ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফারিহা হোসেন

শিক্ষায় এগিয়ে নারী

প্রকাশিত: ০৮:৩৯, ১৮ মে ২০১৮

শিক্ষায় এগিয়ে নারী

একটি দেশ, একটি জাতিকে এগিয়ে নিতে এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে আগে নারীকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া জরুরী। এই গুরুত্ব বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দেশে নারী শিক্ষার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে এজন্য বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধিসহ আনুষঙ্গিক সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে নিরলস কাজ করছে। তাঁর সরকারের গত ৯ বছরের নিরন্তর প্রচেষ্টায় সর্বশেষ জরিপে বর্তমানে দেশে নারী শিক্ষার হার ৫০ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এই ধারা ও শিক্ষায় সরকারী সহায়তাসহ আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে একজন নারীও শিক্ষার আলো বঞ্চিত থাকবে না। শিক্ষায় নারীর অগ্রযাত্রা সমাজকে, একটি জাতিকে আলোকিত, উদ্ভাসিত এবং সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এর মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে ছাত্রী বেশি, উচ্চ মাধ্যমিকে সমতা অর্জনের পথে। আর মাদ্রাসা শিক্ষায় ছাত্রীর অংশগ্রহণ ছাত্রের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ এবং ২০০৮ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত শেখ হাসিনা সরকার শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে নানামুখী এবং যুগান্তকারী পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় দেশে ক্রমাগত নারী শিক্ষার হার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে সার্বিকভাবে শিক্ষায় পুরুষের তুলনায় নারীর অংশগ্রহণ বেশি। প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫০ দশমিক ৫৪ শতাংশই নারী। এর মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় প্রায় শতভাগ ছাত্রী অংশ নিচ্ছে। এই দুই স্তরে ছাত্রের তুলনায় ছাত্রী সংখ্যা বেশি। উচ্চ মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষায়ও ছাত্রীর অংশগ্রহণ দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে উচ্চ মাধ্যমিকে ছাত্র-ছাত্রীর হারে দেশ প্রায় সমতা অর্জনের পথে। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) প্রকাশিত শিক্ষার সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি সমীক্ষা প্রকাশ করে। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে প্রাথমিকে মোট ছাত্রছাত্রীর মধ্যে প্রায় ৫১ শতাংশ ছাত্রী। মাধ্যমিকে মোট শিক্ষার্থীর ৫৪ শতাংশের বেশি ছাত্রী। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে নারী-পুরুষের সমতা প্রায় প্রতিষ্ঠার পথে। ওই স্তরে ছাত্রীর অংশগ্রহণের হার ৪৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। বিগত সময়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি), জেএসসি ও জেডিসি এবং এসএসসি পরীক্ষার পরিসংখ্যানেও দেখা গেছে, অংশগ্রহণেই শুধু বেশি নয়, সফলতায়ও নারীর হার বেশি। গত ডিসেম্বরে পিইসি এবং জেএসসি- জেডিসির ফল প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে পিইসিতে মোট অংশগ্রহণকারী ছাত্রীর মধ্যে ৯৫ দশমিক ৪০ শতাংশই উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু মোট অংশগ্রহণকারী ছাত্রের মধ্যে পাস করেছে ৯৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ। সর্বোচ্চ সাফল্যের মানদ- হিসেবে বিবেচিত জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকেও ছাত্রী বেশি। ১ লাখ ১৫ হাজার ৫৪৮ জন ছাত্র জিপিএ-৫ পেয়েছে। সেখানে ছাত্রীদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৬১ জন। অপরদিকে জেএসসি-জেডিসিতে অংশগ্রণহারী মোট ছাত্রের মধ্যে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। অথচ ছাত্রীদের মধ্যে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এসএসসি এবং এইচএসসিতেও সাফল্যে নারীরা এগিয়ে। সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন ধারার আনুষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি প্রফেশনাল, কারিগরি শিক্ষায়ও নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। নারী শিক্ষার অগ্রগতিতে ধর্মকে অনেকেই প্রতিবন্ধক হিসেবে মনে করে থাকেন। কিন্তু মাদ্রাসা শিক্ষায় ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর অংশগ্রহণ ১০ শতাংশ বেশি। বর্তমানে মাদ্রাসার মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৫ শতাংশের বেশি ছাত্রী। উচ্চ শিক্ষায়ও দিন দিন বাড়ছে নারী। এই স্তরে বর্তমানে ৩২ দশমিক ৫৭ শতাংশ ছাত্রী। এছাড়া শিক্ষা পেশায় নারীর হার ৪০ দশমিক ৬১ শতাংশ, কারিগরি ও ভোকেশনালে ২৪ শতাংশ, প্রফেশনাল শিক্ষায় ৪৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং ইংরেজী মাধ্যমে ছাত্রীর হার ৩৮ দশমিক ২৫ শতাংশ। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সভা, সমাবেশ, সেমিনার সিম্পোজিয়ামের আলোচনায়ও দেশে শিক্ষায় নারীর অংশশ্রহণ বা সাফল্য আগের চেয়ে বৃদ্ধির তথ্য উঠে আসছে। একইভাবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এ ধরনের সংবাদ প্রায়শই প্রকাশিত হচ্ছে। জরিপে নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে বই, আর্থিক সহায়তা, প্রাথমিক স্কুলে মিডডে মিল কর্মসূচী চালু, নিয়মিত মনিটরিং, মেধাবী দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে বৃত্তি প্রদানের মতো জনপ্রিয় ও জনকল্যাণমূলক কর্মসূচী চালু থাকার ফলেই দেশে ক্রমাগত নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তাঁর সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সরকারী আমলা, জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকারসহ সংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন সভা সমাবেশে, নীতি নির্ধারণী ফোরামের বৈঠকে বলে থাকেন, ‘শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়লে ভবিষ্যত প্রজš§ শিক্ষিত হবে। একই সঙ্গে শিক্ষায় বিনিয়োগ সর্বৎকৃষ্ট বিনিয়োগ।’ শিক্ষাখাতে এক টাকা বিনিয়োগ করলে পরবর্তীতে হাজার টাকার লাভ পাওয়া যায়...।’ এখন নারী শিক্ষার হার যেভাবে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি এই প্রবৃদ্ধিকে টেকসই করতে প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। একই সঙ্গে সরকারী-বেসরকারী ও ব্যক্তি পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত মানসম্মত, স্বল্প খরচে শিক্ষার পথ সুগম করা। তবেই পুরুষের পাশাপাশি নারীরা সমান হারে শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণ, সমৃদ্ধি, উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম হবে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন এই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট মহলের।
×