলটির কোচ জাপ হেইঙ্কেস বলেন, আমরা এগিয়ে ছিলাম। কিন্তু রিয়ালের প্রথম গোলটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। যেটা ছিল উপহারের মতো। তাদের দ্বিতীয় গোলটাও উপহার। তাছাড়া আমরা ম্যাচে অনেক সুযোগ পেয়েছি, তবে তা কাজে লাগাতে পারিনি। আমরা আমাদের সুযোগের সুবিধাগুলো নিতে পারিনি।
×