ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আসন্ন বাজেটে করপোরেট কর হার কমানো হচ্ছে : অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০২:৪১, ১২ মে ২০১৮

আসন্ন বাজেটে করপোরেট কর হার কমানো হচ্ছে  : অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের তরুণ সমাজের ওপর আস্থা রেখে আসন্ন বাজেটে করপোরেট কর হার কমানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্র আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, দেশের বিপুল সংখ্যক তরুণ এখন কর দিতে আগ্রহী হচ্ছেন। প্রতিবছর করনেটে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন তরুণ। শনিবার আগামী অর্থবছরের বাজেট সামনে রেখে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), সমকাল এবং চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের যৌথ উদ্যোগে এক প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় একথা বলেন অর্থমন্ত্রী। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার। প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, তরুণদের ওপর বিশ্বাস রেখে এবার করপোরেট কর হার কমাচ্ছি। কারণ খেয়াল করেছি, প্রচুর তরুণ এখন কর দিতে আগ্রহী হচ্ছেন। তিনি বলেন, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথিউরিটি (বিডা) ‘ওয়ান স্টপ’ সার্ভিস চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যার মাধ্যমে বিনিয়োগ প্রস্তাব জমা দেয়ার ৭ মাসের মধ্যে বিনিয়োগ সহায়তা প্রদান করা যাবে। তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বিষয়টি আগামী বাজেটে ঘোষণার পর পর্যালোচনা করা হবে। অর্থমন্ত্রী দেশের বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সুষম প্রতিযোগিতা নিশ্চিতকরার লক্ষ্যে কমপিটিশন এ্যাক্ট জরুরী বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। ২৬টি সরকারী প্রতিষ্ঠনের শেয়ার পুঁজিবাজারে না আসতে পারার বিষয়টি অত্যন্ত হতাশার বিষয় বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। ওই সভায় অর্থমন্ত্রীর পাশাপাশি আলোচনায় অংশ নেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, এনবিআরের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাসেম খানসহ অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা। অনুষ্ঠানে চারটি বিষয়ের ওপর প্যানেল আলোচনা হয়। সেগুলো হলো-কর ও ভ্যাট, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, শিল্প, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ, আর্থিক খাত ও পুঁজিবাজার সেশন। কর ও ভ্যাট নিয়ে আলোচনায় ঢাকা চেম্বারের পক্ষ থেকে ধাপে ধাপে কর কমানোর প্রস্তাব করা হয়। বর্তমানে কোম্পানির লভ্যাংশের ওপর একাধিক পর্যায়ে কর দিতে হয়। এ নিয়ে বক্তারা বলেন, এ ব্যবস্থার ফলে ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হন। প্রদেয় কর অনেক সময় ফেরত পাওয়া যায় না-অভিযোগ করে তারা কোম্পানির লভ্যাংশের ওপর কর যাতে একবারই দেয়া যায় সেই ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব করেন। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর বলেন, ১৯৯১ সালে আমরা যখন ভ্যাট আইন করি তখন এটি বেশ প্রশংসিত হয়। এরপর ভ্যাট আইন সংস্কার পিছিয়ে গেছে। এ বাস্তবতায় ভ্যাট আইন সংস্কারে গতি সঞ্চার করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আগামী অর্থবছরে বিনিয়োগ ও ব্যবসাবান্ধব একটি বাজেট দেয়ার চেষ্টা করবো। বাজেটে বেসরকারী বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী, অবকাঠামোখাতের উন্নয়নে অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে। তিনি বলেন, সরকার কর্তৃক আমদানীকৃত এলএনজি’র সাথে দেশীয় গ্যাসের সংমিশ্রন করার মাধ্যমে তা জাতীয় গ্রিডে প্রদান করা হবে এবং এলএনজি-এর দাম যেন সহনীয় মাত্রায় থাকে সে বিষয়ে সরকার সচেতন রয়েছে। উদ্বোধনী বক্তৃতায় ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, ঢাকা চেম্বার মনে করে আগামী বাজেটে করনীতিমালার সহজীকরন সহ অন্যান্য নীতিমালার সংষ্কার প্রয়োজন। এছাড়া বিদ্যমান কর হ্রাসকরণ, ট্যাক্স কার্ড প্রদান, ব্যবসায় ব্যয় হ্রাস, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণ, যোগাযোগ অবকাঠামোর আধুনিকায়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। তত্ত্ববধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, একটি দেশের অর্থনীতির ক্রমবিকাশের জন্য বিনিয়োগ বৃদ্ধি, অবকাঠামো, পরিবহন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী এবং সমুদ্রবন্দরসমূহরে উন্নয়ন প্রভৃতি বিষয় সমূহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বাংলাদেশের অবকাঠমোখাতের উন্নয়নে ধীরগতি এবং উন্নয়ন কাজের গুনগতমান নিশ্চিতকরনের উপর জোর দেন। তিনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের কাজ সম্পন্ন হওয়ার অল্পদিনের মধ্যেই তা সংষ্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যার ফলে সরকারের টাকার অপচয়ের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নতি ব্যাহত হচ্ছে। তিনি বিশেষকরে অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে এগুলোর গুনগত মান নিশ্চিতকরের জন্য সরকারের পক্ষ হতে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান জানান।
×