ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিমান দুর্ঘটনা উদ্ভট ১০ গুজব

প্রকাশিত: ০৭:৩৮, ১১ মে ২০১৮

বিমান দুর্ঘটনা উদ্ভট ১০ গুজব

ব্রেস পজিশন ক্র্যাশ এ বিষয়ে দুটি উদ্ভট রটনা রয়েছে। ব্রেস পজিশন হচ্ছে, বিশেষ এজ ধরনের অবস্থান যা বিমান ক্র্যাশের সময় যাত্রীদের জীবন বাঁচাতে ব্যবহার করা হয়। পা নিচে স্বাভাবিক রেখে মাথা সামনের সিটের সঙ্গে লাগিয়ে দেয়াকে ব্রেস পজিশন বলা হয়। অথচ একদলের মতে, বিমান ক্র্যাশের সময় এই অবস্থান যাত্রীদের ঘাড় ভেঙে ফেলবে ফলে তারা সহজেই মারা যাবে এবং মৃত যাত্রী কখনই মামলা করতে পারবে না বা স্বাস্থ্যবীমা দাবি করতে পারবে না। আরেক দলের মতে, এই বিশেষ অবস্থানের ফলে পরবর্তীতে লাশ শনাক্তকরণ সহজ হয়, কেননা এভাবে দুর্ঘটনার কারণে চেহারার কোন ক্ষতি হয় না। দুটি গুজবই একেবারে খাপছাড়া এবং ভিত্তিহীন। ১৯৮৯ সালে ঘটে যাওয়া একটি বিমান ক্র্যাশের ঘটনার ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখা যায়, ব্রেস পজিশনে থাকলেই বিমান ক্র্যাশের সময় সবচেয়ে নিরাপদ থাকা যায়। মন নিয়ন্ত্রণকারী কেমিক্যাল! বিমান আকাশে ওড়ার সময় আমরা প্রায়ই সাদা ধোঁয়ার একটা আস্তরণ আকাশে দেখতে পাই। অনেকে মনে করেন সরকারের পক্ষ থেকেই আবহাওয়া এবং নিচে অবস্থানকারী মানুষের মন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কেমিক্যাল ছাড়া হচ্ছে। এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ৭৭ জন গবেষক একটি পরীক্ষা চালান এবং তাদের মধ্যে ৯৮.৭ শতাংশ কোন প্রকারের প্রমাণ খুঁজে পাননি। শুধু বাতাসে বেরিয়ামের উপস্থিতি দেখা গেছে কিন্তু তা মাটিতে এসে পৌঁছায় না। সুতরাং সরকারের পক্ষ থেকে বাতাসে কেমিক্যাল ছাড়ার রটনা নিহায়ত আষাঢ়ে গল্প ছাড়া আর কিছুই নয়। অক্সিজেন মাস্কে মাদকতা তৈরি বিমানে রক্ষিত অক্সিজেন মাস্ক জরুরী প্রয়োজনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নেমে আসে। দুর্ঘটনায় পড়ে বিমানের ভেতরের বাতাসের চাপ কমে গেলে যাত্রীদের সুস্থ এবং জীবিত রাখার জন্য বিমানে অক্সিজেন মাস্কের ব্যবস্থা থাকে। অক্সিজেনের অভাবে যাত্রীরা অচেতন হয়ে পড়তে পারে এমনকি মারাও যেতে পারে। সুতরাং অক্সিজেন মাস্কের অক্সিজেন নেয়ার ফলে মাদকতা তৈরি হওয়ার ব্যাপারটা হেসে উড়িয়ে দেয়ার মতো ছাড়া আর কিছুই নয়। সুরঙ্গে অ্যালিয়েন বাস ১৯৯৫ সালে ডেনভার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপিত হওয়ার পর সেখানকার অত্যাধুনিক ব্যাগেজ সিস্টেমটি সেভাবে কাজ করেনি। সেটার পেছনে অনেক অর্থ খরচ হয়ে যাওয়ার ফলে তার অন্য কোন ব্যবস্থাও পরে আর নেয়া হয়নি। সিস্টেমটি ২০১০ সালে অকেজো হয়ে যায়। গুজব রটে যে, এই বিশাল সুরুঙ্গের মধ্যে এখন অ্যালিয়েনরা বসবাস করে এবং বিমানবন্দরে কর্মরত সবাই বিষয়টি জানে। কিন্তু এই রটনার কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। ঘোড়ার মূর্তি জীবিত হয়ে উঠবে ডেনভার বিমানবন্দরে অবস্থিত ঘোড়ার মূর্তিটি নির্মাণশৈলী একটু ভিন্ন ধাঁচের হওয়ায় তা দেখে অনেকেই নানান ভয়ানক চিন্তা বা সন্দেহ করে বসেন। ভয়ানক এক দানবের মতো দেখতে ঘোড়ার মূর্তিটি ডেনভার বিমানবন্দরের প্রবেশপথে স্থাপিত এবং তা সবসময় ভয়ঙ্কর দৃষ্টিতে মানুষের দিকে তাকিয়ে থাকে। এটা নির্মাণের সময় স্থপতি লুইস জিমেনেজ এর গায়ের ওপর তা পড়ে যায় এবং তিনি মারা যান। উল্লেখ্য, মূর্তিটির ওজন ছিল ৯০০০ পাউন্ড। গুজব আছে, অ্যাপোক্যালিপসের সময় ঘোড়াটি জীবিত রূপ নেবে। