ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জুবায়ের বারি

পানি দিয়ে ওয়েল্ডিং

প্রকাশিত: ০৮:৩৪, ১৮ মে ২০১৮

পানি দিয়ে ওয়েল্ডিং

মোটর গ্যারেজে অক্সিএ্যাসিটিলিন গ্যাস দিয়ে ওয়েল্ডিংয়ের সঙ্গে আমরা পরিচিত। কিন্তু পানি থেকে আগুন তৈরি হয়, এমন একটি আজব ওয়েল্ডিং যন্ত্র বাজারে আনতে চলেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি গবেষণা প্রকল্প। মেকানিকরা যেমন ঝালাই করার সময় অক্সিএ্যাসিটিলিন ব্যবহার করে থাকেন, ঠিক সেই রকম। তবে এক্ষেত্রে পানি থেকে আগুন; আবার কাজ শেষ হলে পড়ে থাকে আগুনপোড়া পানি। প্রযুক্তিবিদ ও গবেষক এ্যান্ড্রু এলিস বোঝালেন, ‘এটা একটা ইলেক্ট্রোলাইজার প্রণালী। মেন্স থেকে আসা বিদ্যুত আর পানি মিলে এই প্রণালী। ইলেক্ট্রোলিসিসের ফলে পানি হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন গ্যাসে ভাগ হয়ে যায়। পরে সেগুলো টর্চের মুখে মিশে একটা অগ্নিশিখা তৈরি হয়, যা দিয়ে ঝালাই করা যায় বা কলকারখানার অন্যান্য কাজ করা যায়। কাজেই এটা জল থেকে আগুন তৈরি করা ছাড়া আর কিছু নয়।’ ইলেক্ট্রোলাইজারের মেমব্রেনগুলির দাম বেশি হওয়ায় ও ক্যাটালিস্ট হিসেবে প্ল্যাটিনাম বা অপরাপর বহুমূল্য পদার্থের প্রয়োজন থাকায়, ব্যবহারিক জীবনে ইলেক্ট্রোলাইজারের ব্যবহার সীমিতই থেকেছে। গবেষকরা এই প্রযুক্তিকে আরও সস্তা ও সহজলভ্য করতে চাইছেন। এলিস বললেন, ‘এখানে একদল রসায়নবিদ নতুন ধরনের মেমব্রেন নিয়ে কাজ করছেন, যার ফলে ইলেক্ট্রোলাইজারের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। আমরা ক্যাটালিস্ট নিয়েও অনেক গবেষণা করছি. প্ল্যাটিনামের পরিমাণ কমানোর চেষ্টা করছি ও সেলগুলোতে অপেক্ষাকৃত সস্তা পদার্থ ব্যবহার করার চেষ্টা করছি। এই গবেষণার ফলে ইলেক্ট্রোলাইজার প্রণালীর দাম ব্যাপকভাবে কমেছে।’ আগুনে ভিন্নতা একেবারে টর্চের মুখে গিয়ে হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন আবার মিলে যায়। এর ফলে যে আগুনের শিখার সৃষ্টি হয়, তা সাধারণ অগ্নিশিখার চেয়ে অনেক কম উত্তাপের; ফলে প্রোপেন বা এ্যাসিটিলিন গ্যাসের সঙ্গে অক্সিজেন মিশিয়ে যে অগ্নিশিখা সৃষ্টি হয়, তার চেয়ে এই ‘জল থেকে সৃষ্ট আগুন’ নিয়ে কাজ করা অনেক বেশি আরামের। ওয়েল্ডিং বিশেষজ্ঞ রোরি অলনি বললেন, ‘শিখাটা দেখলে বুঝতে পারবেন, অক্সিএ্যাসিটিলিনের শিখার চেয়ে এর আগুনটা অনেক বেশি নরম। ‘নজল’ ছাড়িয়েই চিকিৎসার স্বার্থে শরীরের মধ্যে ন্যানো গাড়ি প্রচ- গরম কোন স্পট নেই, কাজেই চোখে আলো লাগে অনেক কম। যেমন দেখুন, আমি সাদা কাচের গগলস পরে আছি।’ চাপ থাকে, কাজেই সেগুলো বিপজ্জনক ও ভারী। যে সব জায়গায় গ্যাস লিক হলে বিপদ ঘটতে পারে, সেখানে এ্যাসিটিলিন ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। এ্যালুমিনিয়ামের মতো নরম ধাতু নিয়ে কাজ করার সময় খুব সন্তর্পণে অক্সিএ্যাসিটিলিন ব্যবহার করতে হয়, কেননা আগুনটা খুবই গরম।’ প্রকল্প সমন্বয়কারী স্টিভেন বেন্স জানালেন, ‘উচ্চ তাপ আর উচ্চ গতিবেগ থাকায় যা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে, তা খুব তাড়াতাড়ি গলে যায়, সেটাই হল অক্সিঅ্যাসিটিলিনের সমস্যা। ‘ওয়েলডিং হাইড্রোজেনভিত্তিক অগ্নিশিখা অনেক বেশি নরম, এবং পরিষ্কারও বটে, কেননা পোড়ার সময় শুধু পানি তৈরি হয়। মেটিরিয়াল সায়েন্টিস্ট নিক লাডফোর্ড বললেন, ‘এই নতুন ইউনিটে গ্যাসের দাম পড়বে এ্যাসিটিলিনের বিশ ভাগের এক ভাগ বলে আমাদের ধারণা- কেননা গ্যাস রাখার ব্যবস্থা, বিমা ও পরিবহনের খরচ ইত্যাদি বাদ পড়বে।’ ছোট ও মাঝারি আকারের কলকারখানাগুলো আগামীতে এর সুবিধা পাবে বলে মনে করা হচ্ছে, কেননা সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি আগামী কিছুদিনের মধ্যেই বাজারে আসবে। আপাতত যুক্তরাজ্যের পেশাদার ওয়েল্ডাররা নতুন ইলেক্ট্রোলাইজার প্রণালীর প্রোটোটাইপটি খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে দেখছেন। ওয়েল্ডিং বিশেষজ্ঞ রোরি অলনি বললেন, ‘এই প্রণালীর একটা বিশেষ সুবিধা হলো, টর্চটা সব সময়ে ঠান্ডা থাকে, কেননা শিখাটা টর্চের বাইরে জ্বলে। আমি যখন টর্চটা ব্যবহার করছি, তখন সেটা গরম হয় না। কাজ শেষ হবার পরেও টর্চটা ঠান্ডা থাকে, কাজেই সেটা যে কোন জায়গায় রাখা চলে।’ সূত্র : বিবিসি
×