ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ধোনির জাতীয় নায়কে পরিণত হতেও সময় লাগেনি ॥ সম্বরণ

প্রকাশিত: ২১:২১, ১২ মে ২০১৮

ধোনির জাতীয় নায়কে পরিণত হতেও সময় লাগেনি ॥ সম্বরণ

অনলাইন ডেস্ক ॥ উইকেটকিপারের সংজ্ঞাটাই পাল্টে গিয়েছে ক্রিকেটে। যত ছোট হচ্ছে ক্রিকেট, যত কমছে ওভার সংখ্যা, ততই আরও পরিবর্তনের ছোঁয়া। আমাদের সময়ে বলা হত উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। তখন ব্যাটে কে কতটা পারদর্শী, তার চেয়েও বেশি জরুরি ছিল উইকেটকিপিং উৎকর্ষ কার কেমন, সেটা দেখে নেওয়া। বার্ট ওল্ডফিল্ড থেকে শুরু করে রডনি মার্শ, অ্যালান নট থেতে বব টেলর, ওয়াসিম বারি থেকে সৈয়দ কিরমানি— সকলে এই ঘরানার উইকেটকিপারই ছিলেন। যে দিন থেকে সীমিত ওভারের ক্রিকেট শাসন করা শুরু করল, উইকেটকিপিং উৎকর্ষকে ছাপিয়ে তৈরি হতে থাকল ভাল ব্যাটসম্যানের চাহিদা। এখন আইপিএল এবং টি-টোয়েন্টির এই রমরমার মধ্যে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে অন্তত ভাল ব্যাটসম্যান না হলে দলে সুযোগ পাওয়াই কঠিন হয়ে যাবে। ভারতীয় ক্রিকেটে উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান থেকে ব্যাটসম্যান-উইকেটকিপারের বিবর্তনটা বেশিটাই হয়েছে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির আগমনে। ধোনি ব্যাট হাতে একাই অনেক ম্যাচ জিতিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা ধরতেন। আর খুব উত্তেজক ক্রিকেটার হওয়ায় জাতীয় নায়কে পরিণত হতেও সময় লাগেনি। তাই ক্রিকেট কোচিং ক্যাম্পে খুব তাড়াতাড়িই বাচ্চারা ভিড় জমাতে শুরু করে যে, ধোনির মতো ক্রিকেটার হব। যদিও আমার মনে হয়, পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছিল ২০০৩ বিশ্বকাপ থেকে। যখন রাহুল দ্রাবিড়ের মতো অনিয়মিত উইকেটকিপারকে দিয়ে কাজটা করে ফেলার সিদ্ধান্ত হল। সেই প্রথম বোধ হয় সরাসরি বলে দেওয়া হল, উইকেটকিপারের স্টাম্পের পিছনে দস্তানা হাতে খুব একটা কেরামতি না দেখালেও চলবে। স্টাম্পের সামনে ব্যাট হাতে কী করল, সেটাই আসল। বৃহস্পতিবার রাতে দুর্ধর্ষ ইনিংস খেলা ঋষভ পন্থ বা ইডেনে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে জেতানো ঝাড়খণ্ডের তরুণ ঈশান কিসান কিন্তু ধোনি ঘরানার ক্রিকেটার। ধোনির মতোই ওরা ব্যাট হাতে ম্যাচ জেতাতে পারবেন। অন্তত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বড় শট খেলে একার কাঁধে ম্যাচ জিতিয়ে দেওয়া ক্ষমতা ধরেন ওঁরা। ঋষভের দুরন্ত সেঞ্চুরির পরেও যদিও বৃহস্পতিবার ম্যাচ জেতেনি দিল্লি ডেয়ারডেভিলস। কিন্তু ক্রিকেট দুনিয়া দিল্লির হার নিয়ে কথা বলছে না, বরং সকলে মুগ্ধ ঋষভ পন্থের ইনিংস দেখে। দিল্লি তুলেছিল ১৮৭-৫। তার মধ্যে ১২৮ অপরাজিত ঋষভ। ৬৩ বলের ইনিংসে স্ট্রাইক রেট ২০৩.