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে এ্যালিয়েন বেশ কয়েক শতক ধরে এক ডজনেরও বেশি বিমান, জাহাজ এবং আমেরিকান নৌবাহিনীর একটি দল আটলান্টিক মহাসাগরের একটি স্থানে উধাও হয়ে গেছে। স্থানটি বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নামে পরিচিত যেখানে বারমুডা, পুয়ের্তো রিকো এবং ফ্লোরিডা মিলিত হয়েছে। এটা ধারণা করা স্বাভাবিক যে, সেখানে অতিপ্রাকৃত কিছু আছে। অনেক বিজ্ঞানীর ধারণা সেখানে বাতাসে প্রবল বেগের কারণে এমন দুর্ঘটনা ঘটে। তাছাড়া আরেক দল গবেষকের ধারণা পানির নিচে বিভিন্ন সরকারী অস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর ফলে এমন ঘটনা ঘটে। তবে এ সম্পর্কে সেরকম ভিত্তিযুক্ত কিছু জানা যায়নি আজ পর্যন্ত। যা শোনা যায় সেগুলো মনগড়া খোশগল্প ছাড়া আর কিছুই নয়। পিটবুল আন্দাজ করেছিলেন মালেশিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট-৩৭০, ২৩৯ জন যাত্রী নিয়ে ২০১৪ সালের মার্চে উধাও হয়ে যায়। উদ্ধারকারীরা ভারত মহাসাগরে বিমানটির তিন টুকরা ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পায়। চার বছর ধরে নানান তদন্ত চালিয়ে বিমানটির কোন খোঁজ না পাওয়া গেলেও গুজবের অভাব ঘটেনি। বলা হয়, বিমানের পাইলট রহস্য তৈরি করার জন্য নিজেই বিমান গায়েব করে। তাছাড়া বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী পিটবুল এবং শাকিরার একটি গানে নাকি এই ঘটনার ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল। পিটবুল নাকি আগেই আন্দাজ করেছিলেন যে এমন কিছু একটা হতে চলেছে। টয়লেট মানুষকে টানে! গুজব আছে যে, বিমানে থাকা টয়লেটে বসা অবস্থায় ফ্লাশ করলে তা মানুষকে ভেতরে টেনে নিয়ে যাবে। বিমানে থাকা টয়লেটে বিশেষ এক ভ্যাকুয়াম প্রযুক্তিতে তৈরি এবং তা মলমূত্র শুষে নেয় ঠিকই কিন্তু মানুষ শুষে নেয়ার মতো করে তা বানানো হয়নি। সুতরাং বিমানের টয়লেটের মানুষ টেনে নেয়া একেবারে অসম্ভব। রহস্যময় এ্যামেলিয়া এয়ারহার্ট এ্যামেলিয়া এয়ারহার্ট নামে একজন নারী পাইলট বিমানে করে বিশ্বভ্রমণ করতে গিয়ে উধাও হয়ে যান। তার উধাও হওয়ার পরে নানান গুজব রটনা হতে থাকে। তার নিজের স্বামী তার বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করেন যে, তিনি জাপানে আছেন এবং সেখানে ১৯৩০ সালের একটি ছবিও উন্মোচিত হয়। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে বেশ তোড়জোড় চলছে। কিছু বিশেষজ্ঞ বলেন, তার বিমানের তেল শেষ হওয়ার কারণে বিমানটি ক্র্যাশ হয়ে যায়। কিন্তু তা উদ্ধারসহ অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের কিছুই আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। ষড়যন্ত্রকারী হিলারি ক্লিনটন ১৯৯৯ সালে জন এফ কেনেডি জুনিয়র এক বিমান ক্র্যাশের ঘটনায় মারা যান। সঙ্গে সঙ্গে গুজব রটে যায় যে, তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটন তার মৃত্যুর পরিকল্পনাটি করেছেন। কেননা তারা দুজনই নিউ ইয়র্কের আমেরিকান সিনেটের সিট পাওয়ার আশা ব্যক্ত করেছিলেন। হিলারি অবশ্য সেই ভোটে জিতে যান। কেনেডি জুনিয়রের মৃত্যুর তদন্তে কোনও ষড়যন্ত্রের অবকাশ ছিল না। তিনি রাতে তার ব্যক্তিগত প্লেন নিজেই চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মারা যান। এখানে হিলারি কোনো কল-কাঠিই নাড়েননি। তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট
×