ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঘুরে এলাম মিনি কক্সবাজার!

প্রকাশিত: ০৮:১৩, ৪ মে ২০১৮

ঘুরে এলাম মিনি কক্সবাজার!

শিরোনাম দেখে অনেকেই আঁতকে উঠতে পারেন। আবার অনেকেই ভাবতে পারেন এও কী সম্ভব? হ্যাঁ ঠিক অবাক হওয়ার কিছু নেই। চাঁদপুরের বড় স্টেশন মোলহেড থেকে কয়েক মিনিটের দূরুত্বে জেগেছে এক সুবিশাল চর। যা কিনা অনেকটাই কক্সবাজারের মতো। বালুকাময় এ চরটিতে প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষের সমাগম লক্ষ্য করা যায়। মার্চের ৯ তারিখ। সকাল সকাল বের হয়ে পড়লাম ভ্রমণের উদ্দেশে। চাঁদপুরের বড় স্টেশন যেতেই দেখা হলো সাংবাদিক পলাশ ভাই আর মাতৃপীঠ স্কুলের শিক্ষক মাসুদ স্যারের সঙ্গে। এফএসি ফ্রিল্যান্সার দের ভ্রমণ ছিল সেদিন। তারা ঠিক করে চাঁদপুরের নতুন জেগে ওঠা চরটিতেই তারা যাবে। আমি ও দেরি না করে হুমড়ি খেয়ে ট্রলারে চেপে বসি। অবশ্য এ জন্য আমাকে পয়সা গুনতে হয়েছে। জাহাদুল ইসলাম ভাইকে ৩০০ টাকা দেয়ার বিনিময় আমিও ভ্রমণের টিকেট পাই। প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জনের ভ্রমণ খুবই আনন্দের ছিল। দীর্ঘ ১৫ মিনিট উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিয়ে পৌঁছলাম চরটিতে। গিয়ে দেখি অসংখ্য মানুষ সেখানে ভিড় করে আছে। কেউ নদীর পানিতে লাফাচ্ছে, কেউ আবার নদীর অপরূপ সৌন্দর্যকে উপভোগ করছে। আমরা ট্রলার থেকে নেমে ছাউনি বানাতে শুরু করলাম। এর ফাঁকে কিছু খাওয়া দাওয়াও সেরে নিলাম। এলাকার জয়নাল আবেদিন আর মাসুদ আমাকে পেয়ে খুবই খুশি তারা। নদীর বুকে লাফালাফি দপাপপি করে ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। মাঝখান দিয়ে পুরো চরটিকে আমি একবার প্রদক্ষিণ করে নিলাম। বালুকাময় চরটিতে কক্সবাজারে আদলে সবাই আনন্দ ফুর্তিতে মেতে উঠেছে। ভাবলাম, কোলাহলপূর্ণ শহরে যখন দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা, ঠিক তখন শহুরে জীবন ছেড়ে মানুষ ছুটতে চায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের খোঁজে। দুর্ভাগ্য জনাকীর্ণ নগরী ঢাকা। যেখানে অস্বাভাবিকভাবেই বেড়ে চলেছে জনসংখ্যা। ঘনবসতির নগরে স্বস্তি পাওয়াটা যেন ইদানীং ভাগ্যের ব্যাপার। যে পরিমাণ পর্যটন কেন্দ্র ঢাকার ভেতর এবং কাছাকাছি রয়েছে সেগুলোতে ভিড় লেগে যায় ছুটির দিনগুলোতে। এ ছাড়া কক্সবাজারসহ দেশের ঐতিহ্যম-িত প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোতে ঢাকা থেকে যাওয়াটা অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। ঢাকা থেকে নদীপথে মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টার পথ চাঁদপুর। চাঁদপুর বেশ কয়েকটি চর রয়েছে। ইদানীং পর্যটকদের মিলন মেলা দেখা যায় রাজরাজেশ্বর চর, ইশানবালার চর আর পদ্মার-মেঘনার চরে। বিশেষ করে শীত মৌসুমে এবং গ্রীষ্মের আগ পর্যন্ত চরের সৌন্দর্য মন কাড়ে সেখানে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের। বিশেষ করে নতুন করে জেগে ওঠা চর এটি। অনেকে এ চরকে আখ্যায়িত করেন মিনি কক্সবাজার হিসেবে। বিশাল জলরাশির ছোট ছোট ঢেউ আর বালুকাময় বিস্তীর্ণ চরের সৌন্দর্য উপভোগে অনেকেই আসেন স্থানটিতে। চাঁদপুরের এ চর পর্যটন বিকাশে একটি চমকপ্রদ স্থান। এখানে পর্যটন মৌসুমে অনেক লোকই ঘুরতে আসেন। অনেকটা মিনি কক্সবাজারের মতোই বলতে পারেন। ছোট ছোট ঢেউ আছড়ে পড়ে বালুকাময় এই চরটিতে।’ বালুকাময় চরটিতে ইদানীং অনেকে পিকনিক স্পট হিসেবেও ব্যবহার করেন। নদীর বুকে স্নান করার আনন্দ উপভোগ করেন। ছুটির দিনে এমন একটি স্থানে বেড়িয়ে না আসাটা দুঃখজনকই বটে। যাই হোক সন্ধ্যা নামে তটে এলেম যেন মেঘনার পাড়ে। অতঃপর সারাদিন হাসি, খুশি আনন্দ করে সন্ধ্যায় ফিরলাম বাড়ি। ছন্দের ভাষায়, দেখি তারে মন ভরে নাই আবার যাব ছাড়ি, ইচ্ছে হলেই সেখানটাতে করব বসতবাড়ি। কীভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে নদী পথে লঞ্চে করে চাঁদপুরের ভাড়া ডেকে ১০০ টাকা। কেবিনে সিঙ্গেল ৪০০ এবং ডাবল ৮০০ টাকা। প্রথমেই চাঁদপুর মাদ্রাসা ঘাটে নেমে যেতে হবে বড় স্টেশন মোলহেড। সেখান থেকে ৩০ টাকা ভাড়ায় ট্রলারে চেপে যেতে পারবেন চরটিতে। ইচ্ছে করলে আপনি রিজার্ভ ট্রলার নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে গুনতে হবে ৪০০ টাকা। এ ছাড়া আপনার যাতায়াতের ওপরে ভ্রমণ খরচ নির্ভর করতে পারে।
×