ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শর্ট ফিল্ম ব্রড মেসেজ

প্রকাশিত: ০৮:১৪, ১৮ মে ২০১৮

শর্ট ফিল্ম  ব্রড মেসেজ

তৌফিক অপু ॥ তাঁবুর চারদিকে সুনসান নীরবতা। একটি হ্যাজাক বাতি আলোকিত করে রেখেছে তাঁবুকে। সেই আলোতে কথা হচ্ছে দু’দেশের দুজন সেনা প্রতিনিধির। আলাপচারিতায় বোঝা যায় একজন পাকিস্তানের জেনারেল নিয়াজি এবং অন্যজন ভারতীয় জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব। বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের আগের রাতের দৃশ্যপট নিয়ে নির্মিত একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। যেখানে দেখানো হয়েছে জেনারেল নিয়াজি কে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ৩০ মিনিটের সময় বেঁধে দিয়েছে জ্যাকব। কথার পৃষ্ঠে কথা এবং যুক্তির পৃষ্ঠে যু্িক্ততে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয় নিয়াজি। চমৎকার কনভার্সেশন এবং চিত্রায়নে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বিষয়টি। যা দেখে সত্যিই মনে হয়েছে সেই ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর রাত বুঝি এখন নেমে এসেছে। ভারতীয় মডেল ও অভিনেতা মিলিন্দ সুমন এবং ইয়াশপাল অভিনীত মুক্তি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি ভারত এবং বাংলাদেশে সমানভাবে সমাদৃত হয়েছে। যে কারণে এই স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি আর চলচ্চিত্রে আবদ্ধ থাকেনি হয়ে গেছে ইতিহাসের প্রামাণ্য দলিল। কয়েক মিনিটের একটি চলচ্চিত্রে এত বড় ম্যাসেজ যে দেয়া সম্ভব তা এই স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি দেখলে বোঝা যায়। সমাজের আয়না হিসেবে আমরা চলচ্চিত্রকে জানি। সমাজের চালচিত্র নিয়ে তৈরি চলচ্চিত্রের এ ধারাটি বেশ পুরনো হলেও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের আগমন খুব বেশি দিনের নয়। ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম স্বল্পদৈর্র্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রকাশিত হয়। থমাস এডিসনের কাইনোস্কোপ দিয়ে দেখা হলো শর্টফিল্মগুলো। মূলত এটি অনেকটা বায়োস্কোপের মতোই ছিল। সময় যত এগিয়ে চলে মানুষ ততই ব্যস্ত সময় পার করে । যে কারণে পুরো ৩ ঘণ্টার সিনেমা অনেকের কাছেই বেশ একঘেয়েমি মনে হতে শুরু করে। তখন থেকেই ভাবনাটা যেন আরও জোরালো হতে থাকে। ৩ ঘণ্টার একটি চলচ্চিত্রে যে মেসেজ সমাজকে দেয়া হয়, সেই মেসেজটা কিভাবে শর্টওয়ে তে দর্শকদের কাছে পৌঁছানো যায় তা নিয়ে মনোযোগী হতে থাকে সিনে পরিচালকরা। সে ভাবনারই আবিষ্কার হিসেবে ধরা দেয় শর্ট ফিল্ম। ১৮৯৪ সালে প্রথম শর্টফিল্মটি মুক্তি পেলেও তাতে শব্দ সংযোজনে অবস্থা না থাকাতে খুব বেশি সাড়া জাগাতে পারেনি। পরবর্তীতে ১৯২০ সালে ডি ডব্লিউ গ্রিফিথ এর ‘দ্য বার্থ অফ এ নেশন’ বেশ জনপ্রিয়তা পায়। সে সময় শর্টফিল্মগুলো হলে দেখানো হতো না। কোন চ্যারিটি অনুষ্ঠানের দ্বিতীয়ভাগে শর্টফিল্ম প্রদর্শিত হলো। ৫ থেকে ৭ মিনিটের শর্টফিল্মগুলো সে সময়ে দর্শকদের মনে সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়। একটা সময় দেখা গেল পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দুটোই সমান জনপ্রিয়তা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সেই রেসের ঘোরা আজও চলছে। থেমে নেই স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ। সময়ের, পারিপার্শ্বিক অবস্থার কিংবা সমাজের নানা দিকের চিত্র নিয়ে চিত্রায়িত হচ্ছে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। আন্দোলিত করছে মনকে, নাড়া দিচ্ছে মানুষের বিবেক বোধ কে। বড় ফ্রেমে ছোট গল্প একটা পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে যে প্রস্তুতি একজন পরিচালক নিয়ে থাকে, ঠিক সে ধরনেরই প্রস্তুতি নেয়া হয় স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে। গল্প, চিত্রনাট্য, লাইট ক্যামেরা এ্যাকশন সবই ঠিক আছে শুধু টাইমফ্রেম ছোট। অর্থাৎ অল্প সময়ে প্রদর্শিত হওয়ার জন্য নির্মাণ করা হয়। এ প্রসঙ্গে শর্টফিল্ম নির্মাতা শরিফুল ইসলাম শামীম জানান, শর্টফিল্ম নির্মাণ অনেকটা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার মতো। অল্পসময়ের মধ্য দিয়ে পুরো একটি মেসেজ ডেলিভারি দেয়া। পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমায় সে ঝামেলা পোহাতে হয় না। সময় হাতে নিয়ে গল্প বুননের কাজটি সেরে ফেলা যায়। কিন্তু সত্যিকার অর্থেই যদি কোন শর্টফিল্মকে শর্টফিল্ম হিসেবে মূল্যায়ন করতে হয় তাহলে পরিচালককে সাতটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। এক. গল্পটা সংক্ষিপ্ত থেকে সংক্ষিপ্ত হতে হবে, দুই. মনের ভাবনার সঙ্গে বাস্তবিক সামঞ্জস্যতা মিলাতে হবে, তিন. গল্পকে বাস্তুবে রূপদান করতে হবে। চার. একক চরিত্রগুরো খুঁজে বের করে আনতে হবে, পাঁচ. সময়ের মধ্যে পুরো গল্পটা বলতে হবে, ছয়. দর্শককে পুরোটা সময় গল্পের মোহনীয়তায় আটকে রাখতে হবে এবং সর্বোপরি নির্মাণে দক্ষতার ছাপ থাকতে হবে। তবেই পরিপূর্ণতা পাবে একটা শর্টফিল্মের। মূলত শর্টফিল্মের মেসেজ যেন মানুষের মনে দাগ কাটতে পারে সেটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত। ছোট গল্পে বড় মেসেজ বাবা ও মেয়ে দুজন দুজনের হাত ধরে হেঁটে চলছে মেয়ের স্কুলের দিকে। এমন সময় মেয়ে তার বাবার একটা চিঠি ধরিয়ে দেয়। বাবা চিঠিটা পড়তে থাকে। তাতে মেয়ে বাবার অনেক গুণকীর্তন লিখেছে। বাবা চিঠি পড়ে আর উৎফুল্ল হতে থাকে। আমার বাবা সেরা, আমার বাবা ভীষণ খেয়াল রাখে, আমার বাবা সুপারম্যান এই টাইপের লেখা পড়ে আর বাবাও খুব