ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ তরিকুল ইসলাম

শেখ হাসিনা ও গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ১৮ মে ২০১৮

শেখ হাসিনা ও গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা

জাতির পিতাকে হত্যার পর অন্ধকারাচ্ছন্ন বাংলাদেশকে যিনি আলোর পথে ফিরিয়ে এনেছেন গতকাল ছিল তার ৩৭তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৯৮১ সালের ১৭ মে জাতির পিতার হত্যার ৬ বছর পর আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে দেশে ফিরেছিলেন আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনাকে ১৯৮১ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচন করা হয়। সেদিন শেখ হাসিনাকে বরণ করতে লাখ লাখ লোক বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। পরম করুণাময় সেদিন প্রচ- বৃষ্টি দিয়ে বাংলার মাটি থেকে জাতির পিতার রক্ত মুছে দিয়ে সন্তান হিসেবে শেখ হাসিনার কষ্ট কমিয়ে দিয়েছিলেন। সেদিনের বৈরী আবহাওয়া ও জনগণের উপস্থিতি শেখ হাসিনার কষ্ট দূর করে দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সেদিন শপথ নিয়েছিলেনÑ যে দেশকে তাঁর পিতা জীবনের চেয়ে বেশি ভালবাসতেন, যে দেশের জনগণকে তাঁর পিতা পরিবারের সদস্যদের চেয়ে বেশি ভালবাসতেন সে দেশ ও দেশের জনগণের জন্য তিনিও প্রয়োজনে জীবন দিবেন। শেখ হাসিনা সেদিন আরও শপথ করেছিলেন জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে জনগণের পাশে থেকে প্রয়োজনে হাসি মুখে জীবন দিবেন। সেই থেকে শুরু হয় গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা। জাতির পিতাকে হত্যার পর ১৯৭৫ সালের ১১ নবেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া প্রথম ভাষণে মেজর জিয়া বলেছিলেন ‘আমি একজন সৈনিক, আমি রাজনীতিবিদ নই।’ কিন্তু তার মূল উদ্দেশ্য ছিল ক্ষমতা ভোগ করা। যার ফলে মেজর জিয়া ১৯৭৬ সালের ১৯ নবেম্বর পুনরায় চীফ মার্শাল ল’ এ্যাডমিনিস্টেটরের দায়িত্ব নেন। পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল বিচারপতি সায়েমকে জোর করে সরিয়ে দিয়ে নিজেই প্রেসিডেন্ট পদে নিযুক্ত হন। এরপর মেজর জিয়া তার অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধ করার জন্য প্রেসিডেন্সিয়াল রেফারেন্ডাম (গণভোট) প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে একটি রাজনৈতিক দল গঠন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার প্রক্রিয়া গ্রহণ করেন। এভাবে ১৯৮১ সালে মেজর জিয়ার হত্যার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে গণতন্ত্রের চর্চা বন্ধ থাকে। কিন্তু মেজর জিয়ার হত্যার পর তারই দেখানো পথ অনুসরণ করেন জেনারেল এরশাদ। আরেক সেনা শাসকের আবির্ভাব ঘটে। জেনারেল এরশাদ মার্শাল ল’ জারি করে বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতা কেড়ে নেয়। ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর বাংলার জনগণ পুনরায় শক্তি খুঁজে পায়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ধীরে ধীরে গণতন্ত্র ফিরতে শুরু করে। ছিয়ানব্বইয়ের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়যুক্ত হলে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করার মাধ্যমে জাতির পিতার হত্যার পর কার্যত প্রথম কোন রাজনৈতিক দল গণতান্ত্রিকভাবে সরকার গঠন করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালে ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়যুক্ত হয়ে শেখ হাসিনা সরকার গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতন্ত্র সম্পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। আজকে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারে। আজ শেখ হাসিনার জন্য বাংলাদেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দল রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন রয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণ আজ সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন। আজ বাংলাদেশের জনগণ তাদের পছন্দ মত প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে। স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আর একটি অন্যতম সহায়ক হচ্ছে মিডিয়া। আজ বাংলাদেশে প্রায় ৪০টি টিভি চ্যানেল, প্রায় ১০০০ দৈনিক পত্রিকা, প্রায় ৫০০০ অনলাইন পত্রিকা রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন জেলা, উপজেলায় অসংখ্য পত্রিকা রয়েছে। যেগুলো সব সময় জনগণের স্বাধীন মতামত প্রকাশ করে। এখানে কিছু মিডিয়া সবসময় শেখ হাসিনার সমালোচনা করেন যে মিডিয়াগুলোর নিবন্ধন শেখ হাসিনা নিজেই দিয়েছেন। অথচ জিয়ার আমল, এরশাদের আমল, খালেদা জিয়ার আমলে কোন মিডিয়ার নিবন্ধন দেয়া হয়নি। কেবল সরকারী যেগুলো ছিল সেগুলো সবসময় তাদেরই গুণকীর্তন করত। কিন্তু আজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জনগণ আজ শেখ হাসিনার সঙ্গে রয়েছে বলে শেখ হাসিনা সমুদ্র বিজয়, মহাকাশ বিজয়, স্থল বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করেছেন। শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশের জনগণ তার সঙ্গে থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত দেশ। জাতির পিতা বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছেন আর শেখ হাসিনা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। লেখক : ছাত্র নেতা
×