১৭। মেরেছেন ১৫টা চার ও ৭টা ছয়। অর্থাৎ ১০২ রান বাউন্ডারি থেকে। ঋষভকেই ভাবা হচ্ছিল ধোনির যোগ্য উত্তরসূরি। ধোনি ডান হাতি, ঋষভ বাঁ হাতি। কিন্তু ধোনির মতোই দুর্ধর্ষ শট খেলার ক্ষমতা রয়েছে। আমার মনেও কোনও সন্দেহ নেই যে, ভবিষ্যতের এক তারকাকে আমরা সবাই চোখের সামনে বেড়ে উঠতে দেখছি। ঋষভের বয়স মাত্র ২০, এখনও লম্বা পথ পড়ে রয়েছে ওঁর সামনে। মাথা ঠিক রাখতে পারলে খুবই উজ্জ্বল ভবিষ্যঠ অপেক্ষা করছে। এক সময় জাতীয় নির্বাচকের ভূমিকা পালন করেছি বলে এটাও আমার মনে হচ্ছে যে, ঋষভকে ভারতীয় দলে সুযোগ না দিতে পারলে খুবই অন্যায় হবে। দুরন্ত ফর্মে থাকার সময়েই ওঁর আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য সুযোগ দেওয়া দরকার ছিল। দু’দিন আগেই এতগুলো ভারতীয় দল হল। কোনওটাতেই ওঁকে রাখেননি নির্বাচকেরা। অথচ ঋষভ এর আগেও দারুণ সব ইনিংস খেলেছে। ঘরোয়া ক্রিকেটেও দারুণ উত্তেজক সব ইনিংস খেলেছে। সব চেয়ে কম বলে সেঞ্চুরি করেছে রঞ্জি ট্রফিতে। মাঝে ভারতীয় দলে ওঁকে নেওয়া হলেও যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হয়নি। না দেখেই ছেঁটে ফেলা হল। আমি টেস্টে এখনই ঋষভকে খেলানোর পক্ষপাতী নই কারণ ওঁর কিপিং দক্ষতা নিয়ে আমার সংশয় রয়েছে। কিন্তু মাঝেমধ্যে ওয়ান ডে বা টি-টোয়েন্টিতে অবশ্যই সুযোগ দিয়ে দেখা উচিত। আয়ার্ল্যান্ডে এক দিনের ম্যাচে ওঁকে খেলাব না কেন? ভারতের মতো দেশে তারকাদের নিয়ে বন্দনা একটু বেশিই হয়। ধোনির মতো মহাতারকা হলে মুগ্ধতার মাত্রা আরও বেড়ে যাবে, সন্দেহ নেই। ধোনি দারুণ খেলছেনও আইপিএলেও। আগামী বছর জুনে ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপে ধোনিকে যদি এক নম্বর উইকেটকিপার হিসেবে রাখেন নির্বাচকেরা, অবশ্যই আপত্তির কিছু নেই। পাশাপাশি চাইব, ধোনির প্রতি সম্মান দেখিয়েও যেন আমরা ঋষভ বা ইষানের মতো তরুণ প্রতিভাদের অবহেলা না করে ফেলি। বছর খানেক আগে এক জাতীয় নির্বাচক বলেছিলেন, ঘরোয়া ক্রিকেটে এমন কাউকেই নাকি দেখা যাচ্ছে না, যিনি ধোনির উত্তরসূরি হতে পারেন। এমন মন্তব্য নির্বাচকদের করা উচিত নয়। বরং তাঁদের উচিত, অভিজ্ঞতাকে সম্মান করার পাশাপাশি তারুণ্যকেও উৎসাহ দেওয়া। ধোনি অবশ্যই ভারতীয় ক্রিকেটের বটবৃক্ষ, তাঁকে বাঁচাব ঠিকই। কিন্তু ঋষভরাও যে আগামী দিনের ফুল, তাঁদেরও তো ফুটতে দিতে হবে। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×