ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মধুমাস জ্যৈষ্ঠের শুরুতে সুস্বাদু রসালো ফল আগেভাগে চেখে দেখা

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৭ মে ২০১৮

মধুমাস জ্যৈষ্ঠের শুরুতে সুস্বাদু রসালো ফল আগেভাগে চেখে দেখা

মোরসালিন মিজান ॥ মধুমাস জ্যৈষ্ঠ শুরু হয়ে গেল। কেউ জানেন। কেউ হয়ত খেয়ালই করেননি। কিন্তু ঠিকই শুরু হয়ে গেল জ্যৈষ্ঠ। এই মাসের প্রধান অবদান রসালো ফল। সারাবছরই বিভিন্ন ফল পাওয়া যায়। তবে জ্যৈষ্ঠে সবচেয়ে বেশি। সবচেয়ে সুস্বাদু রসালো ফলের সমাবেশ ঘটে এ সময়। প্রতিবারের মতো এবারও মাসের শুরুতে বাজারে আসতে শুরু করেছে নানা জাতের ফল। রাজধানীর অলিগলি ফুটপাথে ঝুড়ি ভর্তি ফল নিয়ে বসেছেন খুচরা বিক্রেতারা। হ্যাঁ, সারাবছরই কমবেশি বসেন তারা। তবে এখন মৌসুম। টাটকা ফল গাছ থেকে নামিয়ে রাজধানীতে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। মধুমাসের ফলগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে বলতে হয় আম, লিচু, জাম, জামরুল, কাঁঠাল, আনারস, তাল, সফেদার কথা। ফলগুলোর যেমন স্বাদ তেমনি আছে পুষ্টিগুণ। রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার বাদামতলী। সারাদেশে উৎপাদিত ফল নদী পথে এখানে আসছে। এখান থেকে চলে যাচ্ছে খুচরা বাজারে। আর কাওরান বাজারের কথা তো বলাই বাহুল্য। বিশাল বিশাল আড়ত এখানে। প্রতিদিন রাতে ট্রাক ভর্তি করে ফল আসছে। খুচরা বিক্রেতারা সেখান থেকে কিনছেন। এভাবে ফল চলে যাচ্ছে পাড়া মহল্লায়। গত কয়েকদিন কাওরান বাজার ঘুরে লিচুটাই বেশি চোখে পড়েছে। বিক্রেতারা জানান, জ্যৈষ্ঠ শুরুর আগেই সোনারগাঁওয়ের লিচু বাজারে প্রবেশ করেছিল। আকারে খুব বড় নয়। একটু টক। তবে স্বাদটা মন্দ লাগে না। আর মৌসুমের প্রথম লিচু বলে কথা, দেদার বিক্রি হচ্ছে। খুচড়া বাজারে একশ’ লিচুর দাম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। কয়েকদিনের মধ্যেই চলে আসবে ময়মনসিংহের লিচু। আর দিনাজপুর ও রাজশাহীর লিচু তো লিচুর রাজা। দারুণ মিষ্টি আর রসালো। এখনও আসেনি। কয়েক দিনের মধ্যে চলে আসবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। সবচেয়ে বড় আকারের মিষ্টি লিচুটি ‘বোম্বাই লিচু’ নামে পরিচিত। এটিও বাজারে ঢোকার অপেক্ষায়। মধুমাসের অন্যতম প্রধান ফল আম। পরিমাণে একটু কম হলেও, ফলটি বাজারে আসতে শুরু করেছে। দোকানিরা ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে আমের ভেতরটা দৃশ্যমান করে রেখেছেন। একে বলা হয় ‘স্যাম্পল’। ‘স্যাম্পল’ দেখে বোঝা যায় নতুন আম। কাওরান বাজারের বিক্রেতা শাহাবুদ্দীন জানান, ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে অল্পস্বল্প করে আম আসছে। এখন বেশি হিমসাগর। ১০ পেটি ১৫ পেটি করে আড়তে ঢুকছে। মূলত সাতক্ষীরা থেকে আসা আম। রাজশাহী থেকেও কিছু আম আসছে বলে জানা যায়। তবে পরিণত পাকা ও সুস্বাধু জাতের আম পেতে আরও অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান দোকানিরা। জাতীয় ফল কাঁঠালও আসতে শুরু করেছে। বেশিরভাগ পার্বত্য এলাকার। রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি বান্দরবানের কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে দাম ১০০ থেকে ৩০০ টাকায়। আলা আমিন নামের এক বিক্রেতা জানান, দশ থেকে পনেরো দিন পর গাজীপুর, ময়মনসিংহ, জয়দেবপুর ও মানিকগঞ্জের কাঁঠাল বাজারে ঢুকবে। তবে এখন যেসব কাঁঠাল পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো আকারে ছোট হলেও সুস্বাদু বলে জানান তিনি। আনারসের জোগানটা ভাল বলেই মনে হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন রাস্তার ধারে ছোট ছোট আনারস কেটে লবণ আর মরিচগুঁড়ো মাখিয়ে পরিবেশন করছেন বিক্রেতারা। সিলেট, মধুপুর ও রাঙ্গামাটি থেকে আসা আনারস সাইজে ছোট। এগুলো জলডুগি নামে পরিচিত। প্রতিটি ১৫ থেকে ৩০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। তালও মধুমাসের ফল। ইতোমধ্যে বাজারে এসেছে। ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে তালের শাঁস বের করে খাওয়াচ্ছেন বিক্রেতারা। প্রায় সর্বত্রই দেখা যাচ্ছে দৃশ্যটি। সাতক্ষীরা, যশোর, ফরিদপুর বরিশাল থেকে আসা তালের শাঁস গরমে বেশ কার্যকর বলে জানা যায়। এদিকে, মধুমাস শুরু হতে না হতেই রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তার ধারে কেমিক্যাল মুক্ত আম বিক্রির বিশাল বিশাল দোকান খোলা হয়েছে। এ সব অস্থায়ী দোকানের সামনে বড় করে লেখা রয়েছেÑ সরাসরি রাজশাহীর বাগান থেকে আসা আমের বাজার।’ হাতিরপুলের মোতালেব প্লাজার নিচে তেমন একটি অস্থায়ী দোকান চালু করা হয়েছে। বিক্রেতার নাম জাকারিয়া। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, আমরা সরাসরি বাগান থেকে আম ও লিচু সংগ্রহ করে বিক্রি করছি। আমাদের ফল ফরমালিন মুক্ত। বাদামতলীর পাইকারি ব্যবসায়ী আমিনুল জানান, আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে জৈষ্ঠ্যের মোটামুটি সব ফল বাজারে চলে আসবে। সে সঙ্গে দামও কমতে শুরু কমবে বলে জানান তিনি। অবশ্য এত লম্বা সময় অপেক্ষা করলে চলবে না। মধুমাসে একটি ফল আসে। অন্যটি শেষ হয়ে যায়। তাছাড়া মৌসুমের প্রথম ফলটি আগেভাগে মুখে পুরার আলাদা তৃপ্তি। তৃপ্তিটুকু গ্রহণ করা চাই। দামের জন্য বাঙালী তাই বসে নেই। বসে যে নেই, বাজার ঘুরে তা বেশ বোঝা গেছে!
×