ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফুলের চাষাবাদে নতুন সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০১:২৮, ১৬ মে ২০১৮

ফুলের চাষাবাদে নতুন সম্ভাবনা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ইউএসএআইডি’র এগ্রিকালচার ভ্যালু চেইনস (এভিসি) প্রকল্পের সহযোগিতায় ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত “ফুলের চাষাবাদ খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা” শীর্ষক সেমিনার বুধবার ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। ডিসিসিআই সহ-সভাপতি রিয়াদ হোসেন অনুষ্ঠানে সভাপতি অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই’র সহ-সভাপতি রিয়াদ হোসেন বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফুল ব্যবহারের চাহিদা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বর্তমানে প্রতিবছর সারা পৃথিবীতে ফুলের চাহিদার পারিমাণ প্রায় ৪০ থেকে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ফুলের চাহিদা রয়েছে এবং পৃথিবীর ১৪৫টি দেশ ফুল উৎপাদন ও বাণিজ্যিক চাষাবাদের সাথে জড়িত। তিনি উল্লেখ করেন, ফুলের বৈশ্বিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবদান মাত্র ০.৩ শতাংশ থেকে ০.৫ শতাংশ। তিনি জানান, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশের ফুল রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে উক্ত অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ফুল রপ্তানি হয়েছে। তিনি আরো জানান, বাংলাদেশে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের চাষাবাদ হয় এবং এ খাতের সাথে প্রায় ২ লক্ষ লোক প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত। ডিসিসিআই’র সহ-সভাপতি ফুলের চাষাবাদ সহ এ খাতের সার্বিক উন্নয়নে উদ্যোক্তাদের স্বল্পসুদে ঋণ সুবিধা প্রদান, নতুন নতুন চাষাবাদ পদ্ধতি বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ, কোল্প স্টোরেজ নির্মান, এয়ারকন্ডিশন সুবিধা সম্বলিত পণ্য পরিবহন ব্যবস্থার প্রসার সহ এ খাতকে শিল্প হিসেবে ঘোষণার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান। ওয়ার্কশপে চায়না হটিকালচার বিজনেস সার্ভিসেস-এর সভাপতি হেইডি ওয়ারনেট মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ফুল চাষ কে শিল্প হিসেবে রূপান্তরের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি জানান, এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোতে জলাবায়ু এবং মাটির উৎপাদন গুনাগুন অনুযায়ী বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষাবাদ এ অঞ্চলের দেশগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন, যার মাধ্যমে ফুল চাষাবাদ, প্রক্রিয়াজাতকরন এবং বাজারজাতকরন কার্যক্রম সম্প্রসারিত হবে। তিনি জানান, বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষাবাদের ক্ষেত্রে এশিয়ার দেশসমূহের মধ্যে ভিয়েতনাম উল্লেখজনকহারে অগ্রগতি অর্জন করেছে। তিনি আরো উল্লেখ করেন, বর্তমানে প্রতিবছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং চীন ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ফুল রপ্তানি করে থাকে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে সারা পৃথিবীতে ফুলের বাজরের পরিমাণ হবে প্রায় ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং বাংলাদেশকে এ সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য এখনই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। মূল প্রবন্ধে তিনি বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষাবাদ কে সফল করার জন্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান, স্বল্প সুদে উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন প্রদান এবং নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপের আহবান জানান। সেমিনারের সমাপনী তথা ধন্যবাদ প্রদান বক্তব্যে ডিসিসিআই’র মহাসচিব এএইচএম রেজাউল কবির বলেন, বাংলাদেশে ফুল চাষকে কৃষিখাতের একটি উপ-খাত হিসেবে শিল্পনীতির আওতাভুক্ত করার সুযোগ রযেছে। তিনি আরোও বলেন যে, বাংলাদেশ জলাশয়ে ভাসমান ব্যবস্থায় ফুলের চারা উৎপাদন এবং প্রতিপালন ব্যবস্থা স্থলের বিকল্প সম্ভাবনা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। পশ্চিমাদেশগুলোর গ্রীণ হাউজের ন্যায় বাংলাদেশ এ ব্যবস্থার সুযোগ ব্যয় বিবেচনা করে, লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের বিষয়ে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। ডিসিসিআই পরিচালক আল আমিন, প্রাক্তন সহ-সভাপতি এম আবু হোরায়রাহ, এভিসি প্রকল্পের চীফ অফ পার্টি পল বেনডিক, বাংলাদেশস্থ ইউএসএআইডি’র কনট্রাকটিং অফিসার অনীরুদ্ধ হোম রয় সহ এখাতের সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
×