খুশি হতে থাকে। এরই মধ্যে স্কুলের গেট চলে আসাতে মেয়ে স্কুলে ঢুকে যায়। কিন্তু চিঠির শেষ লাইনে লেখা ছিল, আমার বাবা খুব ভাল কিন্তু মিথ্যাবাদী। সেখানে ইঙ্গিত দিয়ে মেয়ে বুঝিয়ে দেয় তার বাবা তাকে কষ্ট বুঝতে না দিয়ে মেয়েকে বড় হোটেলে খাইয়ে বলে নিজের পেট ভরা বলে খায়নি। বড় অফিসে কাজ করে বলে বাসা থেকে বের হয়ে মুটে মজুরের কাজ করে। আমি চাই না আমাকে ভাল রাখতে বাবা এত কষ্ট করুক। চিঠিটা পড়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরে বাবা। ৫ মিনিটের চায়নিজ এই শর্টফিল্মে ছোট্ট মেয়েটি বুঝিয়ে দেয় মিথ্যে দিয়ে কোন কিছু আড়াল করা ঠিক না। সেটা কখনও সুফল বয়ে আনে না। হলিউডের একটি শর্টফিল্ম বেশ সাড়া জাগিয়েছিল। সেটা হচ্ছে ‘মাই সুজ’। ছোট্ট ছেলেটি ময়লা জামা এবং ছেড়া জুতো পরে সারাদিন পার্কে ঘুরে বেড়ায়। এরই মধ্যে সে দেখা পায় সুন্দর জামা কাপড় পড়া একটি ছেলে পার্কের বেঞ্চে বসে আছে। বারবারই ছেলেটির মনে হতে থাকে ইস আমি যদি ওই ছেলেটির মতো হতে পারতাম। সে মনে মনে খুব প্রার্থনা করতে থাকে, এবং বিধাতা তার কথা শুনে। তখন দুজনকে পাল্টে দেয়া হয়। পরের দৃশ্যেই দেখা যায় সুন্দর জামা জুতো পরা ছেলেটি ময়লা কাপড় এবং ছেঁড়া জুতো পরে আছে ঠিকই কিন্তু বেশ উল্লাসে চারদিকে দৌড়ে বেড়াচ্ছে। আর সুন্দর জামা জুতো পরার রূপ নিয়ে আসা ছেলেটি সুন্দর জামা জুতো পেয়েও মন খারাপ। কারণ ওই ছেলেটির সুন্দর জামা জুতো থাকলেও পায়ে হাঁটার শক্তি ছিল না। হুইল চেয়ার ছিল সম্বল। তখন সুন্দর জামা জুতোও অভিশাপের মতো লাগছিল তার কাছে। বোঝানো হয়েছে নিজের অস্তিত্ব নিয়েই খুশি থাকা উচিত। চমৎকার সব মেসেজ কত অল্পসময়ে বলা হয়ে যায়। এরই নাম শর্টফিল্ম। সমাজের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর কাজটাও সুনিপুণভাবে করে থাকে শর্টফিল্ম। সায়মা ফারজানার পরিচালনায় ‘সাজ’ শর্টফিল্মটি তেমনি ইঙ্গিত বহন করে। দেখানো হয় একজন নিম্নবিত্ত ঘরের তরুণী আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সাজতে থাকে। আয়নার পাশে পাসপোর্ট সাইজের এক ভদ্রলোকের ছবি সাঁটানো। মেয়েটি একবার ছবিটির দিকে তাকায় আবার আনমনে সাজতে শুরু করে। পাশের ঘর থেকে মায়ের ডাকাডাকিও মেয়েটির কানে পৌঁছায় না। এমন সময়ে দ্রুত মা মেয়ের ঘর ঢুকে মেয়ের সাজ দেখে রেগে আগুন। চুলের মুঠি ধরে টানাটানি চলে সঙ্গে চলে বকাবাদ্যি। বারবারই মা বলতে থাকে স্বামী খাইছস তারপরেও তোর সাজ কমে না। সমাজের শৃঙ্খলে বন্দী মেয়ের ইচ্ছে স্বাধীনতার হস্তক্ষেপ নিয়েই এটি তৈরি। তেমনই আরও একটি হচ্ছে ‘কবি স্বামীর মৃত্যুও পর আমার জবানবন্দি’। বিয়ের আগে একটি মেয়ের ভাললাগা মন্দলাগা এবং বিয়ের পরের মূল্যায়ন নিয়েই এই শর্টফিল্মটি। পরিচালক তাসমিয়াহ আফরিন মৌ বেশ চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন বিষয়টি। এতে বৈবাহিক জীবনের টানাপোড়েনের একটি অংশ বেশ ভালভাবেই ফুটে ওঠে। এ ধরনের শর্টফিল্মগুলো সত্যিকার অর্থেই বেশ বড় রকমের মেসেজ ক্যারি করে। খুব অল্প সময়ে বলে ফেলে বড় বড় ঘটনা। হুলিয়া, আগামী ॥ যেখানে প্রতিবাদের চিত্র স্বৈরচারী বিক্ষোভে উত্তাল দেশ। প্রতিবাদের উত্তর যেন গুলি। কোন টু শব্দটি করার যেন উপায় নেই। এমন অবস্থার মধ্য থেকেও ফুঁসে উঠেছিল ছাত্র জনতা। ব্যানার ফেস্টুন ও স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছিল ক্যাম্পাসগুলো। তখন প্রযুক্তির উৎকর্ষতা ছিল না দেশে। সে অবস্থা থেকে নিজেদের একত্রিত করে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়া বেশ কষ্টসাধ্যই ছিল। নিজেদের উজ্জীবিত করতে ছাত্র জনতা গান গাইত, কবিতা লিখত কেউ বা রম্য ছড়া। ঠিক সে সময়ই প্রতিবাদে উন্মাতাল হওয়া কিংবা নিজেদের লক্ষ্যে অবিচল থাকার মাধ্যম হিসেবে ধরা দেয় শর্টফিল্ম হুলিয়া ও আগামী। সৈরাচারী আন্দোলন বেগবান করতে শর্টফিল্মগুলো যেন টনিকের মতো কাজে দিয়েছিল। তখন ইউটিউব কিংবা ফেসবুক এর প্রচলন না থাকাতে মেসেজ সেভাবে দ্রুত না ছড়ালেও অনেকেই শর্টফিল্মের ঘটনাগুলো নিজেদের মতো মঞ্চস্থ করত। যে যেখানে পারত এভাবে মেসেজ ছড়িয়ে দিত। আর এভাবেই বাড়তে থাকল শর্টফিল্মের চাহিদা। একপর্যায়ে এই শর্টফিল্মই যেন যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ধরা দিল। এ সময়ের শর্টফিল্ম বর্তমান সময়েও শর্টফিল্ম তার আপন গতিতে চলছে। আজও ফুটিয়ে তুলছে সমাজের নানা সঙ্গতি ও অসঙ্গতি। বর্তমান সময়ে ইভটিজিং, এডিস সন্ত্রাস, শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও সেক্সুয়াল হ্যারেজমেন্টসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নির্মিত হচ্ছে শর্টফিল্ম। সমাজের প্রতিটি স্তুরে শুদ্ধতা ছড়িয়ে দিতেও শর্টফিল্ম দারুণ কাজ করে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে ইভটিজিং এর উৎপত্তি এবং এর সমাধান যেভাবে শর্টফিল্মগুলোতে তুলে ধরা হয় তা সত্যিকার অর্থেই ইতিবাচক। কিছুদিন আগে নারী নির্যাতন নিয়ে নির্মিত একটি শর্টফিল্ম দেশ এবং দেশের বাইরে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। এখানে দেখানো হয়, একটি মেয়ে বিউটি স্যালুনে যায় চুল ছোট করতে। সেখানে সে তার চুল এতটাই ছোট করতে বলে যেন কেউ চুলের মুঠি ধরতে না পারে। অথচ মেয়েটিকে দেখে বেশ সম্ভ্রান্ত পরিবারের মনে হয়েছে। মেয়েটির অবস্থা ভেবে পার্লারে উপস্থিত অন্যদের চোখে পানি চলে আসে। এতে সমাজের যে চিত্রটি ফুটে ওঠে তা হচ্ছে, শুধু নিম্ন কিংবা অশিক্ষিত পরিবারেই মেয়ে কিংবা স্ত্রীদের ওপর নির্যাতন চলে না, উচ্চবিত্ত অথবা শিক্ষিত পরিবারের মেয়েরাও নির্যাতিত হচ্ছে। লোক লজ্জার ভয়ে হয়ত মুখবুজে সব সহ্য করে যাচ্ছে। বিশে^ সাড়া