ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খুসিক নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ১৮ মে ২০১৮

খুসিক নির্বাচন

বিস্তর জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। বিপুল ভোটে সেখানে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক, প্রায় ৭০ হাজার ভোটের ব্যবধানে। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নুরুল ইসলাম মঞ্জুও যথেষ্ট ভোট পেয়েছেন, প্রায় এক লাখ ১০ হাজার। ৬০ শতাংশ ভোট প্রদানের সংবাদটিও ইতিবাচক নিঃসন্দেহে। মোট পাঁচজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে এই দু’জনের মধ্যেই। অন্য তিনজন প্রার্থীর ভোটের হিসাবে আদৌ কোন খবর নেই। এ থেকে যে বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে তা হলো দেশে সরকারী দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে আর কোন রাজনৈতিক দল বা শক্তির অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। এ প্রসঙ্গে কেউ কেউ জামায়াতে ইসলামীর কথা বললেও মূলত দলটি সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে ইতোমধ্যে স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে এবং দলটিকে নিষিদ্ধ করারও দাবি উঠেছে জনসাধারণের পক্ষ থেকে। জামায়াতে ইসলামী কুসিক নির্বাচনে সমর্থন দিয়েছে বিএনপিকে। তাতেও অবশ্য শেষ রক্ষা হয়নি। এতদিনে বিএনপির বোঝা উচিত যে, আগামীতেও জামায়াতে ইসলামীর তথাকথিত ভোট ব্যাংকের ওপর নির্ভর করে জতীয় সংসদ নির্বাচন অথবা অন্য কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা সমীচীন হবে না। দলটির বরং ‘একলা চলরে’ নীতি অবলম্বন করাই শ্রেয়। তাতে তাদের ভোট বাড়বে। আদ্যোপান্ত তরুণ প্রজন্ম, যারা আধুনিক ও জামায়াতবিরোধী, তারা ভোট দেবে ধানের শীষে। দেশে বরাবরের মতোই বিজয়ী দল ও পরাজিত দলের মধ্যে বাহাস হয়েছে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়া নিয়ে। সত্যি বলতে কী তৃতীয় বিশ্বের অন্য অনেক দেশের মতো, যেখানে গণতন্ত্র অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও ভঙ্গুর, সেখানে জয়-পরাজয় সহজে মেনে নেয়ার মন-মানসিকতা দেখা যায় না প্রার্থীদের মধ্যে। যেমন খুসিক নির্বাচন পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ বলছে, নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়েছে। বিএনপি এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে মিথ্যাচার করছে। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সরকার পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে। তবে সবার ওপর নির্বাচন কমিশন বলেছে, নির্বাচন হয়েছে চমৎকার। সর্বমোট ২৮৯টি কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র তিনটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে সামান্য গোলযোগের জন্য। সেখানে পারস্পরিক সংঘাত, সংঘর্ষ ও হতাহতের কোন ঘটনা ঘটেনি। যেটা সম্প্রতি ভয়াবহভাবে ঘটেছে প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনে। সেই হিসাবে বলা যেতেই পারে যে, কুসিক নির্বাচন হয়েছে শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ। অন্তত দুটি কেন্দ্রে ইভিএমের সাহায্যে ভোটগ্রহণ হলেও সেখানে কোন অভিযোগ ওঠেনি। জাল ব্যালট পেপার, জালভোট, সিলমারা ব্যালট পেপার, ব্যালট বক্স ছিনতাই ইত্যাদির অভিযোগ ও উদাহরণ প্রায় নেই বললেই চলে। বিএনপিকে বুঝতে হবে যে, ছবিসহ ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে ভোটারের উপস্থিতিতে জালভোট প্রদানের সুযোগ অনেকাংশে সঙ্কুচিত হয়ে এসেছে। সে অবস্থায় আর যা-ই হোক না কেন জনভিত্তি না থাকলে কেবল জালভোট দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার দিন হয়েছে গত। নবনির্বাচিত মেয়র বিরোধী প্রতিপক্ষসহ সবাইকে নিয়ে একযোগে খুলনা সিটির উন্নয়নের অঙ্গীকার করেছেন ইতোমধ্যে। আগামী মাসের শেষার্ধে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গাজীপুর সিটি নির্বাচন, যেটি স্থগিত হয়েছিল হাইকোর্টে রিটের ভিত্তিতে। সুপ্রীমকোর্টের রায়ের পর এখন আর নির্বাচন হতে বাধা নেই। সেখানেও প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আপাতত নীরবে-নিভৃতে প্রচার-প্রচারণাও চলছে। নির্বাচন কমিশন খুসিক নির্বাচনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে সক্ষম হবে নিশ্চয়ই। রাজনৈতিক দলগুলোও বাদ যাবে না। সবাইকে এ কথা মানতে ও বুঝতে হবে যে, জনসাধারণ কোন নির্বাচনেই সংঘাত, সংঘর্ষ, মারামারি, হানাহানি চায় না। তারা চায় শান্তিপূর্ণ অহিংস, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। গাজীপুর সিটি নির্বাচনও অনুরূপ হবে বলেই প্রত্যাশা। যার প্রতিফলন ঘটবে চলতি বছরের শেষার্ধে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।
×