জাগানো এ শর্টফিল্মটির গল্প গাথা ও বুনন শৈলি সবাইকে মুগ্ধ করেছে, করেছে আপ্লুত। সেই সঙ্গে বৃদ্ধি করেছে সচেতনতা। ফেসবুক ইউটিউবে দিন যতই যাচ্ছে মানুষ ততই ব্যস্ত হয়ে পরছে। সম্প্রতি এক জরিপে জানা গেছে মানুষ এখন এতটা টিভি দেখে না যতনা ফেসবুক, ট্ইুটার, ইউটিউব কিংবা অনলাইন পোর্টালগুলো তে চোখ রাখে। অথচ একটা সময় বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল রেডিও, টিভি কিংবা সিনেমা। আর এখন সবাই ফেসবুক-ইউটিউব নিয়ে ব্যস্ত। সঙ্গত কারণেই শর্টফিল্মগুলো বানিয়ে তা রিলিজ দেয়া হচ্ছে ইউটিউব কিংবা ফেসবুক পেজে। যদিও শর্টফিল্মগুলো কখনই টিভিতে সেভাবে দেখানো হতো না। মূলত শর্টফিল্ম ফেস্টিভ্যাল কিংবা প্রজেক্টরের মাধ্যমেই শর্টফিল্মগুলো দেখানো হতো। এখন যেহেতু সবাই কমবেশি ফেসবুক কিংবা ইউটিউব ব্যবহার করে থাকে, তাই শর্টফিল্মগুলো তৈরির পর পরই ফেসবুক ফ্যান পেজ কিংবা ইউটিউবে ছেড়ে দেয়া হয়। এবং সাড়াও মেলে বেশ ভাল। অনেক সময় সচেতনতামূলক শর্টফিল্মগুলো শুধু ফেসবুক প্রমোশনের জন্যই বানানো হয়। সম্প্রতি চিরকুট ব্যান্ডের গাওয়া একটি গান নিয়ে তৈরি হয় ডকুমেন্টরি শর্টফিল্ম। যেখানে গানে বার বার উচ্চারিত হয় ‘মন সুন্দর যার সেই রাখে দেশ পরিষ্কার’। গানের কথা এবং দৃশ্যায়ন সবার মনে গেঁথে গিয়েছে। প্রসঙ্গ যখন তারেক মাসুদ মেসেজভিত্তিক ফিল্ম কিংবা শর্টফিল্মে যে কজন নির্মাতা দেশের ভেতর এবং বাইরে সমানভাবে সমাদৃত হয়েছেন তাদের মধ্যে তারেক মাসুদ অন্যতম। সেই মুক্তির গান থেকে শুরু করে মাটির ময়না কিংবা রানওয়ে যেটার কথাই বলা হোক না কেন এক কথায় চমৎকার তার নির্মাণ শৈলি। মাটির ময়না তে বেশ সাবলীলভাবে ফুটিয়ে তোলা হয় দেশপ্রেম। তুলে ধরা হয় কুসংস্কার। ঠিক তেমনি রানওয়ে তে ধর্মীয় গোড়ামির নানা দিক চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানো হয়। তুলে ধরা হয় কিভাবে একশ্রেণীর ধর্ম ব্যবসায়ী ধর্মকে বাজেভাবে ব্যবহার করে নিজেদের ফায়দা লুটে। অথচ আদতে কখনই কোন ধর্ম ধ্বংসের কথা বলে না। সে ব্যখ্যাও চমৎকারভাবে দেয়া হয়েছে। সেলুলয়ডের ফিতা এভাবে ময়না পাখির মতো কথা বলতে পারে তা তারেক মাসুদের নির্মিত ফিল্ম কিংবা শর্টফিল্মগুলো দেখলে বোঝা যায়। সময়ের বেড়াজাল ডিঙ্গিয়ে প্রতিবারই বাউন্ডুলেপনার পরিচয় দেয় শর্টফিল্মগুলো। সময় এবং প্রয়োজনের তাগিদেই এর সৃষ্টি। যেখানেই নিপিড়ন কিংবা বঞ্চনা সেখানেই হাতিয়ার হয়ে গর্জে ওঠে শর্টফিল্ম। অন্যদিকে বিবেকর তাড়ন কিংবা সভ্যতার বিকাশে রানার এর মতো ছুটে চলে শর্টফিল্ম। সচেতনতা বৃদ্ধি, অপরাধ থেকে দূরে রাখা অথবা প্রতিবদের কণ্ঠস্বর সব ক্ষেত্রেই যেন সমভাবে বলীয়ান শর্টফিল্ম। ছোট্ট নির্মাণ শৈলিতে বড় বড় সংবাদ মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে আজও নিজের আসনে অধিষ্ঠিত শর্টফিল্ম।
×